× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুর্যোগ প্রতিরোধে সক্ষমতা বাড়াতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ১৬:০০ পিএম

দুর্যোগ প্রতিরোধে সক্ষমতা বাড়াতে হবে

যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকাকে বিপন্ন করে তোলে। শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, অনেক সময় মানবসৃষ্ট দুর্যোগও বাধা হয়ে দাঁড়ায় মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্নে। গত তিন দিনে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর বেশিরভাগই প্লাবিত হয়েছে। বৈরী এই আবহাওয়ায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, রংপুর, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, বহু ঘরবাড়ি হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। উপকূলের কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে চরম বিপর্যস্ত করেছে জনজীবন। সেন্টমার্টিন, হাতিয়া ও সন্দ্বীপ কার্যত ছিল বিচ্ছিন্ন। ঝড়বৃষ্টির প্রভাবে সড়ক ও রেলপথ ডুবে গেছে। কাপ্তাই হ্রদে নৌ-চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। 

অন্যদিকে চট্টগ্রামসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে পাহাড়ের আশপাশে বসবাস করা মানুষগুলো। টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বসবাসকারীদের সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বান্দরবানে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধস এখন রীতিমতো আতঙ্কের নাম। এই আশঙ্কা থেকে বাদ পড়েনি পার্বত্য জেলা রাঙামাটিও। পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে পড়েছে আরেক পার্বত্য খাগড়াছড়িও। কোনো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সিভিল সার্জন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিওদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ‘দুর্যোগকালীন জরুরি সেবা কমিটি’। ৩১ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। তবে সরকারের আগাম সতর্কতা ও মানুষের সচেতনতায় ব্যাপক কোনো ক্ষতির সন্মুখীন হতে হয়নি দেশবাসীকে। 

ভূ-তাত্ত্বিক কারণেই বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। আর বিপন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের কাছে মানুষ এখনও অসহায়। বলা হয়, জীববৈচিত্র্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য। এই ভারসাম্য রক্ষার জন্য যেখানে দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন সেখানে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ অনেক কম। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, পশুপাখি হত্যার মতো জীববৈচিত্র্য বিনাশী কাজকর্ম আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৃক্ষ নিধনসহ অন্যান্য কারণে বাংলাদেশে জলবায়ুর আমূল পরিবর্তন, বন্যা ও খরার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। উত্তাপ বৃদ্ধির ফলে হিমবাহের গলনে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি পলি জমে সমুদ্রের তলদেশ ভরাট হয়ে যাবে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মোট আয়তনের ১৫.৮ শতাংশ স্থলভাগ পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করতে অধিকতর বনাঞ্চল সৃষ্টি বিশেষ করে উপকূলীয় বনায়নের কোনো বিকল্প নেই। 

পরিবেশবিদ বলছেন, উপকূলীয় বনভূমি রক্ষাসহ উপকূলীয় এলাকায় নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টি জোরদার করা হলে তা ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশকে রক্ষা করা সম্ভব। পরিসংখ্যান বলছে ১৯৭০, ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানান সময়ে সিডর, আইলা, ফণী, আম্ফান ও ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলবাসী। দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে বেড়িবাঁধই উপকূলের একমাত্র রক্ষাকবচ। অথচ ষাটের দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধ জোড়াতালি দিয়ে এতদিন চলে এলেও বর্তমান পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে উপকূলের সুরক্ষা বাঁধগুলো কার্যত দুর্বল এবং নিচু হয়ে গেছে। ভাঙন প্রতিরোধে উপকূলের জনপদে তীররক্ষা বেড়িবাঁধ খুব জরুরি। উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়নসহ নানা সুরক্ষা প্রকল্পের কথা শোনা যায়, সেসবের কার্যক্রম আরও দৃশ্যমান হওয়া দরকার। 

প্রকৃতির প্রতি অবিচারের আরেক নমুনা হচ্ছে পাহাড়ধস। মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ধসের প্রধান কারণ নির্বিচারে পাহাড় কাটা। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড় দখল করে বসতি গড়ে তুলছেনÑ এ বিষয়টি বহুল আলোচিত। পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির কথাও প্রায়শই শোনা যায়। এসবের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার কথাও বলা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছরই এই মৌসুমে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দেয়। পাহাড় কাটার পেছনে শুধু দখলদাররাই দায়ী নয়, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিয়ম না মেনে সরকারিভাবেও পাহাড় কাটা হয়। পাহাড়ধস ঠেকাতে নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ করা দরকার এবং ধসের আশঙ্কা রয়েছে এমন পাহাড় এবং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া জরুরি। বিভিন্ন সময় পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর গঠিত কমিটি পাহাড়ধসের কারণ নির্ণয় করে যেসব সুপারিশ করেছিল, সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি আরও কী করণীয় তা নির্ধারণ করে এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

আসলে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব, তাতে সন্দেহ নেই। এই ক্ষেত্রে স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। অতীতে উন্নয়নের নামে উপকূলে অনেক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে. তা রোধ করতে হবে। আর পাহাড়ধসের মতো মানবসৃষ্ট যে দুর্যোগ তা সরকার চাইলেই রোধ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা কাম্য।  দুর্যোগ প্রতিরোধে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ধরনের দুর্যোগ আসার সম্ভাবনা দেখা দিলেই দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষকে সতর্ক করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবেÑ এ প্রত্যাশা করি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা