× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রেমিট্যান্সপ্রবাহের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ১৬:২৮ পিএম

রেমিট্যান্সপ্রবাহের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। সেই অর্থে স্বীকার করতে হয় দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সবচেয়ে বড় অবদান প্রবাসীদের। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সেই অর্থনীতির চাকা ঘুরছে প্রতিনিয়ত। রেমিট্যান্স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপি বৃদ্ধি পায়। সেই রেমিট্যান্স নিয়ে সুখবর দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহে এবার অভূতপূর্ব সাফল্যের মুখোমুখি বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫.২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিসংখ্যান গত ৭ মে পর্যন্ত, যা পূর্ববর্তী যেকোনো বছরের চেয়ে রেকর্ড সংখ্যক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এর আগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। এ কথা সত্য যে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রবাহ বাড়ছে। কমেছে হুন্ডি ও অর্থ পাচার। আর বৈধপথে প্রবাসী আয় ইতিবাচক ধারায় থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।

মাসের হিসাবেও এবার রেকর্ড গড়েছে রেমিট্যান্স। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। ওই মাসে এসেছে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার, যা একটি মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। ঈদুল ফিতরের পরের মাস এপ্রিলেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। ওই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মার্চ ও এপ্রিলের রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিকতা রয়েছে মে মাসেও। মে মাসে প্রথম ৭ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্সপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন সৌদি আরবের প্রবাসীরা। এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ইতালি, ওমান, সিঙ্গাপুর এবং কাতারের নাম। এই দেশগুলো থেকে নিয়মিতভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠানো হচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের রেমিট্যান্স প্রণোদনা, ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহ এবং প্রবাসীদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধিই এই সাফল্যের প্রধান চালিকাশক্তি বলে মনে করছেন তারা।

১৩ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশে ‘রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন রেকর্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে রেমিটেন্স সংক্রান্ত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। ভিসা জটিলতায় উন্নত চিকিৎসাপ্রত্যাশীদের অনেকেই এখন ভারতের বিকল্প হিসেবে অন্য দেশে ছুটছেন। ভারত ছাড়া চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। ওই সব দেশে চিকিৎসা খরচ কিছুটা বেশি। এজন্য তাদের বেশি পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে চিকিৎসা খরচ পাঠানোর সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, এখন থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ পাঠানো যাবে। তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে আরও বেশি ডলারের পাঠাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। 

দেশের অর্থনীতিতে এখন এক অস্থিতিশীল ও সংকট বিরাজমান। এই সময়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স আসার সংবাদ নিঃসন্দেহে আশাপ্রদ। দেশের অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে তুলতে রেমিট্যান্স পাঠানোর এই আগ্রহ ধরে রাখার বিকল্প নেই। কারণ এটা অর্থনীতির বিরাট এক শক্তি। এই শক্তির সঠিক ব্যবহারই নিরাপদ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে ওঠার সহায়ক। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ, হাসপাতাল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও এ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশ দৈনন্দিন খাতে খরচ হওয়ায় পরিবারগুলোর দরিদ্রতা দূর হচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিকালে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রবাসী আয়ের ব্যাপক ভূমিকার কথা। আমরা মনে করি, প্রবাসীদের যত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে, দেশে তত রেমিট্যান্স আসার পথ প্রশস্ত হবে। সে ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। 

দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা হয় প্রবাসী আয়কে। অধিক বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনের আশায় এ দেশের মানুষ অন্য দেশে পাড়ি জমায়। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এসব প্রবাসী যোদ্ধার অনেকেই যখন দেশে ফেরেন, তখন তাদের প্রতি সঠিক সম্মান ও মানবিক আচরণ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে অর্থ দেশে পাঠাচ্ছে তাদের প্রতি এই আচরণ কাম্য হতে পারে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি অনুধাবন করছেন আশা করি। প্রবাসীদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো। এ ব্যাপারে প্রবাসীদের উত্সাহ, উদ্দীপনা ও নিরাপত্তার বিষয়টি দূতাবাসগুলো বিবেচনা করতে পারে। আমরা মনে করি, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোয় প্রবাসীদের আরও উত্সাহিত করতে হবে। দেশের স্বার্থে প্রবাসীদের সব সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত জরুরি। যেকোনো মূল্যে রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা