× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংস্কার বাস্তবায়নেই আস্থা ফিরুক স্বাস্থ্য খাতে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫ ১৬:২৪ পিএম

সংস্কার বাস্তবায়নেই আস্থা ফিরুক স্বাস্থ্য খাতে

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে শতভাগ বিনামূল্যে প্রদানের প্রস্তাব করেছে ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন’। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। উল্লেখ্য, গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করে। তার মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাতীয় অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খানকে। ১২ সদস্যের এই কমিশন সাড়ে ৫ মাস কাজ করার পর এই প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা বৃদ্ধি, রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব করেছে। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে। রয়েছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস চালু, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, চিকিৎসকদের জন্য ওষুধ কোম্পানির উপহারে নিষেধাজ্ঞা, সরকারি হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া, মেডিকেল পুলিশ গঠন, জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের মতো একগুচ্ছ সুপারিশ। কমিশন বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের দাম নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন, সহযোগী স্বাস্থ্য পেশাজীবী আইন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন নতুনভাবে প্রণয়নেরও প্রস্তাব দিয়েছে। এই সুপারিশ/প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনসহ জনগণের দোরগোড়ায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। প্রতিবেদনকে ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা। তিনি স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা নিরসনে যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ‍্য তা দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

৬ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশে ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে বিনামূল্যে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কমিশনের সদস্যরা ৫১টি বৈঠক এবং চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও ঢাকায় ৩২টি পরামর্শ সভা করেছেন। এ ছাড়া পরিসংখ্যান বিভাগের মাধ্যমে ৮ হাজার ২৫৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মতামত নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৯৭ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়া প্রয়োজন; ওষুধের মূল্য, রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার মূল্য ও ডাক্তারের পরামর্শ ফি বা অস্ত্রোপচারের ফি নির্দিষ্ট করার পক্ষে মত দিয়েছেন যথাক্রমে ৯৭, ৯৬, ও ৯৫ ভাগ উত্তরদাতা। জানা গেছে, জনমত জরিপে শহর অঞ্চলের ওয়ার্ডগুলোতে গ্রামীণ ইউনিয়ন পর্যায়ের মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ ভাগ উত্তরদাতা। চিকিৎসা, স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম তথা জনস্বাস্থ্য সেবা পৃথক অবকাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত, এ বিষয়ে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়েছেন ৭২ ভাগ উত্তরদাতা। সহায়ক পদে কর্মরতদের বদলির পক্ষে মোট দিয়েছেন ৭৬ ভাগ উত্তরদাতা। ৬৮ ভাগ উত্তরদাতা এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া অন্য কারও প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের বেশিরভাগের দায়িত্ব থাকা উচিত সরকারেরÑ এই মত ৯২ ভাগ উত্তর প্রদানকারীর। স্বাস্থ্যহানিকর খাদ্য, পানীয় ও ভোগ্যপণ্যের ওপর উচ্চহারে কর প্রয়োগ করা উচিতÑ এ বিষয়ে একমত ৭৯ ভাগ উত্তরদাতা। স্বাস্থ্যবীমা গ্রহণে আগ্রহী ৭১ ভাগ উত্তরদাতা এবং স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালিত একই ধরনের সেবাক্রম একীভূত করা উচিত বলে মনে করেন ৬৭ ভাগ উত্তরদাতা। জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা তদারকি করবে। কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জবাবদিহিতার আওতাভুক্ত থাকবে এবং ১৭টি বিভাগের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দিন দিন যেন এই অধিকারটি সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা এখনও ব্যয়বহুল ও সাধ্যের বাইরে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যয়ের অভাবে দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন না। দেশের ৫৮ শতাংশ মানুষ চিকিৎসাসেবা পেতে ধারদেনা করেন। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে ৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য থেকে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছেন। তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় ওষুধের পেছনে। রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় তো আছেই। পরিসংখ্যান আরও বলছে, দেশে চিকিৎসার পেছনে মানুষের যে খরচ তার ৬৯ শতাংশই ব্যক্তি নিজে বহন করেন। এভাবে প্রতিবছর স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে গিয়ে ৮৬ লাখেরও বেশি মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছেন। এই পরিসংখ্যানের কিছু বাস্তবতার চিত্র সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও উপস্থাপিত হয়েছে। 

এ কথা সত্য যে, দেশের চিকিৎসা খাত নিয়ে মানুষের আস্থাহীনতা দীর্ঘদিনের। সে কারণে অনেকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ আস্থা না পেয়ে ঢাকায় আসছেন। সবখানেই একটা আস্থাহীনতা কাজ করছে। তাই স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সরকারকে আরও গভীরভাবে ভাবতেই হবে। এই ভাবনাটা যেন উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করে হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এখনও সেভাবে ভাবতে পারছি না। তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা সেবার মান, ভালো চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় মেশিন বা যন্ত্রপাতি ঠিকভাবে দেওয়া গেলে তৃণমূলে মানুষের আস্থা চলে আসবে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কমিশন গঠনের মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণসহ বেশকিছু জরুরি উদ্যোগে নিতে যাচ্ছে, যাতে স্বাস্থ্য খাতে মানুষের আস্থা ফিরে আসে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কথায় আস্থা রেখে বলতে চাই, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আলোকে স্বাস্থ্য খাতে সত্যিকারের যুগান্তকারী পরিবর্তন জরুরি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা