× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজেট ভাবনা

শিল্পবান্ধব কর্মমুখী বাজেট চাই

মীর আব্দুল আলীম

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ১৬:১৭ পিএম

মীর আব্দুল আলীম

মীর আব্দুল আলীম

অদৃশ্য অচলাবস্থার ছায়া যেন ধীরে ধীরে গ্রাস করছে দেশের শিল্পখাতকে। ইতোমধ্যে বহু শিল্পকারখানা বন্ধের পথে। বেশির ভাগ কারখানায় উৎপাদন নেমে এসেছে ৪০-৫০ শতাংশে। শ্রমিকরা ফিরে যাচ্ছে শূন্য হাতে, অনিশ্চয়তাকে বুকে নিয়ে। অথচ রাষ্ট্র বলছে, সময়মতো বেতন দাও; ব্যাংক বলছে, কিস্তি না দিলে খেলাপি হবে! শিল্পকারখানার মালিক গ্যাস-বিদ্যুৎ ছাড়া, ঋণ ছাড়াই কীভাবে চালাতে বলা হচ্ছে কারখানা? গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পর বহু শিল্পকারখানার মালিক প্রকাশ্যে আসছেন না। তাদের সেসব প্রতিষ্ঠানও বন্ধ প্রায়। এমতাবস্থায় শিল্প না বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে কী করে। তাই শিল্পকারখানা বন্ধ হোক তা কাম্য হতে পারে না। প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করার ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে শ্রমিক বেকার হবে, দেশের অর্থনীতিতে তার বিরাট প্রভাব পড়বে। টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতের নেতারা সরাসরি বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ভয়াবহ। চোরের দল সব লুটেপুটে খেয়ে গেছে। এখন সেই দায় চাপানো হচ্ছে শিল্প মালিকদের কাঁধে। ব্যাংক লোন পাওয়া যাচ্ছে না। সুদের হার উচ্চ। গ্যাস চাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না, আর বিদ্যুৎতের অবস্থাও একই চিত্র। এমন শিল্পনীতি নিয়ে কোন উন্নয়ন? গুটিকয়েক ব্যাংক চোর সব লুট করে গেছে। তাতে শিল্প পড়েছে বেকায়দায়। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো শিল্প মালিকদের নানাভাবে চাপে রাখা হচ্ছে। তাতে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো চলছে তা-ও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

সহজ করে বললে শিল্প খাত এখন সংকটে। সেখান থেকে উত্তরণে দরকার সাহসী, যুক্তিযুক্ত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। শুধু বক্তৃতা দিয়ে শিল্প বাঁচানো যাবে না, চাই কার্যকর পদক্ষেপ। শিল্পের প্রাণ ফেরাতে যেসব পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক : ১. নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ : শিল্প এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। লোডশেডিং ও গ্যাস-সংকট শিল্পের সবচেয়ে বড় বাধা। ২. শিল্পবান্ধব সুদের হার : ব্যাংক ঋণে ৭-৯% এর মধ্যে সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য। ৩. কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় : শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট হ্রাস করতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুল্ক ছাড় দিন। ৪. রিভাইভাল প্যাকেজ চালু : বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অচল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ ঘোষণা করুন। ৫. শিল্প মালিক নয়, শ্রমিক বাঁচান : মালিকের ভুল থাকলে আইন অনুযায়ী বিচার করুন, কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না। ৬. প্রণোদনা প্যাকেজ : উৎপাদন খাতের জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প সুদে সহজ ঋণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করুন। ৭. উদ্যোক্তাদের সম্মান করুন : শিল্পপতিদের ‘অপরাধী’ না বানিয়ে তাদের সম্ভাবনার অংশ হিসেবে দেখুন। তারা দেশের চাকরি, রপ্তানি ও রাজস্বের উৎস। ৮. শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা : সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে নীতির পরিবর্তন যেন না হয়। দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল শিল্পনীতি জরুরি। ৯. শিল্প এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল : যেখানে ভূমি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবে এক ছাতার নিচে। ১০. শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা : শিল্পপ্রতিষ্ঠান সংকটে পড়লে শ্রমিক যেন সুরক্ষিত থাকে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১১. শিল্প ব্যবস্থাপনায় আইটি ও অটোমেশন সহায়তা : প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য কর ছাড় ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। ১২. রপ্তানিমুখী শিল্পে বিশেষ কর সুবিধা : রপ্তানির ওপর উৎসে কর কমিয়ে দিতে হবে এবং কর রিটার্ন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। ১৩. ব্যুরোক্র্যাটিক হয়রানি বন্ধ করুন : শিল্প উদ্যোক্তারা যেন প্রতিটি কাগজে অনুমোদনের জন্য দিনের পর দিন দপ্তরে ঘুরে না মরেনÑ এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। ১৪. পরিবহন ও অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন : শিল্পপণ্য পরিবহনে দ্রুত ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলুন। ১৫. অর্থ ফাঁকি নয়, ট্যাক্স ছাড় : যারা সৎভাবে কর দিচ্ছেন তাদের জন্য পুরস্কারমূলক কর রেয়াত ও বিশেষ স্বীকৃতি দিন। ১৬. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য স্টার্টআপ সহায়তা : নতুন শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত ঋণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করুন। ১৭. পলিসি লোন নিশ্চিত করুন : শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে স্বল্প সুদে পলিসি লোন যেন সহজে পায় যেসব শিল্প সত্যিই চালু আছে। ১৮. নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা: নারী শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ স্কিম চালু করতে হবেÑ ঋণ ছাড়াও মার্কেটিং, প্রশিক্ষণে সহায়তা। ১৯. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি : শ্রমিক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাফদের জন্য প্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করুন। ২০. শিল্প গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ : স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি তৈরিতে গবেষণা কার্যক্রমে বাজেট বরাদ্দ দিন।

শুধু ফাইলের পাতায় ‘শিল্প উন্নয়ন’ লিখে কিছু হবে না। বাজেটে যদি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে এই খাতটি গভীর সংকটে পড়তে বাধ্য। তাই এবার বাজেটে চাই কার্যকর নীতিমালাÑ যাতে শিল্প বাঁচে, উদ্যোক্তা টিকে থাকে, শ্রমিকের মুখে হাসি ফিরে আসে। আমাদের দেশের শিল্পপতিরা কেউ অন্য গ্রহ থেকে আসেননি। এরা এই দেশের সন্তান। এই মাটির ঘামে, পরিশ্রমে কারখানা বানিয়েছেন। একটি শিল্প বন্ধ মানে কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা। একটি শিল্প রুগ্‌ণ মানে একটি এলাকার অর্থনীতি রুগ্‌ণ। অথচ আমরা দেখি, যেই মালিক সমস্যায় পড়ে, তাকে নানা অনুসন্ধান, হয়রানি ও হুমকির মধ্যে ফেলা হয়। এদের সুরক্ষা মানেই রাষ্ট্রের প্রাণ ফিরিয়ে আনা। 

আমাদের দাবি, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট হতে হবে শিল্পবান্ধব, এই হোক অঙ্গীকার। এটা বাস্তবে। এই বাজেট যেন হয় কর্মসংস্থানের ভিত্তি, উদ্যোক্তাদের আশ্রয়, ব্যাংক-শিল্প সংলাপের সেতু। করের বোঝা নয়, হোক সহায়তার হাত। আমরা যেন ভুলে না যাই, শিল্প মানেই কর্মসংস্থান? শিল্প মানেই একেকটা পরিবারের রুটি-রুজির নিশ্চয়তা? সরকার বলছে, ‘এবার বাজেট হবে উৎপাদনমুখী, বিনিয়োগবান্ধব।’ কথায় নয়, আমরা কাজে তার প্রমাণ চাই। 

শিল্প মানেই দেশের ভবিষ্যৎ। এখানে কর্মসংস্থান, রপ্তানি আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রাÑ সবকিছু জড়িয়ে আছে। আগামী বাজেট যদি শিল্পখাতকে অগ্রাধিকার না দেওয়া হয়, তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। শিল্প রক্ষা করা মানে কেবল অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা নয়, এটি লাখো শ্রমজীবী মানুষের খাবার টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন, একটি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার শপথ। এ বাজেট হতে হবে প্রকৃত অর্থেই শিল্পবান্ধব, সহানুভূতিশীল ও সময়োপযোগী। 

  • সাংবাদিক ও কলাম লেখক 
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা