× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কথায় কথায় খুনের এ ভয়ঙ্কর প্রবণতা কেন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৮ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দেশে খুনসহ নানান ধরনের অপরাধ বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে খুনখারাবি। বেশিরভাগ ঘটনার পেছনে কারণ হিসেবে সামাজিক-পারিবারিক বিরোধ তুলে ধরা হলেও- রয়েছে অর্থ, সম্পত্তি, আধিপত্য বিস্তারের বিষয়গুলোও। প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় এই ধরনের খবর প্রকাশ হচ্ছে। শুক্রবার সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ইমন হোসেনকে তার সহপাঠীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় সহপাঠীরা ইমনের খাতা দেখে লিখতে না দেওয়ায় পরীক্ষার পর ইমনকে প্রথম দফা মারধর করে। পরে হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। দুজন তরুণীকে দেখে হাসাহাসির অভিযোগে ১৯ এপ্রিল খুন হন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। ১৬ এপ্রিল রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় একদল যুবকের হাতে খুন হন বাবা আমজাদ হোসেন। এমন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনখারাবি বিভিন্ন স্থানেই ঘটছে। বাড়ছে নদী, খাল-বিল, মাঠ, ঝোপ-জঙ্গল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনাও। এমনকি পরিবারের সদস্যদের দ্বারাও হত্যাকাণ্ড ঘটছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। পুলিশের অপরাধ পর্যালোচনাবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে প্রতি মাসে গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। গত তিন মাসে দিনে গড়ে ১১ জন খুন হয়েছেন। উদ্বেগের বিষয় হলো, খুনিরা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। সাধারণভাবে এ ধরনের খুনখারাবি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই নির্দেশ করে।

২৮ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘তুচ্ছ ঘটনায় বাড়ছে খুনখারাবি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনে পুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত বছর দেশে ৩ হাজার ৪৪০টি খুনের মামলা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৮৬৭টি খুনের ঘটনায় মামলা হয়। অন্যদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে হত্যা মামলা হয়েছে ১ হাজার ৫৭৩টি। আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খুনের মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৮৩টি। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯১০ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২৯৪, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ এবং মার্চে ৩১৬টি হত্যা মামলা হয়েছে। জানা গেছে, মেট্রোপলিটনসহ ঢাকা বিভাগে হত্যাকাণ্ড সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। এরপর চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, সম্পত্তির লোভ ও সম্পর্কের টানাপড়েনের মতো ঘটনার জের রয়েছে। সমাজ বিশ্লেষকরা এর নেপথ্যে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ কমিয়ে আনতে হলে সবার আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

পরিসংখ্যান মতে, প্রতিদিন গড়ে যে পরিমাণ মানুষ খুন হচ্ছে, তা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্য সত্যিই অকল্পনীয়। বলা হচ্ছে, বিচারহীনতার ধারণা থেকে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে এবং হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছে। 

মানুষ বরাবরই সামাজিকভাবে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অতীতে সমাজের অনেক খুঁটিনাটি ঘটনায় সামাজিকভাবে মীমাংসা হতো। তখন সামাজিক অনুশাসনও ছিল। কিন্তু এখন সামাজিক অনুশাসনগুলো আগের মতো নেই। বেড়েছে সামাজিক অবক্ষয়। অনুশাসনের অভাব আর আইনের শাসন যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় সমাজে অপরাধ ঘটেই চলেছে। উগ্রতা বেড়েছে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে এসেছে। এখন কথায় কথায় মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। কথায় কথায় একে অন্যকে আঘাত করছে। অপরাধের দ্রুত ও যথাযোগ্য শাস্তি না হলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয় এবং সমাজে অপরাধ বেড়ে যায়।

প্রকাশ্যে এসব খুনখারাবি অরাজকতারই প্রকাশ। হত্যার মতো অপরাধ কমিয়ে আনতে হলে সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা চাই সমাজের নিরাপত্তা। একই সঙ্গে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বা থাকবেন, তাদের কর্মকাণ্ড ও আচরণ যেন আইন ও বিধিসম্মত হয়। প্রতিটি ঘটনার দ্রুত তদন্ত হোক এবং অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসুক। অন্যথায় আইনের শাসন ও জবাবদিহি শব্দ দুটি অকার্যকর হয়ে ওঠার সমূহ আশঙ্কা রয়ে যাবে। নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়ে দেশের কোনো মানুষের প্রাণহানি ঘটুক, তা কারও কাম্য নয়। হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর ঘটনার মামলাগুলো বিচারের জন্য পৃথক আদালত গঠন সময়ের দাবি। কেন মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে হত্যার মতো অপরাধে জড়াচ্ছে, সে বিষয়ে গবেষণা হতে পারে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুততর করার উদ্যোগ নিতে হবে। কথায় কথায় খুনের এ ভয়ঙ্কর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে, জনমনে স্বস্তি ফেরাতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা