× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কবে নিশ্চিত হবে শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:১৪ পিএম

কবে নিশ্চিত হবে শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা

শ্রমিক শ্রেণি বরাবরই বঞ্চিত। এ চিত্র কেবল এদেশেই নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশেই বিরাজমান। শ্রম দিয়েও ন্যায্য মজুরির জন্য তাকে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে হয়। নিরলস পরিশ্রম করেও তারা কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজনীয় বা নিরাপদ ভাবতে পারেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে তাদের কর্মজীবন। যেকোনো সময় চাকরিচ্যুত হওয়ার শঙ্কা মাথায় নিয়েই শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। সারা জীবন চাকরি করে জীবনসায়াহ্নে এসে অতি সামান্য পরিমাণ সঞ্চয়ও অনিশ্চিত অনেকের। বহু শ্রমিকের কর্মজীবনের শেষদিনটি যেন শূন্য দিয়েই শেষ হয়। এমন বাস্তবতায় সরকার ন্যাশনাল পেনশন স্কিমের আওতায় শ্রমিকবান্ধব পেনশন স্কিম চালু করার সুপারিশ পেল। ২২ এপ্রিল সরকার গঠিত ‘শ্রম সংস্কার কমিশন’ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সংবাদটি আশাজাগানিয়া। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা শ্রমিকদের জন্য এ পেনশনসুবিধা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। আমরা মনে করি, এ প্রতিবেদন শ্রমিকবঞ্চনার এ দাবি বাস্তবায়নের পথকে সুগম করল।

২৬ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘শ্রমিকবান্ধব পেনশন চালুর সুপারিশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অবসরকালীন ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষা বিষয়ে ন্যাশনাল পেনশন স্কিমের আওতায় ‘সরকার কর্তৃক চাঁদা’ প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিকবান্ধব পেনশন স্কিম চালু করার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড বাধ্যতামূলক রেখে শ্রমিকের জন্য এ ফান্ডে অবদান ঐচ্ছিক হিসেবে রাখার বিধান করা, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ও কেন্দ্রীভূত পেনশন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শ্রমিকদের সহজেই অন্তর্ভুক্তি এবং পেনশন দাবি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা, পেনশন ব্যবস্থাপনা ও আবেদন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে শ্রমিকদের তথ্য আপডেট, পেনশনের চাঁদা জমা এবং দাবি করার প্রক্রিয়া সহজ করা। বলা হয়েছে, পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা মনিটর করার জন্য একটি মনিটরিং ইউনিট গঠন করা এবং অনিয়ম রোধে ত্রিপক্ষীয় নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টিও।

প্রতিবেদনে দেশের সব খাতের শ্রমিকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ অধিকার ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ ২৫টি সুপারিশের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি না দিলে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপদকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করা, স্থায়ী শ্রমিক কমিশন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সুপারিশ রয়েছে। সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি প্রদান, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, কর্মক্ষেত্রে শ্রেণিক্ষমতার সুযোগ নিয়ে ‘তুই-তুমি’ সম্বোধন বন্ধ করা, মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় মজুরি নির্ধারণ, কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, শ্রমিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য শ্রম আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, হয়রানি বন্ধের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রে প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র বা প্রমাণপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। শিল্পাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকায় শ্রমিকদের জন্য কার্ডভিত্তিক রেশন দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। রয়েছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমিক আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের শহীদের স্বীকৃতি প্রদান, মর্যাদাপূর্ণ ন্যূনতম মজুরি ও কমিশন ঘোষণার কথাও। আশার কথা, প্রতিবেদন নিয়ে শ্রম সংস্কার কমিশনকে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। যাতে এ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। কারণ এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকা রয়েছে।

বরাবরের মতো এ কথা সত্য যে, দেশে শ্রম আইন রয়েছে, শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য সরকারের তরফে উদ্যোগও রয়েছে। তার পরও শ্রমিকের নিরাপত্তা আক্ষরিক অর্থেই নিশ্চিত হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হয় না শ্রম আইন। দেখা হয় না শ্রমিকের অধিকার। তাই  আমরা বর্তমান শ্রম সংস্কার কমিশনকে শ্রমসাধ্য, গবেষণালব্ধ এ প্রতিবেদন পেশের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাদের যৌক্তিক সুপারিশসমূহের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। সরকার আগামী মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন করতে চায়। তার আগে প্রয়োজনে একটা শ্রম সম্মেলন আয়োজন করে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকবান্ধব যুগান্তকারী শ্রমনীতি প্রণয়নে সব অংশীজনের ঐকমত্যে উপনীত হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, সরকারের এ প্রচেষ্টা তখনই সার্থক হবে, যখন শ্রমিকদের সব ধরনের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত রাখা যাবে। শ্রমিক বাঁচলেই শিল্প বাঁচবে, আর শিল্প বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আশা করি এ মনোভাব নিয়ে সরকার ও শিল্পমালিকরা কাজ করবেন এবং শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন। আমরা চাই, এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত হোক। তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনাগুলোর অবসান হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা