কৃষি
ড. আলা উদ্দিন
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ১৬:১২ পিএম
ড. আলা উদ্দিন
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সীমানায় বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষে মুছাপুর ক্লোজার এবং ছোট ফেনী নদীর অবস্থান একটি চমৎকার প্রাকৃতিক আকর্ষণ। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্য প্রাণীর উপস্থিতি এবং সাগরের ঢেউয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ কিলোমিটার প্রস্থের সমুদ্রসৈকতের যেকোনো জায়গা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ রয়েছে। মুছাপুর ক্লোজারটি এলাকাবাসীর কাছে মিনি কক্সবাজার বা মুছাপুর সমুদ্রসৈকত হিসেবে সুপরিচিত। স্থানীয়দের কাছেও মুছাপুর ক্লোজারটি গর্ব।
মুছাপুর স্লুইসগেট ক্লোজারটি প্রথমে নির্মিত হয়েছিল স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং তাদের কৃষি কার্যক্রমকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। মূলত কৃষিজমিতে লবণাক্ত সাগরের পানি প্রবেশ রোধে ২০০৫ সালে এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। ২০০৬ সালে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূল আবহাওয়া ও প্রবল স্রোতের কারণে অবশেষে ২০১৩-১৪ সালে পুনরায় কাজ অব্যাহত রেখে ২০১৫ সালের শুরুতে কাজ সম্পন্ন হয়।
কৃষিকাজ এবং সাধারণ জীবনযাত্রার জন্য এ অঞ্চলের মানুষকে চরম সংকটমুক্ত করতে ক্লোজারের কার্যকারিতা গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পটি সঠিকভাবে কার্যকর রাখতে ২৩টি ভেন্ট রেগুলেটর যুক্ত করা হয়েছিল, যাতে প্রয়োজনীয় মিষ্টিপানি সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে সাগরের পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তবে সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে মুছাপুর ক্লোজারের ধ্বংস এবং এর ফলাফল গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ২৬ আগস্ট ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় অতিরিক্ত পানির চাপের কারণে ক্লোজারের ২৩টি ভেন্ট রেগুলেটর ভেঙে পড়ে, যা এই অঞ্চলের জন্য বিশাল বিপর্যয় ডেকে আনে। দীর্ঘদিন ধরে মুছাপুর ক্লোজার স্থানীয় কৃষকদের জমি ও বসতবাড়ি সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। তবে এই ধ্বংসযজ্ঞের ফলে নদীর দুপাশে অব্যাহত ভাঙন দেখা দিয়েছে, যা শুধু অবকাঠামোগত ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং হাজার হাজার পরিবারকে চরম সংকটে ফেলেছে।
ক্লোজারের ধ্বংসের পর থেকে মুছাপুর ও এর আশপাশের এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে, ফলে ফসলি জমি পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন বিপর্যস্ত হচ্ছে এবং খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া বসতবাড়ির সুরক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, অনেকেই বাধ্য হয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন যদি দ্রুত পুনর্নির্মাণ করা না হয়, তাহলে এ অঞ্চলে আরও মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এতে শুধু জীবিকা এবং কৃষিজমিই নয়, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্লুইসগেট বা ক্লোজারটি দ্রুত পুনর্নির্মাণ করা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ক্লোজারের পুনর্নির্মাণ এবং ভাঙন রোধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। যথাযথ পুনর্গঠন এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মুছাপুর ক্লোজার ভেঙে যাওয়ার ফলে তিন জেলার (নোয়াখালী, ফেনী ও কুমিল্লা) চাষযোগ্য জমির প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর এলাকা ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতির ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই অঞ্চলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে ধান, গম, শাকসবজি ও অন্যান্য শস্য উৎপাদিত হয়; যা স্থানীয় মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস। ক্লোজারটি ধ্বংস হওয়ার কারণে লবণাক্ত পানি অনায়াসে কৃষিজমিতে প্রবেশ করছে, যা জমির উর্বরতা নষ্ট করে দিচ্ছে এবং কৃষি উৎপাদন চক্রে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই রেগুলেটরের পুনর্নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন না হয়, তাহলে এক বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটি শুধু স্থানীয় কৃষকদের আয়ের ক্ষতি নয়, বরং বৃহত্তর খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকি। এর ফলে স্থানীয় বাজারেও খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াবে। কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি এই ধ্বংসের কারণে নদীতীরবর্তী বসতভিটা, সড়ক ও বিভিন্ন অবকাঠামো বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
লক্ষাধিক মানুষ ইতোমধ্যেই তাদের বসতভিটা হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এবং অনেকে বাধ্য হয়েছে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে। সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি করছে। পুনর্নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি বৃদ্ধি করবে না, বরং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। এজন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব, যা এলাকাবাসীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। সামনে বর্ষাকাল। এখনও বাড়তি নির্মিত না হওয়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কে আছে!
নদীভাঙনের কারণ হিসেবে অনেকে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করছেন। মুছাপুর ক্লোজার এবং এর আশপাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীভাঙনের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে, যা প্রশাসনের চোখের সামনেই পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অবৈধ কার্যকলাপের ফলে মুছাপুর ক্লোজারের ভিত্তিমূল দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা ক্লোজারটি ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে এবং প্রতিনিয়ত নদীর গর্ভে তীরবর্তী এলাকা বিলীন হচ্ছে।
বালু উত্তোলনকারীরা মুনাফার জন্য পরিবেশ ও জনস্বার্থের তোয়াক্কা না করেই বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে, যা পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনছে। নদীর তলদেশ থেকে বড় পরিমাণে বালু উত্তোলনের ফলে তলদেশ নিচু হয়ে যায় এবং পানিপ্রবাহের সঙ্গে বাঁধ এবং রেগুলেটরের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। এতে নদীর পার্শ্ববর্তী ঘরবাড়ি, ফসলি জমি এবং অন্যান্য অবকাঠামো ভাঙনের শিকার হয়- যা এলাকাবাসীর জীবন ও সম্পত্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, না হলে স্থানীয় পরিবেশ ও অর্থনীতি চিরস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণ এখন সময়ের দাবি, ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটি শুধু স্থানীয় জনগণের জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, স্থানীয় প্রশাসনকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম ক্লোজারের ভিত্তি দুর্বল করে তোলার পাশাপাশি নদীতীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙনের প্রবণতাও বাড়িয়ে তুলছে। কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নদীর পার্শ্ববর্তী জমির স্থায়িত্ব ও রেগুলেটরের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি পরিবেশবান্ধব এবং উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এতে ক্লোজারটি শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে, যা ভবিষ্যতে বন্যা বা অতিরিক্ত পানির চাপ মোকাবিলায় সক্ষম হবে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এমন উপকরণ ব্যবহার করা উচিত; যা উচ্চপ্রবাহের চাপ সহ্য করতে পারে এবং সাগরের লবণাক্ত পানি রোধ করতে সক্ষম। নতুন রেগুলেটরের নকশায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মিষ্টিপানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে কৃষিকাজ এবং পানি সরবরাহে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এ ছাড়া পুনর্নির্মাণের কাজ সম্পাদনের জন্য স্থানীয় জনগণ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে নির্মাণটি স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা এবং পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হলে এটি আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি রোধ করবে। মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষ একটি নিরাপদ এবং স্থিতিশীল পরিবেশে বসবাসের সুযোগ পাবে এবং নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের কৃষিকাজ ও অবকাঠামো রক্ষা পাবে।
মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণ শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের সুরক্ষা নয়, বরং নোয়াখালীসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। মুছাপুর ক্লোজার ধ্বংসের কারণে এই অঞ্চলের কৃষি, অবকাঠামো এবং জনজীবনে যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, তা পুনর্নির্মাণ ছাড়া সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রতি বছর এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জমিতে চাষ হওয়া ফসল স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা এই ক্লোজারের মাধ্যমে সুরক্ষিত হয়ে আসছিল। যদি এটি পুনরায় নির্মাণ না করা হয়, তবে স্থানীয় কৃষকরা বছরে লাখ লাখ টাকার ফসল হারাবেন, যা আঞ্চলিক অর্থনীতিকে সংকটে ফেলে দিতে পারে।
এই ক্লোজারের পুনর্গঠন প্রকল্পটি দ্রুত সম্পাদনের জন্য প্রশাসনের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এতে স্থানীয় অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে, যা ক্লোজারের ভিত্তি মজবুত রাখতে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যতে ভাঙনের ঝুঁকি কমাবে। এ ছাড়া উন্নত প্রযুক্তি ও পরিবেশসম্মত নির্মাণশৈলী ব্যবহার করলে এই কাঠামো আরও মজবুত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে এর কার্যকারিতা বজায় থাকবে। পরিবেশ এবং জনকল্যাণের কথা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পিত পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে কেবল এলাকাবাসীর জীবন ও সম্পদ রক্ষাই নয়, বরং নদী ও পরিবেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণ ও আধুনিকায়ন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে, যেন এটি আবার স্থানীয় জনগণের জীবনে নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আনতে পারে। সঠিক পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে এই ক্লোজার দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এই অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এটি শুধু এলাকার জলবায়ু সুরক্ষা নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতির একটি স্থিতিশীল কাঠামো গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়া যত দ্রুত কার্যকর করা হবে, তত দ্রুত এই অঞ্চলটি তার আগের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথে ফিরে আসবে।