× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘গুগল পে’ নতুন মাত্রা যুক্ত করুক লেনদেনে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫ ১৬:০৮ পিএম

‘গুগল পে’ নতুন মাত্রা যুক্ত করুক লেনদেনে

অ্যাপ ও ইন্টারনেট ভিত্তিক লেনদেন ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক আরটিজিএস, বিএফটিএন, ইএফটি, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচসহ অনেকগুলো প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালু করেছে। যার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা লেনদেন হচ্ছে। এসব অগ্রগতির মাঝে আরও একটি সুখবর জানা গেল। এবার দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা গুগল ওয়ালেট, যা ‘গুগল পে’। বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে প্রযুক্তির মাধ্যমে লেনদেনের এই ধাপটি স্পর্শ করার সুযোগ পেল বাংলাদেশ। জানা গেছে, আগামী জুন মাসের মধ্যেই দেশের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় এ সেবার কার্যক্রম শুরু হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের হাতে থাকা স্মার্টফোনই হয়ে উঠবে একটি ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’। এতে আলাদা করে গ্রাহককে আর কার্ড বহন করার দরকার হবে না। আকাশপথে যাতায়াত থেকে শুরু করে কেনাকাটা কিংবা সিনেমা দেখা সবকিছু মোবাইল ফোনেই হবে লেনদেন। 

আরও জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের ভিসা ও মাস্টারকার্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায়) গুগল ওয়ালেটের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবেন। পাশাপাশি যেকোনো এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) সাপোর্টেড টার্মিনালে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। ধাপে ধাপে দেশের অন্য ব্যাংকগুলোও এই সেবায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। দেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, উপায়সহ বিভিন্ন স্থানীয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্লাটফর্ম ব্যাপক জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য। ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডও ডিজিটাল লেনদেনে ব্যবহারের জন্য গ্রাহকের কাছে সমজনপ্রিয়। তবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তাদের কাজের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে, ঠিক করে দেওয়া আছে তারা কী করতে পারবে এবং কী করতে পারবে না। 

২৯ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘জুনেই চালু হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত গুগল পে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা গেছে এই তথ্য। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটি ব্যাংক ও গুগল একসঙ্গে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে ব্যবহারকারীরা কনট্যাক্টলেস পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) টার্মিনালে সহজেই ‘ট্যাপ অ্যান্ড গো’ পেমেন্ট করতে পারবেন, যা তাদের কেনাকাটাকে করবে আরও দ্রুত, নিরাপদ ও আধুনিক। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং অবকাঠামোর সঙ্গে গুগল ওয়ালেটের সমন্বয় না থাকায় এই সেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশনের (এনএফসি) পেমেন্টের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। আমাদের বিশ্বাস, এই উদ্যোগ দেশের আর্থিক লেনদেনের খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। তবে চিন্তার বিষয়, গুগল পে যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম, তাই এর প্রভাব আমাদের স্থানীয় ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর ওপর কী ধরনের হবেÑ এই বিষয়টিও বিবেচনা রাখতে হবে। তাদের কাজের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট নিয়মনীতি থাকা জরুরি।

ডিজিটাল কনট্যাক্টলেস পেমেন্টের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ভারত। পরিসংখ্যান মতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দেশটির মোট ডিজিটাল লেনদেনের ৯৩ শতাংশ এবং লেনদেনের মূল্যের ৯২ শতাংশই ইউপিআইয়ের (ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস) মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে গুগল পে একাই লেনদেনের মোট অর্থের ৫১ শতাংশ এবং মোট লেনদেনের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি (৩৭ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই অগ্রযাত্রায় শুধু ভারত নয়, চলতি বছরের মার্চ থেকে পাকিস্তানেও গুগল পে চালু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়ার মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও গুগল পে ব্যবহার হচ্ছে। জানা গেছে, ডিজিটাল ওয়ালেট সেবাগুলো সাধারণত স্পর্শকাতর আর্থিক তথ্য ও লেনদেন পরিচালনা করে। সে কারণে গুগল ওয়ালেট ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণ করবে না। আরেকটি সুবিধা এখানে দৃশ্যমান, তা হচ্ছে অ্যাপ চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা কেবল নিজেদের ব্যাংক কার্ড অ্যাপে যুক্ত করবেন, আর সব লেনদেন তাদের নিজ নিজ ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে ডিজিটাল ওয়ালেটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেÑ এমন ব্যাংকগুলোকে সেবা চালুর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়।

বলা হচ্ছে, গুগল ওয়ালেট ব্যবহারকারীরা যদি নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা, অনলাইন পেমেন্ট বা ‘পিয়ার টু পিয়ার’ ট্রান্সফারের মতো লেনদেন করে সেখানে কোনো ফি দিতে হবে না। তবে গুগল কোনো কারণে এই স্থানীয় লেনদেনটি আন্তর্জাতিক সার্ভারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করে, তখন হয়তো ফির প্রসঙ্গটি আসতে পারে বলেও শঙ্কা থেকে যায়।

প্রযুক্তির উন্নতি মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে বহুগুণে সহজ করেছে এটা যেমন সত্য, তেমনি প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে; যা আমাদের জীবন এবং সমাজের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমন গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি, হ্যাকিং, ফিশিং এবং ডেটা লিকের মতো ঘটনা প্রায়শই ঘটে; যা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে কাজ হারানোর চিন্তা থাকে। তার পরও প্রতিযোগিতার এ যুগে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনা ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের অন্যতম পথও প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। সময়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা খুবই জরুরি। সে কারণে সরকার এবং সংশ্লিষ্টরা প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে গ্রাহকদের নিরাপদ ও স্বস্তিতে রাখতে আপডেটের পাশাপাশি মৌলিক সেবাগুলো প্রদানে সহজ, উন্নত ও সাশ্রয়ী করতে বদ্ধপরিকর। গ্রাহকদের উচিত ভবিষ্যতে অধিকতর শক্তিশালী ও সমৃদ্ধতর বাংলাদেশ নির্মাণে এবং উন্নত সেবা গ্রহণ ও বিস্তারে প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হওয়া। আমাদের প্রত্যাশা, শুভ এবং সফল হোক বাংলাদেশ গুগল পের অগ্রযাত্রা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা