× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাস্থ্য

সব হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দিন

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ১৫:৫২ পিএম

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

বর্তমান যুগে স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্টের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। গত চার দশকে ওষুধ শিল্পের যে অভাবনীয় বিকাশ ঘটেছে, তার পেছনে মূল ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন আমাদের ফার্মাসিস্টরা। 

১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ফার্মেসি বিভাগের গোড়াপত্তন হয়। তারপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ খোলা হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ খোলার কারণে এখন স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনীয় অবদান রাখার জন্য পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে কয়টি ওষুধ কোম্পানি ছিল, সেই ওষুধ কোম্পানিগুলোতে মূলত কাজ করতেন বায়োকেমিস্ট, কেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং ডাক্তাররা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়া আসা ফার্মাসিস্টরা যখন ওষুধ কোম্পানিগুলোতে ঢুকতে শুরু করেন, তখনই সূচনা হয় ওষুধ কোম্পানিগুলোতে এক অনন্যসাধারণ বিপ্লব। ফার্মাসিস্টরা তাদের পেশাগত দক্ষতা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ওষুধ শিল্পের চেহারা পাল্টে দেন। আজ বাংলাদেশের ওষুধের বাজার স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং মোট চাহিদার ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ ওষুধ আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে। বাংলাদেশের ওষুধের বাজার বর্তমানে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ১৫০টি দেশে গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ রপ্তানি করছে। ওষুধ শিল্পের এই অভাবনীয় বিকাশের পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মূলত কাজ করছেন আমাদের ফার্মাসিস্টরা। 

শুধু ওষুধ শিল্পে ফার্মাসিস্টদের অবদানের কথা বললে বক্তব্যটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ওষুধ শিল্প ছাড়াও আমাদের ফার্মাসিস্টরা শিক্ষকতা, ঔষধ প্রশাসন, ফার্মেসি কাউন্সিল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্যাডার সার্ভিস, ফরেন সার্ভিস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পেশায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের ফার্মাসিস্টরা বিভিন্ন পেশায় কয়েক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

ফার্মাসিস্টরা হলেন ওষুধ বিশেষজ্ঞ। আর চিকিৎসকরা হলেন রোগ বিশেষজ্ঞ। ফার্মাসিস্টদের কাজ যেমন চিকিৎসক দিয়ে সম্ভব নয়, তেমনি ব্যতিক্রম ছাড়া চিকিৎসকদের কাজ ফার্মাসিস্ট দিয়ে সম্ভব নয়।

আমাদের নীতিনির্ধারকরা বুঝুক বা না বুঝুক, সারা বিশ্বের উন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশের স্বাস্থ্যকাঠামোয় ফার্মাসিস্টরা সরাসরি যুক্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকাঠামোতে ফার্মাসিস্টদের যথোপযুক্তভাবে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। অথচ উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদের কোনো বিকল্প নেই।সবাই হয়তো জানে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি ২৫ শয্যার হাসপাতালের জন্য একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে? করা হয়নি। কারণ বাংলাদেশে চিকিৎসকরাই নীতিনির্ধারক, চিকিৎসকরা কর্মবিধায়ক, চিকিৎসকরাই ওষুধ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকরাই ফার্মাসিস্ট। তাই স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্টদের নিয়োগের প্রসঙ্গ এলেই আমাদের নীতিনির্ধারকদের অনীহা ও বিরোধিতার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া চাপা পড়ে যায়। তাদের ধারণা, ফার্মাসিস্টদের কাজ ওষুধ শিল্পে, কমিউনিটি ফার্মেসিতে, স্বাস্থ্যসেবায় নয়, হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে নয়। হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা নিয়ে তারা হয়তো এখনও পুরোপুরি অবহিত নন।

আমাদের কথা অল্প ও সোজা। স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসক, নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্টের পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক হতে হবে। স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ করে হাসপাতালে রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়ছে কি না তা দেখা, সঠিক ওষুধ ডিস্পেন্স করা, ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা, অপব্যবহার বন্ধ করা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মিথস্ক্রিয়া নজরদারি ও তার প্রতিরোধে তাতক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ একজন ফার্মাসিস্ট ছাড়া আর কার দ্বারা সম্ভব নীতিনির্ধারকেরা বলতে পারেন? এ ছাড়া হাসপাতাল ফার্মেসির ওষুধ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকার কথা ফার্মাসিস্টদের হাতে। কিন্তু এতদিনেও তা হয়ে ওঠেনি। কারণ এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে ফার্মাসিস্টের ভূমিকা বুঝতে আমাদের নীতিনির্ধারকদের অনেক সময় লেগে গেছে।

নিউইয়র্কের কয়েকটি হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখার আমার সুযোগ হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে ফার্মাসিস্টদের কার্যক্রম, তাদের কাজের পরিধি, তাদের গুরুত্ব, হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবায় তাদের অবদান ও মূল্যায়ন দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। একজন হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট প্রেসক্রিপশনে কোনো ভুল ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হলে, কোনো বিশেষ রোগীর জন্য কোনো ওষুধ যুক্তিযুক্ত না হলে, কোনো রোগীর ক্ষেত্রে কোনো ওষুধের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা মিথষ্ক্রিয়া সৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে, ফার্মাসিস্ট প্রেসক্রিপশন দাতা চিকিৎসককে তা অবহিত করবেন এবং ওষুধ বা মাত্রা পরিবর্তন করে দিতে পরামর্শ দেবেন। চিকিৎসক যদি ফার্মাসিস্টের পরামর্শ যুক্তিসঙ্গত মনে করেন, তাহলে ফার্মাসিস্টের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ বা ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করে দিতে পারেন অথবা চিকিৎসক তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেন। চিকিৎসকের ভুলের কারণে যদি রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মারা যায়, তবে চিকিৎসককে আইন মোতাবেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আমি অতীতে কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছি।

এ প্রসঙ্গে একটি মর্মান্তিক ঘটনার কথা বলি। ডিপ ভিন থ্রোম্বোসিসের এক রোগীকে অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ওয়ারফেরিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সাসিন প্রদান করার পর রোগী মারা যায়। চিকিৎসক ওয়ারফেরিন ও লেভোফ্লক্সাসিনের মিথস্ক্রিয়ার কথা হয়তো জানতেন না বা জানলেও হয়তো ভুল করেছেন। হাসপাতালে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট থাকলে হয়তো এই মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যেত। কারণ ওষুধের মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে একজন অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট ওয়াকিবহাল থাকার কথা। একজন হাসপাতাল ফার্মাসিস্টের সাধারণত রোগীর এ ধরনের জরুরি অবস্থায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোগীর জীবন বাঁচানোর অভিজ্ঞতাও থাকতে হয়। 

আরও একটি ঘটনা বলি। হাতের প্রচণ্ড ব্যথার জন্য এক চিকিৎসক এক রোগীকে ন্যাপ্রোক্সেন প্রদান করেন। নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ড্রাগ ন্যাপ্রোক্সেন সব রোগী গ্রহণ করতে পারে না। রোগী ন্যাপ্রোক্সেন গ্রহণ করার ১০ মিনিটের মধ্যে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় পড়ে। তার চোখ-মুখ ফুলে যায় এবং মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আমি একজন ফার্মাসিস্ট এবং ভাগ্যক্রমে কাছাকাছি ছিলাম বলে আমার পরামর্শ চাওয়া হয়। আমি রোগীর অবস্থা দেখে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পরামর্শ দিই। কাছেই হাসপাতাল ছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পর রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সময়মতো হাসপাতালে না নেওয়া হলে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে উঠতে পারত, এমনকি মারাও যেতে পারত।

অনেক মানুষ ন্যাপ্রোক্সেন গ্রহণ করলে কোনো সমস্যা হয় না। সুতরাং ন্যাপ্রোক্সেন নেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন। এই দুটো ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, হাসপাতালে একজন ফার্মাসিস্টের ভূমিকা বা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ কত প্রয়োজন।

বাংলাদেশে ৬৫৪টি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৫১ হাজার ৩১৬টি। এই হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্ট ঠিকই আছে, নেই শুধু গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। উন্নত বিশ্বের হাসপাতালগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, হাসপাতাল ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গে সমান তালে গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার পরও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে ফার্মাসিস্টের কার্যক্রম কেন শুরু হলো না, দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে সেটা আমাদের প্রশ্ন।

গত ২ মে গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় গণ্যমান্য বক্তারা বলেন, চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াও বহু বছর ধরে ফার্মাসিস্ট না থাকার কারণে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ফার্মাসিস্ট না থাকার কারণে হাসপাতালে অপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার মূল কারণ হিসেবে তারা রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও অবহেলাকে দায়ী করেন। তারা আরও মনে করেন, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ প্রদান, প্রেসক্রিপশনে ভুলভ্রান্তি অবলোকন, ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও মিথষ্ক্রিয়া প্রতিরোধ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রোগীকে পর্যাপ্ত পরামর্শ দানসহ অন্যান্য জরুরি কার্যক্রম একজন ফার্মাসিস্ট ছাড়া সম্ভব নয়। সুতরাং হাসপাতালগলোতে জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফার্মাসিস্ট নিয়োগদানের জন্য নীতিনির্ধারকদের প্রতি তারা আহ্বান জানান। 

কমিউনিটি ফার্মেসির করুণ দশার কথা আর কী বলব। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মডেল ফার্মেসির লাইসেন্স প্রদান করেছে। কেমন চলছে এসব মডেল ফার্মেসি? ওষুধ বিক্রি এবং পেশেন্ট কাউন্সেলিং বা রোগীকে সঠিক পরামর্শ প্রদান করার জন্য এসব মডেল ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। সূত্রমতে প্রায় ৯৫ শতাংশ মডেল ফার্মেসিতে কাগজে কলমেই শুধু ফার্মাসিস্টের উপস্থিতি আছে, বাস্তবে কেউ নেই। ফার্মাসিস্ট ছাড়া এসব মডেল ফার্মেসি কীভাবে চলছে, তার কৈফিয়ত কে দেবে! উন্নত বিশ্বে রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট ছাড়া কোনো ফার্মেসির লাইসেন্স প্রদান করা হয় না।

আমাদের দেশে শহরে গ্রামে-গঞ্জে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ বৈধ-অবৈধ ড্রাগস্টোর চলছে কোনো প্রকার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও ফার্মাসিস্ট না থাকার কারণে দেশের বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জের বেশিরভাগ ড্রাগস্টোরে নকল, ভেজাল, ক্ষতিকর ও নিম্নমানের ওষুধ ছাড়াও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। আর এসব ওষুধ নামের জঞ্জাল খেয়ে মানুষ সুস্থ হচ্ছে না, বরং অসুস্থ হচ্ছে, নতুবা মারা যাচ্ছে। দেশে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে কমিউনিটি ফার্মেসির অনিয়ম, দুর্নীতি, নকল, ভেজাল, ক্ষতিকর, নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের দৌরাত্ম্য দমন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যাপ্ত গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সেক্টরে ফার্মাসিস্ট নিয়োগদান এখন আর কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো সরকারের সদিচ্ছা ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব।

আমরা মনে করি, ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক হারে ফার্মাসিস্টদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। আমরা মনে করি, সরকার চাইলে অবহেলা পরিহার করে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন সেক্টরে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সব কয়টি হাসপাতালে বিধি মোতাবেক ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রদানপূর্বক জনসেবায় বিশাল অবদান রাখতে পারে। ফার্মাসিস্টদের অনবদ্য অবদানের কারণে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প প্রশংসনীয়ভাবে এগিয়ে গেছে।

পর্যাপ্ত ফার্মাসিস্ট নিয়োগ না দেওয়ার কারণে আমাদের স্বাস্থ্য খাত ওষুধ শিল্পের মতো তেমন উন্নতি ও অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। আমরা আশা করি, ফার্মাসিস্টদের যথাযথ মূল্যায়নপূর্বক স্বাস্থ্যসেবায় সম্পৃক্ত করা গেলে দেশ ও জাতি ভীষণ উপকৃত হবে।

শেষ করার আগে একটি সুসংবাদ দিয়ে এই লেখা শেষ করতে চাই। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে সরকারি ফার্মেসি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এসব ফার্মেসি থেকে গরিব রোগীরা এক-তৃতীয়াংশ দামে ২৫০টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ কিনতে পারবে। ইতোমধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। গুণগত মানসম্পন্ন অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ এক-তৃতীয়াংশ মূল্যে কিনতে পারলে দরিদ্র রোগীরা আর্থিকভাবে ভীষণ উপকৃত হবে। এসব সরকারি ফার্মেসি চালাতে হলে প্রায় ৭০০ গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন হবে। সরকারি ফার্মেসিগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ রোগীকে সঠিক পরামর্শ প্রদান করার ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টের কোনো বিকল্প নেই। বলা হয়েছে, ওষুধ প্রাপ্তির জন্য প্রত্যেক রোগীর ডিজিটাল হেলথ আইডি থাকতে হবে। সরকারের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

  • অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি 
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা