প্রেক্ষাপট
ফয়েজুর রহমান সৌখিন
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৪ পিএম
একসময় আমাদের দেশে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিস ছিল শহুরে যাতায়াতব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত। অ্যাপের মাধ্যমে নির্ধারিত বাইক রাইডাররা যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন নিরাপদে ও স্বচ্ছ নিয়মে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম।
বর্তমানে অনেক বাইকচালক অ্যাপ ব্যবস্থা উপেক্ষা করে সরাসরি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছেন। যাত্রীদের ডেকে ডেকে দরকষাকষি করে রাইড দিচ্ছেন, যেটা রাইড শেয়ারিং সেবার মূল ধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের পক্ষে রাস্তায় দেখে বোঝা প্রায় অসম্ভব যে কোন বাইকটি ব্যক্তিগত এবং কোনটি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত। এর ফলে নানানরকম নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের জন্য।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, শহরের বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন হাজারো বাইকচালক ঢাকায় ঢুকে পড়ছেন শুধু এ পেশায় কাজ করার জন্য। তাদের অনেকেই রেজিস্ট্রেশনবিহীন এবং সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে অজ্ঞ। একটি বেসরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী, শুধু ঢাকাতেই প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ হাজার বাইক রাইডার রাইড শেয়ারিং পেশায় সক্রিয় রয়েছেন, যাদের একটি বড় অংশ শহরের বাইরের।
বর্তমানে অনেক বাইকচালক অ্যাপ ব্যবস্থা উপেক্ষা করে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী ডেকে তোলেন এবং দরকষাকষির মাধ্যমে রাইড দেন, যা রাইড শেয়ারিংয়ের মূল ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট এবং সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে পড়ছে কোন বাইকটি ব্যক্তিগত আর কোনটি বাণিজ্যিকভাবে চালানো হচ্ছে। এ অস্বচ্ছ পরিস্থিতির একটি মারাত্মক সামাজিক প্রভাব পড়ছে ব্যক্তিগত বাইকারদের ওপর।
অনেক সময় তারা নিজের কাজে বা পরিবার নিয়ে বাইরে বের হলেও রাইডার মনে করে যাত্রীদের প্রশ্নবাণে পড়ছেন। ট্রাফিক পুলিশ, পথচারী বা এমনকি যাত্রীরাও প্রায়ই সন্দেহের চোখে দেখেন, জেরা করেন বা জিজ্ঞেস করছেন যাবেন কি না। এ ধরনের বিব্রতকর অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন সাধারণ বাইকাররা। এ অব্যবস্থাপনার মূল কারণ রাইড শেয়ারিং বাইকের কোনো ইউনিফর্ম বা সুনির্দিষ্ট চিহ্ন না থাকা।
এ বিশৃঙ্খলা রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর উচিত পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত বাইকগুলোর জন্য একটি নির্ধারিত ইউনিফর্ম বা চিহ্ন নির্ধারণ করা। যেমন একটি নির্দিষ্ট রঙের জ্যাকেট, সুনির্দিষ্ট একটি রঙের হেলমেট, কিংবা বাইকের স্টিকার। এর ফলে সহজেই একজন যাত্রী বুঝতে পারবেন এটি একটি রাইড শেয়ারিং বাইক। যেহেতু তারা নির্ধারিত কোনো ইউনিফর্ম বা পরিচয়পত্র ব্যবহার করেন না, তাই যাত্রীদের জন্য তাদের আলাদা করে চেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউনিফর্ম বা চিহ্ন নির্ধারণ করে দেওয়া হলে যাত্রী এবং ট্রাফিক পুলিশও খালি চোখে রাইড শেয়ারিং বাইক আলাদা করতে পারবেন কোনো বিড়ম্বনা ছাড়াই। নির্ধারিত ইউনিফর্ম না থাকায় অনেক সময় অসাধু উদ্দেশ্যেও কেউ বাইক চালিয়ে যাত্রী বহন করছেন, যেটা বড় ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকি সাধারণ মানুষ বা যাত্রীদের জন্য।
যেভাবে হেলমেট ছাড়া বাইকারদের পেট্রলপাম্পে তেল সরবরাহ করা হয় না, তেমনই যদি ইউনিফর্ম ছাড়া রাইড শেয়ারিং দণ্ডনীয় হয় তাহলে এর শৃঙ্খলা আনা সম্ভব অনেকাংশে। এ ছাড়া এসব রাইডারের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করলে শহরের ভেতরে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা কিছুটা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
রাইড শেয়ারিংয়ে শৃঙ্খলা আনতে এ ধরনের উদ্যোগের সুফল নিতে হলে নিয়মের যথাযথ প্রয়োগ ও সুস্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি।