× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাস্থ্য খাত

মানসম্মত চিকিৎসাসেবা সময়ের দাবি

ড. আলা উদ্দিন

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ১৬:১৫ পিএম

ড. আলা উদ্দিন

ড. আলা উদ্দিন

বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী প্রবণতা দীর্ঘদিনের এবং এটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবার আশায় ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে রোগীরা ক্রমবর্ধমান হারে ভ্রমণ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের ফলে থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশে চিকিৎসা-ভিত্তিক পর্যটনের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই প্রবণতা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে একাধিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। প্রতিবছর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকরা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করছেন, যা দেশের রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর জনসাধারণের আস্থার অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠছে। যদিও বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার মান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত এবং দক্ষ চিকিৎসক তৈরির হারও উল্লেখযোগ্য, তবুও অবকাঠামোগত দুর্বলতা, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এবং সেবার মানে ঘাটতির কারণে দেশে মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

চিকিৎসা খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ছাড়া এই সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব নয়। উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল এবং সেবার মানোন্নয়নের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে আরও শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি। দেশের রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও নিজের দেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারা শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং একটি আত্মনির্ভরতার সংকট। বিদেশমুখিতা কমিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসা খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার এটিই সর্বোত্তম সুযোগ। দেশীয় স্বাস্থ্য খাতের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে মানসম্মত চিকিৎসাসেবার বিকাশই মূলমন্ত্র হতে হবে। ভারত যাওয়ার জটিলতা বা বিদেশে চিকিৎসার খরচের বিবেচনা নয়, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর নিজের দেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। বিদেশে চিকিৎসার জটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের দেশকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী করার এটাই সর্বোত্তম সুযোগ।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাত্রা করছেন। এই বিদেশমুখী চিকিৎসা-পর্যটনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যা দেশের স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি এবং চ্যালেঞ্জগুলোকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে। গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসা, তুলনামূলকভাবে কম খরচ, সহজ ভিসা প্রক্রিয়া এবং মানসম্পন্ন সেবার কারণে উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষদের কাছে ভারত যাওয়ার প্রবণতা ছিল প্রবল। তবে আগস্টের পর ভিসা প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় বর্তমানে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো বাংলাদেশি রোগীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। চিনও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে। 

বাংলাদেশি রোগীদের বিদেশমুখী হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ দেশের অভ্যন্তরে উচ্চ মানের চিকিৎসাসেবার অভাব। বিশেষ করে ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, প্যানক্রিয়াটাইটিস, বা জটিল সার্জারির ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি এবং দক্ষ জনবলের সীমাবদ্ধতা অনেক রোগীকে বিদেশমুখী হতে বাধ্য করে। এ ছাড়া দেশীয় হাসপাতালে দীর্ঘ অপেক্ষার তালিকা, সেবার মান নিয়ে অসন্তোষ এবং রোগীদের পর্যাপ্ত মনোযোগ না পাওয়ার অভিজ্ঞতা এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। অন্যদিকে বিদেশি হাসপাতালগুলো তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি, অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং রোগীবান্ধব সেবার জন্য সুপরিচিত। যেমনÑ থাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলোতে বিদেশি রোগীদের জন্য বিশেষায়িত সেবা ইউনিট, ভাষার দোভাষী এবং ভিসা প্রক্রিয়ার সহজতর ব্যবস্থা বাংলাদেশি রোগীদের আকৃষ্ট করছে। উন্নত ও নিরাপদ সার্জারি, নির্ভুল ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা এবং পরিপূর্ণ রোগীসেবার নিশ্চয়তার আশায় অনেকে এসব দেশে যাচ্ছেন। 

তুলনামূলক খরচও এই চিকিৎসা-পর্যটনের অন্যতম কারণ। যেমনÑ সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার তুলনায় থাইল্যান্ডের চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম, অথচ সেবার মান অনেক ক্ষেত্রেই উন্নত। পাশাপাশি, বিদেশি হাসপাতালগুলোর সুপরিকল্পিত ব্র্যান্ডিং এবং বিজ্ঞাপন প্রচারণা রোগীদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আপাতদৃষ্টিতে দেশে খরচ কম এবং বিদেশে খরচ বেশি মনে হলেও দেশের চিকিৎসার দীর্ঘসূত্রতা ও ভুল চিকিৎসার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশ অপেক্ষা দেশে খরচ অত্যধিক ও স্বাস্থ্যহানি ঘটে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। বিদ্যমান পরিস্থিতি ও কূটনীতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালোভাবে প্রকাশ করে। স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ এবং দক্ষ জনবল গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

দেশে চিকিৎসার মান উন্নত হলেও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে অবকাঠামোর অভাব, জনবল সংকট এবং সেবার মানের ঘাটতির কারণে রোগীদের আস্থা কমেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর খরচ বেশি হলেও, অনেক ক্ষেত্রে সেবার মান আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় কম। ফলস্বরূপ রোগীরা বিদেশে গিয়ে নিজেদের সুস্থতার নিশ্চয়তা খুঁজে পান। দেশের অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরীক্ষায় ভুল, ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের অযত্ন-অবহেলার কারণে রোগীদের আস্থা আরও কমে গেছে। এ ছাড়া সামাজিক এবং মানসিক কারণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই মনে করেন, বিদেশে চিকিৎসা করালে তা সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসার জন্য বিদেশ ভ্রমণকে কিছু মানুষ সামাজিক উন্নতির চিহ্ন হিসেবে দেখেন। একই সঙ্গে পরিবারের চাপ বা বিদেশি চিকিৎসকদের প্রতি অতিরিক্ত আস্থা রোগীদের বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। 

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশি রোগীদের বিদেশমুখী হওয়ার এই প্রবণতা শুধু ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় নয়; এটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন। যদি দেশে উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল এবং মানসম্পন্ন সেবার ঘাটতি কমিয়ে আনা যায়, তবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এজন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, আধুনিকীকরণ এবং মানুষের আস্থা পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই বিদেশমুখী চিকিৎসার প্রবণতা কমবে এবং দেশের স্বাস্থ্য খাত স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের জনগণ প্রতিবছর চিকিৎসা-পর্যটনের জন্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চাপ সৃষ্টি করছে। এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় শুধু দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার প্রতিফলন নয়, বরং স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো ও সেবার ঘাটতিও স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলে। সাম্প্রতিককালে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির কারণে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি রোগীদের থাইল্যান্ডমুখী হওয়া একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। থাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলোর উন্নত সেবা, সহজ ভিসা প্রক্রিয়া এবং খরচের তুলনামূলক সামঞ্জস্য এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করছে।

বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বাংলাদেশি রোগীরা একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। থাইল্যান্ড বা ভারতের মতো দেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক সময় রোগীরা নিজেদের সমস্যা সঠিকভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হন, যা সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া দালালচক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক রোগী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং মানসিক চাপের শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি রোগীদের আস্থাহীনতার আরও একটি দিক তুলে ধরে। 

দেশে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং দক্ষ জনবল তৈরি করা গেলে রোগীদের এই ভোগান্তি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি না হলে এই বিদেশনির্ভরতা কেবল বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় নয়, বরং সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকবে। বিদেশে, বিশেষভাবে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের জটিলতা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রতিবছর লক্ষাধিক বাংলাদেশি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, যার ফলে দেশের বাইরে বিশাল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। এই প্রবণতা দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলে ধরে, তবে একই সঙ্গে এটি সমস্যার সমাধানে একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়। রোগীদের বিদেশমুখী হওয়ার কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

দেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি, উন্নত যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ চিকিৎসকরা রোগীদের উচ্চমানের সেবা প্রদান করবেন। উন্নত সেবার অভাবের কারণে অনেক রোগী বিদেশে যান, যা বিদেশমুখী চিকিৎসার অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র : বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেমনÑ ক্যানসার, হৃদরোগ, নিউরোসার্জারি এবং অন্যান্য জটিল রোগের জন্য। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিশেষায়িত কেন্দ্রগুলো দেশে সেবার মান বাড়াতে সাহায্য করবে এবং রোগীদের বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমাবে। বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ : বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। ইউনাইটেড, এভারকেয়ার, স্কয়ার হাসপাতালসহ অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং যৌক্তিক খরচে চিকিৎসার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিদেশি মানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে রোগীরা দেশে চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত হবেন। মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি : চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত প্রশিক্ষণ চিকিৎসকদের দক্ষতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। চিকিৎসা পেশায় আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবহারকে আরও প্রসারিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারি উদ্যোগ : সরকারি হাসপাতালগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 

গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করলে সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক সুবিধা ও আত্মনির্ভরশীলতা : চিকিৎসা খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা শুধু দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে চিকিৎসার জন্য ব্যয় হওয়া বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পুনঃবিনিয়োগ করা সম্ভব হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতের টেকসই উন্নয়ন একটি সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগের দাবি রাখে, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্ব, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসচেতনতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসা খাতের উন্নয়ন কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নয়, বরং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও অপরিহার্য। দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ ও সেবার মানোন্নয়ন বিদেশমুখী প্রবণতা হ্রাস করবে, ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন, বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র গঠন এবং চিকিৎসকদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এ খাতকে শক্তিশালী করার মূল উপাদান। সেই সঙ্গে রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে পেশাদার ও মানবিক আচরণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ আরও গ্রহণযোগ্য ও আস্থাবান হবে। এ লক্ষ্যে সরকার, চিকিৎসক, উদ্যোক্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সম্মিলিত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। বর্তমান চ্যালেঞ্জকে সম্ভাবনায় রূপান্তরের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নীতিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতকে কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা সম্ভব।

  • অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা