× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিক্ষাপ্রশাসন

দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ এবং মূল্যায়ন জরুরি

ড. মাহরুফ চৌধুরী

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৫৪ পিএম

ড. মাহরুফ চৌধুরী

ড. মাহরুফ চৌধুরী

বাংলাদেশে বিদ্যমান শিক্ষা প্রশাসনের ধ্যানধারণা ও অবকাঠামো গড়ে উঠেছে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার থেকে। আঠারো শতকের প্রারম্ভে পশ্চাত্যের ধ্যানধারণায় প্রভাবিত ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর উদ্ভবসহ বঙ্গীয় রেনেসাঁসের উদ্বোধন ও তাঁবেদার জনগোষ্ঠী তৈরির যে শিক্ষা কারখানা ঔপনিবেশিক শাসকশ্রেণি গোড়াপত্তন করেছিল, সেই শিক্ষাব্যবস্থা ও তার প্রশাসনিক কাঠামোই আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে গ্রহণ করেছি। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আমরা ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ে দুবার স্বাধীনতা লাভ করলেও এখন পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রীয় দর্শন, আদর্শ ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে যুগোপযোগী ও জীবনমুখী করে গড়ে তুলতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার এ ব্যর্থতার জন্য আমরা কখনও দায়ী করছি ঔপনিবেশিক শক্তিকে, আবার কোনো কোনো বিষয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলোকে। আমাদের দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন দেশের জন্য একটি বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির ব্যর্থতার দায়ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা বিনির্মাণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের পূর্বশর্ত হিসেবে একটি জীবনমুখী যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা বিনির্মাণে এগিয়ে আসবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা থেকে আমরা শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন নিয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। চিহ্নিত এ সমস্যাগুলো অগ্রাধিকারে ভিত্তিতে বিবেচনা করা দরকার বলে মনে করছি।

এক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থার গতিশীলতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করতে শিক্ষার প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্গঠন অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের সরকারের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোয় শিক্ষা খাতের জন্য একটি মাত্র মন্ত্রণালয়ই যথেষ্ট। বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্বে আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর সাধারণ, মাদ্রাসা, কারিগরি-প্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক এবং অন্যান্য পেশাগত শিক্ষাসহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে কয়েকটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যেমন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নেপ), বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এখানে লক্ষণীয়, এ প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন হলেও এদের কর্মপরিধি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে দুই মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানির মাঝে পড়ে সৃষ্টি হয় নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং পরিলক্ষিত হয় বিভিন্ন কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব।

সরকারের এ দুটি মন্ত্রণালয় একত্র করলে সহজেই নিষ্কৃতি মিলবে নানা জটিলতা ও সমন্বয়হীনতা থেকে। সেটা করার জন্য শিক্ষাকে একটি খাত হিসেবে বিবেচনা করে, সে খাতের মাঝে কয়েকটি উপখাত তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণও অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষা খাতের কেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় সংখ্যাগত দিক থেকে বিশেষ করে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিশ্বের সবচেয়ে বড়। পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও জীবন বাস্তবতায় সব ক্ষমতা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের হাতে না রেখে স্থানীয় ও মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা প্রশাসনের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সময়ে দাবি। লক্ষণীয়, কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি (নিয়োগবাণিজ্য, বদলিবাণিজ্য ও ভর্তিবাণিজ্য), স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, শিক্ষাপরিকল্পনায় কর্তৃত্ববাদী আচরণ আর ঢালাওভাবে দলীয় প্রভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় শিক্ষাব্যবস্থার রাজনীতিকরণের সুযোগ অবারিত করে দিয়েছে। আর মোটা দাগে শিক্ষা প্রশাসনের এ সমস্যাগুলোই হলো বাংলাদেশের শিক্ষার গতিশীলতা ও গুণগত মান উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা।

মাঠপর্যায়ের সমস্যাগুলোর সমাধানে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করা যায়। যেহেতু স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের সমস্যাগুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে অবহিত ও অভিজ্ঞ, সে কারণে তাদের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হবে বেশি বাস্তবসম্মত, কার্যকর এবং প্রাসঙ্গিক। অন্যদিকে সে সিদ্ধান্তগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন অপরিহার্য। শিক্ষাকার্যক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় শিক্ষা খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে। কিন্তু এ দুই মন্ত্রণালয় এবং এদের অধীন অধিদপ্তরগুলো এবং বিভিন্ন সংস্থার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, নীতি ও কৌশলের সামঞ্জস্যহীনতায় তৈরি হয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যা সিদ্বান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া মন্থর করে দেয়। ফলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। মন্ত্রণালয় দুটি ও অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ রেষারেষি বা রশি টানাটানি ধরনের সমস্যাগুলো শুধু নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নই বাধাগ্রস্ত করে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের কাজ কঠিন করে তোলে। এমনকি বাস্তবতা হলো দুই মন্ত্রণালয়ের খবরদারিতে একই প্রতিষ্ঠানের দুটি ইউনিট একত্রে কাজ করতে পারে না। তার উজ্জ্বল উদাহরণ হলো জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সর্বশেষ পাঠ্যক্রম প্রণয়নে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ধারা নিয়ে কাজের সমন্বয় ও সামঞ্জস্যহীনতা। অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা জানেন, এ দুই মন্ত্রণালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কোনো কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ব্যক্তিদের এক টেবিলে নিয়ে আসা কতটা কঠিন।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা অনেক সমস্যা তৈরি করে। চলমান রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে প্রশাসনিক সামঞ্জস্যহীনতা আর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা একটি দুরূহ কাজ। ক্ষমতার এ পার্থক্য যেমন সামঞ্জস্যহীনতা বিস্তারের মাধ্যমে সমন্বয়হীনতার আবহ তৈরি করে, তেমন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পর্কের মাঝেও দূরত্বের সৃষ্টি করে। এ ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা শুধু শিক্ষা কার্যক্রমের বাস্তবায়নেই বাধা দেয় না, বরং শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রচেষ্টাগুলোও স্তব্ধ করে দেয়। এসব সমস্যার সমাধান ছাড়া প্রকৃত অর্থে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করা অসম্ভব।

বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সফলতা অর্জনে প্রশাসনিক স্বৈরাচার নিরোধসহ সব ধরনের স্বৈরাচারী আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে হবে। শিক্ষা প্রশাসনের সরকারি অধিকর্তা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রজান্ত্রের সেবকমাত্র, তারা জনগণের শাসক কিংবা প্রভু নন। কথাটা তাদের প্রায়োগিক অর্থে বিশ্বাসে ও কর্মে প্রতিফলিত করতে হবে। আর যদি তা না করা যায়, তবে ক্ষমতা যাদের কাছে থাকবে, তারা সব সময় হাতে থাকা ছড়িটা রাষ্ট্রের জনগণের মাথার ওপর ঘোরানোর চেষ্টা চালাবে। ফলে সুযোগ পেলে তাদের ভেতরে জন্ম নেবে স্বৈরাচারী মনোভাব যা তাদের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পাবে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের জন্য গণঅভ্যুত্থান-উত্তর যে গণদাবি উঠেছে, তার জন্য শিক্ষা খাতসহ বিভিন্ন খাত-উপখাতে বিরাজমান ছোট ছোট স্বৈরাচারী আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ড হটানো দরকার।

শিক্ষা পরিকল্পনায় প্রশাসনিক উদ্যোগে অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ফলপ্রসূ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নানা স্তরের শিক্ষা পরিকল্পনায় সমন্বয় সাধন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমন তাতে অংশীজনের মতামতের প্রতিফলন থাকা অত্যাবশ্যক। তা না হলে কেন্দ্র থেকে প্রশাসনিকভাবে গৃহীত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে দেখা দেয় নানা সমস্যা। তাই শিক্ষা পরিকল্পনায় মূল অংশীজনদের মতামত ছাড়া কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করা অসম্ভব। অতীতে একদিকে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম প্রণয়নে বিশেষজ্ঞদের চাইতে রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যারা অংশীজন বা সুবিধাভোগী তাদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়নি কিংবা নেওয়া হলেও সেসব নামে মাত্র নেওয়া হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত উপেক্ষা করা হয়েছে।

শিক্ষা পরিকল্পনায় শিক্ষা প্রশাসনের কর্তৃত্ববাদী আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলার প্রচেষ্টা রোধ করা জরুরি। স্বাধীনতা-উত্তর থেকে শিক্ষা পরিকল্পনার বিশেষায়িত বিষয়গুলোয় (শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষায় অর্থায়ন ইত্যাদি) প্রশাসনের অভিভাবকসুলভ আচরণ এবং নীতিমালা তৈরি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার প্রভাব দেখা যায়। এর ফলে শিক্ষা পরিকল্পনায় একপেশে চিন্তাভাবনার প্রতিফলন যেমন দেখা যায়, তেমন মানসম্মত শিক্ষার জন্য উপযুক্ত শিক্ষাক্রম ও তার বাস্তবায়নে ঘাটতিও পরিলক্ষিত হয়। এরই উজ্জ্বল উদাহরণ বিগত সরকারের সময়ে প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রম। উপযোগিতার বিচারে এটা যে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, সেটা শিক্ষা উপদেষ্টা তার প্রথম কর্মদিবসেই ঘোষণা করেন।

শিক্ষা প্রশাসনে যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ এবং মূল্যায়নের ভিত্তিতে কর্মরত কর্মীদের পদায়নের সুযোগ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। বর্তমানে শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চপদগুলোয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বদলি বা পদোন্নতির মাধ্যমে আসা ব্যক্তিরা আসীন হন। তাদের অনেকেরই শিক্ষাব্যবস্থার বিশেষায়িত ও সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা কিংবা স্বচ্ছ ধারণা থাকে না। ফলে সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে তারা প্রায়ই রাষ্ট্রের স্বার্থে নয়, নিজেদের চিন্তাভাবনা বা কোনো বিশেষ মহলের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে কাজ করে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত উন্নয়ন দূরের কথা, তারা তৈরি করেন নানা জটিলতা।

অব্যাহতভাবে শিক্ষা প্রশাসনের প্রতিটি পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির কর্মদক্ষতা মূল্যায়নে কার্যকর কর্মদক্ষতা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে দায়দায়িত্বের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মীদের পেশাগত উন্নয়নের জায়গাগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে। জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রশাসনে পদোন্নতির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে যোগ্যরা উচ্চপদে উন্নীত হয়ে তাদের মেধা ও দক্ষতা সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের সেবার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। শিক্ষকতা কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছাড়া শিক্ষা প্রশাসনে অধিকর্তা বা কর্মকর্তার পদে অধিষ্ঠিত হওয়া ব্যক্তির পক্ষে বাস্তব অনেক বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিফহাল না থাকার ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতার পরিচয় দিতে হয়। তাই অব্যাহত কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন ও দক্ষ শিক্ষকদেরই শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে পদায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষায়িত পরিকল্পনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও পরিকল্পনা প্রণয়নে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে তাদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে কিংবা শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সিদ্ধান্ত নিতে গবেষণা ও দলিল-প্রমাণাদির ওপর ভিত্তি করেই করতে হবে। শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম প্রণয়ন রাষ্ট্রের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এসব পরিকল্পনা তৈরিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রের মূল অংশীজনদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রকৃতপক্ষে চাহিদাভিত্তিক ও সময়োপযোগী শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মতামত ও পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা প্রশাসনকে এ ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা পরিকল্পনায় অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বা বিশেষ হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এ নিবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে, আঠারো শতকের প্রারম্ভে পাশ্চাত্যের ধ্যানধারণায় প্রভাবিত বঙ্গীয় রেনেসাঁসের উদ্বোধন ও তাঁবেদার জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য যে প্রশাসনিক কাঠামো ঔপনিবেশিক শাসকশ্রেণি চালু করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে সেটা বহু আগেই তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য শিক্ষা প্রশাসনের দ্রুত পুনর্গঠন যেমন জরুরি, তেমন যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ সৃষ্টি করে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো এখন সময়ের দাবি। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার আলোচ্য বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার বিনির্মাণে দ্রুত শিক্ষা প্রশাসনে সংস্কার সাধন করবে।

  • ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা