× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জনস্রোতের বার্তাটি যেন গণতন্ত্রের পুনরুজীবনের

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫ ১৬:৩৯ পিএম

জনস্রোতের বার্তাটি যেন গণতন্ত্রের পুনরুজীবনের

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম এক জনপ্রিয় নেতা। আপসহীন নেতার অভিধায় ‘ভূষিত’। গণমানুষের কাছে তিনি প্রকৃত অর্থে আদর্শের বাতিঘর। মঙ্গলবার উন্নত চিকিৎসা জন্য দীর্ঘ চার মাস লন্ডনে অবস্থান শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার এই প্রত্যাবর্তনকে দেশবাসী দেখছে গণতন্ত্রের পুনরুজীবনের প্রতীক হিসেবে। এদিন ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশানে তার বাসভবন পর্যন্ত তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। লাখো মানুষ তাকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করেছে। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেরই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। প্রত্যেকেই দেশের গণতন্ত্রকামী গর্বিত নাগরিক। সবাই বেগম জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের আগামী দিনের ত্রাণকর্তা হিসেবে। আসলে মানুষকে আকৃষ্ট করার এক অনন্য ক্ষমতা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। দেশের মানুষ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য সব সময় তার অবস্থান অনড়। সেটা তিনি বারবার জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে প্রমাণ দিয়েছেন। তাইতো ৭ মে দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম ছিল তার অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তন নিয়ে। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রধান শিরোনাম ছিল ‘দেশে ফিরলেন গণতন্ত্রের বাতিঘর’। প্রতিবেদনে তার ফিরে আসার বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসেছিলেন এক প্রতিকূল বাস্তবতায়। গৃহিণী থাকাবস্থায় তিনি জাতির ক্লান্তিকালে ভূমিকা রাখেন। সেই ১৯৮৩ সাল থেকে তার দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে কখনই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তার রাজনীতি শুরু হয়েছিল সহানুভূতি দিয়ে। সহজ-সরল মনোভাব, মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং দেশপ্রেম তাকে জনগণের সম্মান ও শ্রদ্ধার জায়গায় নিয়ে যায়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বিএনপির যখন দুর্দিন, তখন ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তিনি দলের হাল ধরেন। বলা চলে বেগম জিয়া একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি তার সংগ্রামী জীবনে সবকিছু অর্জন করেছেন ত্যাগের মাধ্যমে। তিনি বাংলাদেশে ত্যাগের রাজনীতির প্রতীক। তিনি ১৯৮৬ সালে প্রহসনের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে রাজনীতিতে সবার জনপ্রিয়তা পান আপসহীনতার জন্য। এক ধরনের স্রোতের বিপক্ষে থেকে তিনি এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। সে কারণে ১৯৯১ সালে জনগণ তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আবার একইভাবে দেখা যায়, ২০০৭ সালে এক-এগারোর ভয়ংকর সেই ষড়যন্ত্রের সময়ও বেগম খালেদা জিয়া আপস করেননি। নথিপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেসময় সবচেয়ে নির্যাতিত ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হয়ে সংসদে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখেন। এভাবে প্রায় ৪৪ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিকে তিনি নিজের করে নিয়েছেন। তার চিন্তা, তৎপরতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা সিদ্ধান্তহীনতা ১৮ কোটি মানুষকে প্রভাবিত করেছে।

বিগত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বড় লক্ষ্যবস্তু ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। যার মূল লক্ষ্য ছিল তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশত্যাগের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো প্রস্তাবই গ্রহণ করেননি তিনি। ফলে পরিকল্পিত কারাবরণই যেন হয়ে ওঠে তার নিয়তি। প্রায় তিন বছর কারাগারে কাটানোর পর ২০২১ সালের মার্চে করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে গৃহবন্দির আদলে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়। সেসময় শারীরিক নানা জটিলতা এবং চিকিৎসাজনিত সীমাবদ্ধতা তাকে মানসিকভাবে বিপন্ন করে তুলে। চিকিৎসকের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তাকে দেশেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়েছে। ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতির নির্দেশে তিনি মুক্তি পান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার সাজা বাতিল হয় এবং উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি খালাস পান। তারপর উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী। এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, দীর্ঘদিন দেশে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলমান থাকা এবং বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকা, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিসহ নানা কারণে দলের রাজনীতিতে এক ধরনের নেতৃত্ব শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এবার খালেদা জিয়া ফিরে আসায় সেই নেতৃত্বের শূন্যতার অবসান হচ্ছে আশা করা যায়। তার সক্রিয় উপস্থিতি দলের ঐক্য ও গতি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন অনেকে। আমরা মনে করি, তার নেতৃত্বই আগামী দিনের নির্বাচনী রোডম্যাপসহ বিরোধী দলগুলোর ঐক্যের বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। 

বেগম জিয়ার এ প্রত্যাবর্তন সবার জন্যই এক অনন্য শিক্ষা। গত ১৭ বছরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনিসহ বিএনপি তীব্র অত্যাচার-নির্যাতন, জুলুম-নিপীড়নের শিকার হয়েছে। কিন্তু এতসব কিছুর পরও দলটি ধৈর্যহারা হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার সেই ধৈর্যের বর্তমান অবস্থান দেখলেই সত্যটা অনুধাবন করা যায়। তিনি নীরবে থেকেছেন, নিভৃতে থেকেছেন। তার এ নীরবতা, আপসহীনতা, তার সাহস এবং অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শক্তিই মানুষের হৃদয় আপ্লুত করেছে। শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন তাকে। তাইতো তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্যের প্রতীক। বেগম জিয়ার আগমন এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এটা স্পষ্ট যে, জনগণ গণতন্ত্র চায়, জনগণ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে জনগণের একজন আদর্শ নেতাকে দেখতে চায়। বেগম জিয়াই সেই আদর্শের বাতিঘর। দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত তাকিয়ে আছে যার দিকে। সবার জন্য, আগামীর বাংলাদেশের জন্য, এ ভালোবাসার জনস্রোতের বার্তাটি সত্যিই অনুধাবনযোগ্য।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা