× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভুল চিকিৎসা

গাফিলতি আর নয়, এখনই নজর দিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ১৬:১৮ পিএম

গাফিলতি আর নয়, এখনই নজর দিন

ভুল চিকিৎসা কিংবা চিকিৎসায় গাফিলতির খবর হরহামেশাই শোনা যায়। বিশেষ করে রোগ নির্ণয়ে ভুল, ভুল ওষুধ সেবন, ক্ষতিকর ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, নিম্নমানের ওষুধ, ভুল অস্ত্রোপচার এবং প্রতারকের খপ্পরে পড়ার ঘটনাগুলো মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনায় কেউ পঙ্গুত্ববরণ করছেন, কেউ মারা যাচ্ছেন, কেউবা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাচ্ছেন। অথচ চিকিৎসাসেবা এমন একটা বিষয়, যেখানে সামান্যতম গাফিলতির কারণে মানুষের জীবন চলে যেতে পারে। বহু রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা দেওয়ার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তার কোনো সুযোগ নেই। রবিবার কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ঘটেছে তেমনি এক ঘটনা। সেখানে মায়ের ইনজেকশন নবজাতকের শরীরে পুশ করার অভিযোগ উঠেছে। পরে দ্রুত নবজাতককে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকদের আন্তরিক চেষ্টায় শিশুটি শঙ্কামুক্ত হয়। আসলে যেকোনো রোগ থেকে আরোগ্য লাভের উপায় নির্ভুল চিকিৎসা।

১২ জুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘ভুল করে মায়ের ইনজেকশন নবজাতককে পুশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, হোসেনপুরের ওই প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে একটি মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পরই মাকে একটি ‘এনটি-ডি’ ইনজেকশন দেওয়ার কথা ছিল। ক্লিনিকের নার্স ভুল করে ইনজেকশনটি মায়ের পরিবর্তে নবজাতকের শরীরে পুশ করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্বজনরা চেঁচামেচি করতে থাকলে তাকে তৎক্ষণাৎ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জানা গেছে, নবজাতকের জীবন রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, আপাতদৃষ্টে নবজাতকটি বিপদমুক্ত। তবে ঘটনাটি যেকোনো চিকিৎসাপ্রার্থীর জন্য উদ্বেগজনক।

এ ঘটনায় আবারও দেশের চিকিৎসাসেবায় অব্যবস্থাপনার চিত্রই ফুটে উঠেছে। প্রমাণ করল, একজন অদক্ষ ও অসাধু চিকিৎসক রোগীর জীবনকে কতটা ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে, শহরের অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নিবন্ধিত কিংবা অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মূল উদ্দেশ্যই চিকিৎসা বাণিজ্য। এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ডাক্তারদের বেশিরভাগই মালিক পক্ষের লোক। প্রায়শই এমন দেখা যায় যে, একশ্রেণির ডাক্তার অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং অতিরিক্ত ওষুধ লিখে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষা করেন। বিনিময়ে ডাক্তার নিজেও লাভবান হন। কিন্তু রোগীরা হন ক্ষতিগ্রস্ত।

আমরা মনে করি, সেবার নামে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের মান বা সক্ষমতা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করা জরুরি। অন্যথায় ভুল চিকিৎসায় মানুষের ভোগান্তি কখনই থামবে না। আজকাল বহু জায়গায় প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সব ধরনের ওষুধ বিক্রি হয়। লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ বিক্রি ও চিকিৎসা প্রদান বন্ধ করা জরুরি। এ ছাড়া ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, টেস্টের মান নিয়ন্ত্রণ, আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ চিকিৎসক এবং টেকনিশিয়ান তৈরি ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ তাদের নিয়োগ এবং উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশে চিকিৎসার খরচ যে হারে বেড়েছে চিকিৎসাসেবার মান সে হারে বাড়েনি। তাই চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সাধারণ মানুষও সঠিক চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়। এতে একদিকে দেশের চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে; তেমনি বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ দেশের চিকিৎসাসেবায় সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে হয়তো এই চিত্র উল্টো হতে পারত।

এ কথা সত্য যে, দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রতি বছরই সরকার বিরাট অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ যাতে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা পেতে পারেন, তার জন্য রয়েছে নানা পদক্ষেপও। অস্বীকার করার উপায় নেই, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচির সফলতায় সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। বিগত করোনা মহামারির সময় ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অনেক দেশের তুলনায় সন্তোষজনক। এত সবের পরও দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। সব অভিযোগ ভিত্তিহীনÑ এমনটা বলারও সুযোগ কম। দেশের বহু সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নিয়মিত ডাক্তার বসেন না কিংবা পর্যাপ্ত সময় দেন না। সরকারি হাসপাতালে রোগীরা তাদের অনেক প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন না। এক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের টাকায় কেনা যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে থাকার অভিযোগও শোনা যায়। কোনো কোনো হাসপাতালে সরকারি বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ওষুধও পাওয়া যায় না। আর এসব অনিয়মের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু ব্যক্তির সম্পৃক্ততার বিষয়টিও স্পষ্ট।

আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোকে একটি নীতিমালার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিং করা জরুরি। দেখা যায়, ভুল চিকিৎসায় কিংবা চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যু বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলেই কেবল স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ নড়েচড়ে বসে, এটা ঠিক নয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, এ পদক্ষেপগুলো আগে নেওয়া হয়নি কেন? তাহলে কি ভুল চিকিৎসায় শাস্তির বিধান করার জন্য সব সময় আমাদের এমন উদ্বেগজনক ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে? হোসেনপুরের প্রাইভেট ক্লিনিকে নবজাতকের ওপর ‘ভুল করে’ যে ঘটনা ঘটল তার পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। স্বাস্থ্যসেবায় গাফিলতি আর নয়, এখনই নজর দিন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা