× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক ধারা ফেরাতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ১৬:১৮ পিএম

রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক ধারা ফেরাতে হবে

গত ১২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অধ্যাদেশে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে নতুন দুটি বিভাগ করা হয়েছে। দুই বিভাগের কার্যপরিধি কী হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী বললেও অধ‍্যাদেশকে ঘিরে ‘কলম বিরতি’ পালন করছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জানা গেছে, আন্দোলনের প্রস্তুতি ও আন্দোলনের কারণে মে মাসের প্রথম ২০ দিনে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে এনবিআর রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজস্ব আদায়ে গতিশীলতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়। সরকারের চেষ্টার পরও রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এমনিতেই রাজস্ব আদায়ের দুর্বল ব‍্যবস্থাপনার কারণে পিছিয়ে থাকে এনবিআর। কিন্তু কলম বিরতি কর্মসূচি যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

উল্লেখ্য, এনবিআর এখন রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং আদায়ের কাজটি করে থাকে। নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে এক বিভাগ রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করবে এবং আদায় করবে আরেক বিভাগ। বলা হচ্ছে, এনবিআর ভাগ করা নিয়ে আপত্তি নেই। যত আপত্তি দুই বিভাগের পদপদবি নিয়ে। যে কারণে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন শুল্ক-কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

২১ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘কলম বিরতিতে রাজস্ব আদায়ে বিপর্যয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, অধ্যাদেশে বলা আছে, সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে এই বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেবে। সেখানে রাজস্ব খাতের অভিজ্ঞতার কথা বলা নেই। ঐক্য পরিষদের দাবি রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব আসতে হবে রাজস্ব খাত থেকে। রাজস্ব খাতের অভিজ্ঞ লোকেরাই এ খাতের ভালো-খারাপ দিকগুলো বুঝতে পারেন। জানা গেছে, বর্তমানে এনবিআরে কর্মকর্তা পর্যায়ে সদস্য, প্রথম সচিব ও দ্বিতীয় সচিবÑ এই তিন পদ রয়েছে। আর মাঠপর্যায়ে কাজ করেন সহকারী কমিশনার, উপকমিশনার, যুগ্ম কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও কমিশনার। কিন্তু নতুন রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ হবে সরকারের সাধারণ প্রশাসনের মতো। সেখানে সাধারণত সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিবÑ এই ধরনের পদ থাকে। প্রশ্ন উঠছে, শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের এই নতুন বিভাগে কীভাবে পদায়ন করা হবে। এই অস্পষ্টতা নিয়ে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক খাতে রাজস্ব ঘাটতি মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি আয়কর খাতে। যার পরিমাণ প্রায় ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। কারণ হিসেবে বলা হয়, আমদানি হ্রাস পাওয়ায় অগ্রিম কর আদায় কমেছে। একই সঙ্গে উৎপাদন ও সরবরাহ সংকটে ভ্যাট আদায় ব্যাহত হয়েছে। এমনকি মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ব্যাংকে আমানত হ্রাস পেয়ে আবগারি শুল্ক থেকেও রাজস্ব প্রত্যাশিত মাত্রায় আসেনি। 

প্রতিবছরই বাজেটের আকারের তুলনায় বাড়ছে না রাজস্ব আহরণ। ঘাটতি পূরণে সরকারকে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এ ঋণের কিস্তি ও সুদ টানতে গিয়ে রাষ্ট্রের ব্যয়ের চাপ আরও বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও জটিলতা বিদ্যমান। আমরা মনে করি, দেশের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাকে ব্যবসাবান্ধব করার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিকাশ ঘটাতে হবে। আর এসব বিষয়ের ওপর সরকারের এ সংস্কার সাফল্য নির্ভর করছে।

আমরা মনে করি, কলমবিরতির কারণে রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা সরকারের আগামী বাজেট বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আর রাজস্ব ঘাটতির কারণে নতুন করে বড় প্রকল্প নেওয়া কঠিন হবে। এমনকি চলমান প্রকল্পেও ব্যয় সংকোচনও করতে হতে পারে। আর বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থির সময়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বরাদ্দ সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। তার মানে সার্বিক উন্নয়নে এর প্রভাব পড়বে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে বলতে চাই, এনবিআরের চলমান এই সংকট নিরসনে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। পদায়নের যৌক্তিক সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। যারা আন্দোলনে আছেন তাদেরও আলোচনার মাধ্যমে এনবিআর ও মাঠপর্যায়ের শুল্ক-কর প্রশাসনের পদপদবি কীভাবে সমন্বয় করা হবে তার একটা মতৈক্যে পৌঁছতে হবে। আলোচনার টেবিলই পারে সকল সংকট নিরসনের পথ দেখাতে। এমনিতেই টানা কয়েকদিনের আন্দোলনে কাজের গতি অনেক নষ্ট হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। তাই যেকোনো মূল্যে রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক ধারা ফিরিয়ে এনে তা অব্যাহত রাখতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা