× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খেলাপি ঋণ আদায়

ব্যাংকগুলোকে উপযুক্ত পথ খুঁজতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ১৫:৫৬ পিএম

ব্যাংকগুলোকে উপযুক্ত পথ খুঁজতে হবে

অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংক বা আর্থিক খাত। আর এ খাতের সুস্থ বিকাশই অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনে। অর্থনীতির ভাষায়, যে দেশের ব্যাংক খাত যত বেশি নিয়মতান্ত্রিক সে দেশ তত সমৃদ্ধ। এ মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ। যা দেশের জন্য বড় বিষফোড়া। মূলত খেলাপি ঋণের কারণেই ব্যাংকে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে, যা অনেক দিন ধরে চলমান। ১৫ জুন  প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে সেই চিত্রই উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাতের নানামুখী সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। দেশের ব্যাংক খাত আবারও নতুন এক বিপজ্জনক রেকর্ডে পৌঁছেছে। 

গত মার্চে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর তিন মাস আগে গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছিল তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়। যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন মাসের ব্যবধানে বা ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চে খেলাপি ঋণ বেড়েছে পৌনে এক লাখ কোটি টাকা। আর এক বছরের হিসাবে বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বিষয়টিকে ‘ব্যাংক খাতের গভীর অসুস্থতার প্রতিফলন’ বলে উল্লেখ করছেন। তারা বলছেন, গত সরকারের আমলে ঋণের নামে ব্যাংক লুট ও লুটের টাকা পাচারের কারণে সেগুলো এখন খেলাপি। জামানত না থাকায় কিছু ঋণ সরাসরি কুঋণে পরিণত হয়েছে। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। 

১৬ জুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘পুরনো অনিয়মের জেরে খেলাপি ঋণে রেকর্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এর বিস্তারিত চিত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে খেলাপি ঋণ মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি। ব্যাংকাররা বলছেন, গুটিকয়েক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে গিয়ে গোটা ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করা হয়েছে। এতে নতুন ঋণ বিতরণে গতি হ্রাস পাচ্ছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থায়ন থেকে এবং সাধারণ আমানতকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট বাড়ছে।

আমরা মনে করি, খেলাপি ঋণ থেকে মুক্তি বা এর প্রকোপ কমিয়ে আনার মধ্যেই আর্থিক খাতের সমস্যা সমাধানের উপায়। কারণ খেলাপি ঋণ ক্যানসারের মতো। যত দ্রুত সম্ভব এর বিস্তার রোধ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে সঠিক এবং উপযুক্ত পথ খুঁজতে হবে। যেহেতু খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে দুরারোগ্য ব্যাধির রূপ নিয়েছে, সেহেতু এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ের পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার পদক্ষেপও নিতে হবে। ঋণখেলাপিরা কে কোথায় আছেন, ঋণের বিপরীতে তারা যে সম্পদ বন্ধক রেখেছেন, সেই সম্পদ খুঁজে বের করা দরকার। প্রয়োজনে বিশেষ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। তালিকা করে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব ঋণখেলাপি ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তাদের দেশে ফেরত এনে অর্থ উদ্ধার করার দায়িত্ব সরকারেরই। যেহেতু বর্তমানে খেলাপি ঋণ অত্যধিক বেড়েছে তাই আগামী তিন বছর খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য একটি বিশেষ কোর্ট পরিচালনা করা যেতে পারে। দ্রুততার সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

খেলাপি ঋণ আদায়কারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। খেলাপি ঋণ গ্রাহক এবং তার পরিবার যেন নতুন কোনো সম্পদ আহরণ করতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ, পানিসহ সকল প্রকার ইউটিলিটি সুবিধা বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। খেলাপি ঋণগ্রহীতা, তার প্রতিষ্ঠান এবং তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দসহ যাবতীয় সহায়-সম্পত্তি ব্যাংকের অনুকূলে হস্তান্তর করা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সম্পদ বিক্রি করে পুরো ঋণের অর্থ আদায় করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অন্যান্য দেশী-বিদেশী স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে তা বিক্রি করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রচলিত আইনে সেটা সম্ভব না হলে আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে।

অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, সদুপদেশ দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায় করা যায় না। প্রবাদ আছে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। ঋণখেলাপিদের সদুপদেশ দিয়ে লাভ নেই। এ কথা সত্য, অন্তর্বর্তী সরকারেরর বেশকিছু পদক্ষেপে ব্যাংক খাত থেকে লুটপাট ও অর্থ পাচারের গতি কমেছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রেও সরকারের সক্রিয় ও আন্তরিক সহযোগিতা সমাধানের পথ দেখাতে পারে। এজন্য সরকারকে আরও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। দেশের অর্থনীতির প্রয়োজনে এখনই এটি করা দরকার। আমরা মনে করি, যেহেতু খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে দুরারোগ্য ব্যাধির রূপ নিয়েছে, সেহেতু এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা