× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রজন্মের ভাবনা

ভাষার বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ রাজবংশী

মো. তাহমিদ রহমান

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫ ১৬:৩১ পিএম

ভাষার বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ রাজবংশী

হবার পারোং শুকান গাছ, পাত-পুতারি নাই/এই দেহাডাত কত পখিক দিছুং একদিন ঠাঁই/কত লোকের মাথার উপর ছায়া হয়ে ছিনু/কত জনের হাপোনিক্কাশ বুকোত টানি নিনু/পাত-পুতারি, ছাল্টা-শিপা সগায় নেগায় নেগায়/ঠলঠলিয়া নাগে শ্যাষে মোকে রুগী বানায়/এলা না হয় ফুল ফুটে না– বাসনা ছড়াং না/ফল ধরে না ডালে ডালে পাতারিও নড়াং না/যেলা ছিল দিবার মতন সবে দিসুং তোমাক/তোমার সুখে খুশি হয়া ছিট্টি দিসুং জোনাক/নিছাল্টিয়া হইসুং এলা– কাহ না আসেন গোর/জিউ থাকিতে মরা ভাবেন! সব দোষ কি মোর?

পঙ্‌ক্তিগুলো রাজবংশী ভাষায় লেখা যেখানে একজন পরিবারের অশীতিপর কর্তার হৃদয়ের হাহাকার ফুটে উঠেছে। আজকের আলোচনার সঙ্গে উপর্যুক্ত কবিতাটি প্রাসঙ্গিক তাই সেটা দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম। বাংলাদেশ যেন আঞ্চলিক ভাষার সমৃদ্ধ ভান্ডার। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আগমনের কারণে আঞ্চলিক ভাষা অনেক সমৃদ্ধি লাভ করেছে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সুপ্রাচীনকাল থেকে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠী রাজবংশী। তাদের স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। বস্তুত উন্নততর ভাব ও চিন্তা প্রকাশের জন্যই তারা রাজবংশী ভাষা ব্যবহার করে। রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার মানুষ যে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে সেটাই মূলত রাজবংশী ভাষা। এটি মূলত ইন্দো-আর্য পরিবারভুক্ত ভাষা। বৃহত্তর রংপুর জনপদের পাশাপাশি ভারতের মেঘালয়, ত্ৰিপুরা এবং সম্বলপুর (ওড়িশা), উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং দার্জিলিংয়ের তরাই অঞ্চল, বিহারের কাটিহার, পূর্ণিয়া এবং কিষানগঞ্জ জেলার কিছু অঞ্চল, নেপালের মোরং এবং ঝাপা জেলা, ভুটানের কিছু অঞ্চলের মানুষ এ রাজবংশী ভাষায় কথা বলে। পাশাপাশি অবস্থিত চারটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ডে এ ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ২ কোটির অধিক। ভাষা হচ্ছে মানুষের এমন এক অনন্য সুলভ বৈশিষ্ট্য যা অন্য প্রাণী থেকে মানুষকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। রাজবংশী ভাষারও আছে সুপ্রাচীন সমৃদ্ধ ইতিহাস। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে লোকগণনার প্রাক্কালে কলকাতাকেন্দ্রিক বাঙালিরা এ অঞ্চলের মানুষের ওপর প্রমিত বাংলা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে এ জনগোষ্ঠীর বিদ্বজনেরা ‘দেশী মানসির দেশী ভাষা’ প্রত্যয় ধারণ করে বিদ্রোহ করে। রাজবংশী ভাষার ইতিহাস দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যময়। এটি মূলত কামতাপুর রাজ্যের অধিবাসীদের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল যা সময়ের পরিক্রমায় বর্তমান রূপ লাভ করেছে। ড. রামেশ্বরের মতে বাংলা ভাষার প্রধান পাঁচটি আঞ্চলিক বা উপভাষার মধ্যে রাজবংশী অন্যতম। রাজবংশী ভাষায় বাংলা ক্রিয়াপদে ও বিশেষ্যপদের শেষে ও মাঝে ‘ঙ’, ‘ং’ এবং ‘ম’-এর উচ্চারণ ও ব্যবহার লক্ষ করা যায়। রাজবংশী ভাষা তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লাভ করেছে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবহৃত সর্বনামগুলোর দ্বারা। এসব শব্দ রাজবংশীদের কথ্যভাষায় বহুল প্রচলন রয়েছে। রাজবংশী ভাষা যে কত বিচিত্র, সমৃদ্ধ ও ব্যবহার উপযোগী তা টের পাওয়া যায় উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গানে। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাবার ভাত ও মাছ হলেও রাজবংশীদের ধারায় উত্তরাঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে শুঁটকি, শুকাতি, সিদল ভর্তা, মাছ পাতা, লাফা, পাট শাকের প্যালকা ইত্যাদি। রাজবংশী ভাষাসাহিত্যে ভাওয়াইয়া গান ও খ্যাপা গান সমৃদ্ধ স্থান দখল করে আছে। রাজবংশী ভাষার পাশাপাশি কুরুখ ভাষারও সুস্পষ্ট ও গভীরতর প্রভাব রয়েছে পঞ্চগড় জেলার উত্তরাংশের তেঁতুলিয়া অঞ্চলে। ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের পশ্চিমাঞ্চলে যে রাজবংশী ভাষা ব্যবহৃত হয় তার সঙ্গে শত মাইল দূরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর অঞ্চলের ভাষারও ব্যাপক মিল পাওয়া যায়। প্রবহমান কালের বিবর্তনে রাজবংশী ভাষা ও সংস্কৃতি বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সাধারণ জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। রাজবংশী ভাষা শুধু একটি ভাষাগত মাধ্যম নয়, এটি উত্তরবঙ্গের জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সব আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। তা হলেই রাজবংশী ভাষা তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মূল্যবোধ টিকিয়ে রেখে গৌরবময় ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।

  • প্রভাষক, নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা