× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পর্যবেক্ষণ

আন্দোলন, কর্মসূচি ও জনদুর্ভোগ : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ১৬:১৯ পিএম

ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান

ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান

আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রকৃতি বদলে গেছে। বদলে গেছে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বেছে নেওয়া পথও। মানুষ শৃঙ্খলার ওপরে জায়গা দিচ্ছে সহিংসতাকে। এই উপায় ক্রমে জনজীবনকেও করছে দুর্বিষহ। রাস্তা অবরোধ থেকে শুরু করে হরতাল পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে চরম বিঘ্ন ঘটায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক ও অ-রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর রাস্তাঘাট দখল করে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে, যা নাগরিকদের জীবনযাপনে গভীর প্রভাব ফেলছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো প্রায়শই এই মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে হরতাল, অবরোধ, মিছিল এবং রাস্তা অবরোধ- এ ধরনের কর্মসূচিগুলো জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে।

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়গুলোতে রাস্তা বন্ধ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আকার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধরনের কর্মসূচি যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য তাদের অবস্থান প্রদর্শনের উপায়, সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য এটি জীবনযাপনে বাধা তৈরি করে।

এমনিতেই রাজধানীর যানজট যেন একটি চিরস্থায়ী সমস্যা। এই শহরের যাতায়াতে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। এর মাঝে যখন কোনো গোষ্ঠী বা সংগঠন তাদের দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় অবরোধ করে, তখন পুরো শহরের জীবনযাত্রা যেন থমকে যায়। প্রশ্ন হলো, এই পদ্ধতিতে আদৌ কী দাবি আদায় হয়, নাকি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে?

এ কথা সত্য যে, সড়ক বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করা কিংবা দাবিদাওয়া জানানোর রেওয়াজ দেশে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। মূলত রাজনৈতিক দলগুলোই এ কাজের প্রদর্শক। যে নাগরিকদের অধিকার আদায়ের কথা বলে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়, তাদের ভোগান্তি, দুর্ভোগ আর অসুবিধার বিষয়গুলো রাজনৈতিক নেতারা কোনো সময়ই আমলে নেন না। সমাজের অন্য অংশের লোকেরাও তাদের দাবি আদায়ে একই পথ অবলম্বন করেন। যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দাবি-দাওয়া থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই দাবি-দাওয়া জানানোর রীতিসিদ্ধ পথও আছে। সেটা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ও আইনসম্মত উপায়ে। কিন্তু বাস্তবে আমরা এর উল্টো চর্চাটাই দেখছি। এ প্রবণতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যম হিসাবে আলোচনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিগত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও পরিষ্কার জানিয়েছেন সব দাবি-দাওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে। এতে অন্তত জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটবে না, বিঘ্নিত হবে না নিরাপত্তা। কিন্তু  প্রধান উপদেষ্টার এ আহ্বান বাস্তবে পরিণত হয়নি। 

সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে নগরবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য অহেতুক সড়ক অবরোধ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়, প্রতিবাদ কর্মসূচি ইত্যাদি নামে রাজধানীতে সম্প্রতি যখন-তখন সড়ক অবরোধের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও অফিসগামী যাত্রীগণ নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে আরও বলা হয়, বিদেশগামী যাত্রী ও জরুরি প্রয়োজনে অসুস্থ রোগী পরিবহনে সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক ব্যাঘাত। যানজট কমানোর জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে। কিন্তু কারণে-অকারণে রাস্তা অবরোধ করার মতো ঘটনায় ব্যাপক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাগত গোষ্ঠীও তাদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তাঘাট অবরোধ করে প্রতিবাদ জানানো বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার দাবিতে কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রায় ৩ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। একই সময়ে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (এমএটিএস) ছাত্ররা শাহবাগ চত্বরে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় অবরোধ করে রেখেছিল, যেখানে তাদের চার দফা দাবির মধ্যে ছিল দশম গ্রেডে খালি পদ পূরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। প্রাথমিকভাবে দাবিদাওয়াভিত্তিক কর্মসূচিগুলো দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানানো বা ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই রাস্তায় নেমে দ্রুত সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।

এই ধরনের রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ফলে সাধারণ জনগণকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ঢাকার মতো এমন জনবহুল শহরে, একটি এলাকার অবরোধ সহজেই সমগ্র শহরে যানজটের সৃষ্টি করে। কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ এলাকায় অবরোধের ফলে ফার্মগেট, বাংলামোটর, পান্থপথ এবং আশপাশের এলাকায় চরম যানজট তৈরি করে।

অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে হাঁটাপথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। পরিবহন সংকটের কারণে সকাল বেলায় অফিসে যাওয়ার সময় যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। এমনকি বিক্ষোভকারীরা চলে যাওয়ার পরেও, অফিস থেকে ফেরার সময় যাত্রীদের চাপে যানজট বহু ঘণ্টা ধরে স্থায়ী রূপ লাভ করে।

প্রতিবাদ করা গণতান্ত্রিক অধিকার কিন্তু এই অধিকার প্রয়োগের সময় জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকারও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। বিশেষ করে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে, যেখানে এক প্রান্তের ঘটনা সহজেই অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে প্রতিবাদের আয়োজন ও রূপরেখা প্রণয়নের সময় এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার।

বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় সহিংসতার ঘটনাও জনজীবনকে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার তাগিদে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অনেক সময় আন্দোলনকারী কিংবা কর্মসূচি পালনকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয়। এই ধরনের সহিংসতা শুধু যানবাহন ও সম্পত্তির ক্ষতি করে না, এটি জনমানসে ভয় ও আতঙ্কও ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে অনেক মানুষ বাইরে বের হওয়া এড়িয়ে চলেন, যা শহরের সামগ্রিক গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে।

শুক্রবার-শনিবার বা অন্য ছুটির দিনগুলোতেও শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, বা গুলিস্তানে সীমাহীন যানজট ও অশান্ত পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার রক্ষা করার জন্য প্রতিবাদের বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন করা প্রয়োজন।

রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন অবশ্যই জনসমর্থন প্রাপ্তির জন্য প্রতিবাদ করবে, কিন্তু এটি এমনভাবে করা উচিত, যাতে জনজীবনে যথাসম্ভব কম বিঘ্ন ঘটে। এর জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। 

প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান ও সময় বরাদ্দ করা, যেখানে তারা তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারে। যেমন- বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি রাস্তায় না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থানে করা যেতে পারে, যা জনদুর্ভোগ অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।

দ্বিতীয়ত, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের বিকল্প পদ্ধতি, যেমন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান, ডিজিটাল প্রতিবাদ ইত্যাদি উৎসাহিত করা যেতে পারে। সব ছোট বিষয়ের জন্য আন্দোলনে না নেমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আগে সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা উচিত।

তৃতীয়ত, রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক, ন্যায্য কর্মসূচির সময় সরকার ও প্রশাসনের দ্বারা যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য বিকল্প রুট ও পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

সর্বোপরি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা বাড়লে রাস্তায় নামার প্রয়োজন কমে যাবে। শুধু রাজনৈতিক সহনশীলতা নয়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও সাধারণ জনগণকে আরও বেশি সহনশীল আচরণই পারে দেশকে আরও সামনের দিকে আগিয়ে নিতে।

রাজনৈতিক কর্মসূচি ও জনদুর্ভোগ দুটি পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়, যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক সমাজে প্রতিবাদের অধিকার অবশ্যই সংরক্ষিত থাকা উচিত। কিন্তু এটি এমনভাবে প্রয়োগ করা উচিত, যাতে সাধারণ নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘিত না হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দল, সরকার, প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজকে একত্রিত হয়ে এমন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, যাতে রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের পাশাপাশি জনজীবনের স্বাভাবিকতাও বজায় থাকে।

শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। যদি এই আন্দোলনগুলো নিজেই জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে তার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। সুতরাং আমাদের সবার দায়িত্ব একটি সুষম ও সমন্বিত পদ্ধতি খুঁজে বের করা, যেখানে গণতান্ত্রিক অধিকার ও জনকল্যাণ দুটিই সমানভাবে গুরুত্ব পাবে।

আমার কথা হচ্ছে, যে কোন রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকদের সবচেয়ে বড় চাওয়া হলো- নাগরিক সুরক্ষার অধিকার। রাষ্ট্র নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে সঠিক আইন প্রণয়ন করে ও যথাযথভাবে তা প্রয়োগ করে- এটাই স্বাভাবিক। একইভাবে নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে- রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত আইনকে যথাযথভাবে সন্মান করা, মেনে চলা। যারা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত আইন মেনে চলেন তাদের সুনাগরিক বলা হয়। এটা দেশপ্রেমেরও পরিচায়ক। তাই সমাজে আমরা সবাই সুনাগরিক হতে চাই। আমি নাগরিক অধিকার যেমনভাবে সুরক্ষিত চাই- তেমনি আচার-আচরণ ও কর্মের মধ্য দিয়ে অন্যের নাগরিক অধিকারকে সন্মান জানাতে চাই। দেখা দরকার কোনভাবেই যেন কারও অধিকার ক্ষুণ্ন না করি- এটা সুনাগরিকের কর্তব্য। তাই যে কোন দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রেও সুনাগরিকের পরিচয় দেওয়া জরুরি। 

  • অধ্যাপক ও পরিচালক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা