× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে স্বস্তি ফিরুক কৃষকের

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:১১ পিএম

ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে স্বস্তি ফিরুক কৃষকের

ফসলের মাঠ হাসলেই কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। বিষয়টি পরস্পর পরিপূরক। ভালো ফলন হলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন বাড়ানোয় ভূমিকা রেখেও অনেক সময় কৃষকের মুখে হাসি থাকে না। বলা ভালো, হাসি কেড়ে নেওয়া হয়। পণ্যের ন্যায্য দাম না পেলে এমনটাই হওয়ার কথা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার হাওরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বহু কৃষক ইতোমধ্যে ধান ঘরে তুলেছেন। কিন্তু এবার সোনার ধানে ঘর-আঙিনা আলোকিত হলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি। তাদের মুখে এক ধরনের দুশ্চিন্তা। একদিকে দালাল, ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত দামেও তারা হতাশ। রয়েছে সেচযন্ত্রের জ্বালানি, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়তি সেই সঙ্গে বেড়েছে সার, কীটনাশকসহ শ্রমিকের মজুরি। সব মিলিয়ে ধানের উৎপাদন খরচের সঙ্গে মিলছে না বাজারমূল্য। সরকার গতবারের চেয়ে কেজিতে ৪ টাকা বেশি দাম নির্ধারণ করেছে। তার পরও কৃষকের শঙ্কা ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে।

২৪ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘ধানের বাম্পার ফলনেও স্বস্তিতে নেই কৃষক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্রে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে জানা যায়, এ বছর ২৪ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান ও চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এবারের বোরো মৌসুমে সরকার ধান ও চাল কিনবে সাড়ে ১৭ লাখ টন। এর মধ্যে কৃষকের থেকে ৩৬ টাকা কেজিতে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান এবং মিলারদের থেকে ৪৯ টাকা কেজিতে ১৪ লাখ টন চাল। বলা হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয় যে উৎপাদন খরচ দিয়েছে, তার সঙ্গে লাভ যুক্ত করে এ ধান ও চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে কৃষক চাষাবাদের খরচের দেনা শোধ, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ মেটাতে অনেকে এখনই ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কতিপয় ফড়িয়া ও আড়তদার এ সুযোগ নেওয়ায় কৃষক পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ফড়িয়ারা কৃষকের কাছ থেকে কম মূল্যে ধান সংগ্রহ করে পরে তা সরকারের কাছে বিক্রি করে, তাহলে লাভের গুড় কে খাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ধান কেনার পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ। কারণ অঞ্চলভেদে উৎপাদনের ব্যয় কমবেশি হয়। ধান কেনায় সরকার মিলারনির্ভরশীল না হয়ে কৃষকনির্ভর হওয়া উচিত। অন্যথায় সরকারি সংগ্রহে লাভ হবে মিলারদের।এতে কৃষকই মূলত ঠকবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

মানতেই হবে কৃষক কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করে দামের বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বঞ্চিত হন, এ খবর বেশ পুরোনো। বিক্রির বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যেই কৃষককে সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়। এ কথা সত্য, ধান উৎপাদন খরচ অঞ্চলভেদে পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে বোরো ধান সেচ ও সারের ওপর নির্ভরশীল। যে অঞ্চলে সেচ ও সারের পরিমাণ বেশি সেসব অঞ্চলে উৎপাদন খরচও বেশি বইকি। এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকার ধান সংগ্রহের জন্য যে দাম নির্ধারণ করে সেখানে জমির ভাড়া, কৃষকের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের শ্রমকে সঠিকভাবে বিবেচনায় আনা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসব মূল্য সংযুক্ত করলে সরকারের নির্ধারণ করা দামের চেয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশিই হয়।

আসলে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কৃষকের অনুকূলে একটি সুনিদিষ্ট সরকারি নীতিমালা থাকা দরকার। দেশে কৃষিপণ্য বিপণনের যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে- তার সংস্কার কিংবা প্রয়োজনে পরিবর্তন জরুরি। দেশে এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, যাতে কৃষক সরাসরি ভোক্তার কাছে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেন। এতে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমন উপকৃত হবেন ভোক্তারাও। আগামী দিনে কৃষকের উৎপাদন খরচ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এটি বিবেচনায় রেখে কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কৃষিপ্রধান এ দেশের মোট জনশক্তির অধিকাংশই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থেই কৃষকের কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। সবার খাদ্যের জোগান দিতে কৃষক যেভাবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন, তা স্মরণে রেখে সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসংম্পূর্ণ দেখতে চাইলে কৃষক যেন দুর্দশাগ্রস্ত না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, কৃষক বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। তাই কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো জরুরি। এজন্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে হবে। সেই সঙ্গে চাষের জন্য নিরবচ্ছিন্ন পানির সরবরাহ রাখতে হবে। প্রতি বছর ধানের দাম নির্ধারণ ও কেনার উদ্যোগ যেন সময়োপযোগী হয়, সরকারকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ব্যবসায়ীরা যেন নিজেদের স্বার্থে সিন্ডিকেট তৈরি করে কৃষকের দুর্দশার কারণ না হন, সেজন্য সরকারকে আরও সচেষ্ট থাকবে হবে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হোক, এটাই প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা