× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আইনের শাসন

ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম

ড. মাহরুফ চৌধুরী

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০২ পিএম

ড. মাহরুফ চৌধুরী

ড. মাহরুফ চৌধুরী

আইনের শাসন এমন এক আদর্শ যেখানে রাষ্ট্রের সব কার্যক্রম, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। কারণ কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এটি একটি সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ, যা ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি নিশ্চিত করে। বিশ্ব ইতিহাসে দেখা যায়, যেসব দেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে, সেসব দেশেই গণতন্ত্রের স্থায়িত্ব, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। ইংল্যান্ডের ম্যাগনা কার্টা (১২১৫) থেকে শুরু করে ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯) পর্যন্ত ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে আইনের শাসনের জন্য জনগণের লড়াই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশসহ যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নতি, নাগরিক স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আইনের শাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এটি কেবল সাংবিধানিক স্বীকৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলে না; আইনের শাসনের কার্যকর বাস্তবায়নই একটি রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশের এক ভয়াবহ বাস্তবতা, যা সমাজের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, সামরিক অভ্যুত্থান, দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়ার একটি অপ্রত্যাশিত ধারা গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর যথাযথ বিচার না হওয়ায় এ দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। পরে সামরিক শাসনামলে বিচারহীনতার এ প্রবণতা আরও সুসংহত হয়, যা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি উৎসাহিত করেছে। একটি রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার ব্যবস্থা যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন সমাজে অন্যায় ও অবিচারের স্বাভাবিকীকরণ ঘটে। রোমান দার্শনিক সিসেরো (১০৬-৪৩ খ্রিস্টপূর্ব) বলেছিলেন, ‘যেখানে ন্যায়বিচার নেই, সেখানে রাষ্ট্রের অস্তিত্বও দুর্বল হয়ে পড়ে।’ স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশে সংঘটিত প্রতিটি খুন, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের ক্ষেত্রে কঠোর ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করা উচিত ছিল, যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা করতে পারিনি। এ বিচারহীনতার ফলে অপরাধীরা আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে এবং সাধারণ নাগরিকের মধ্যে আইনশৃঙ্খলার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তারই অনিবার্য প্রতিফল হিসেবে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়তে থাকে, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইনের শাসনের অনুপস্থিতির প্রভাব বহুমাত্রিক ও সুদূরপ্রসারী। এটি শুধু একটি রাষ্ট্রীয় সমস্যা নয়; বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস উস্কে দেয়। যখন অপরাধীরা শাস্তি থেকে রেহাই পায়, তখন তা সমাজে আইনের প্রতি ভয় ও শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক কাঠামো দুর্বল করে। একটি রাষ্ট্র তখনই কার্যকর থাকে, যখন তার নাগরিক আইনের আশ্রয়ে নিরাপত্তা পায় এবং রাষ্ট্র ও সমাজের সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। 

রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তির উপায়গুলো এখানে তুলে ধরা হলো। ১. বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যক। বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তির উপায় সুস্পষ্ট ও বাস্তবভিত্তিক হতে হবে। এ থেকে উত্তরণের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। দার্শনিক মন্টেস্কিয়োর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ তত্ত্ব অনুযায়ী, বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন বিভাগ থেকে স্বাধীন রাখতে হবে, যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়। প্রথমত. বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা অপরিহার্য। যখন বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতিস্বীকার করে, তখন তা প্রকৃত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়। বিচারক নিয়োগ, পদোন্নতি ও অবসরের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নীতি গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর বিচারব্যবস্থা উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে, যেখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কঠোর সাংবিধানিক কাঠামো ও নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়। 

২. জাতিধর্মবর্ণগোত্র-নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো সবার জন্য আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করা। একটি রাষ্ট্র তখনই গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক হয়ে ওঠে, যখন আইনের চোখে সব নাগরিক সমান হয় তথা ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী-সাধারণ নির্বিশেষে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সমাজের ধনী, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা প্রায়ই আইন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, যেখানে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তার ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে বলেছিলেন, ‘প্রকৃত ন্যায়বিচার তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে, যখন দুর্বল ও শক্তিশালীরা সমান আইনি সুরক্ষা পাবে।’ বাংলাদেশসহ অনেক দেশে দেখা যায়, প্রভাবশালীরা নানা উপায়ে বিচারপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করে পার পেয়ে যায়, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা। একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে আইনের প্রয়োগে শ্রেণিগত বৈষম্য দূর করতে হবে। 

৩. রাষ্ট্র ও সমাজের সব ক্ষেত্রে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে প্রশাসনিক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের (১৭২৪-১৮০৪) মতে ‘সুশাসন তখনই কার্যকর হয়, যখন নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিজেদের কাজকে সর্বজনগ্রাহ্য নৈতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে পরিচালিত করেন।’ এজন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে হলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে রাজনৈতিক বা ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ ঠেকানো যায়। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, যাতে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত হয়। 

৪. অনানুষ্ঠানিক, উপানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষার নানা উপধারার মাধ্যমে মানবাধিকার ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার করা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার অপরিহার্য। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ তখনই গড়ে ওঠে, যখন নাগরিক মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও আইন সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং নিজেদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ধারণা এখনও পর্যাপ্তভাবে বিকশিত হয়নি, যার ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। প্রথমত. নাগরিকের মাঝে আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা অনেক সময় মানুষকে অন্যায় মেনে নিতে বাধ্য করে বা তারা ন্যায়বিচারের জন্য সঠিক পথে দাবি তুলতে পারে না। পূর্বোক্ত ‘সামাজিক চুক্তি’ তত্ত্ব অনুযায়ী, রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে একটি নৈতিক সম্পর্ক থাকতে হবে, যেখানে নাগরিক নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকবে এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। এজন্য গণমাধ্যম, সামাজিক প্রচারাভিযান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রচলিত আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। দ্বিতীয়ত. শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে মানবাধিকার ও নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি অত্যাবশ্যক। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও আইন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারবে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক ও আইন সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘নাগরিকত্বের শিক্ষা’ (সিটিজেনশিপ এডুকেশন) চালু করা হয়েছে, যা বাংলাদেশেও চালু করা যেতে পারে। 

৫. নাগরিক অধিকার, দায়দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো নাগরিকের মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। যদি একটি দেশের নাগরিক নিজেদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন না হয়, তবে তাদের জীবন ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই জনশিক্ষার মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকের মাঝে গণসচেতনতা তৈরি করা জরুরি। প্রকৃতপক্ষে ন্যায়বিচার তখনই কার্যকর হয়, যখন রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়েই নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ অনেক সময় আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে না বা ন্যায়বিচারের জন্য সঠিক পথে দাবি তুলতে ব্যর্থ হয়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা, তবে নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রের প্রতি তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকা। গণমাধ্যম, সামাজিক প্রচারাভিযান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এ সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। 

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো সমাজই শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি দুর্বল করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে। ইতিহাস আমাদের স্পষ্টভাবে শেখায়, যখন আইন উপেক্ষিত হয়, তখন সমাজে অন্যায়, অনাচার, অবিচার ও অব্যবস্থাপনা বিস্তার লাভ করে। রোমান সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে ফরাসি বিপ্লব পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে অন্যায়, দুর্নীতি ও বিচারহীনতাই সমাজকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি আজকের বিশ্বে উন্নত দেশগুলোর সফলতার পেছনে রয়েছে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা। তাই বাংলাদেশের টেকসই শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ শুধু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নিরাপদ হতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি গড়ে তোলা। এটি শুধু সরকার বা বিচার বিভাগের একক দায়িত্ব নয়; নাগরিক সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষকেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘আইন যদি শুধু কাগজে কলমে থাকে কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগ না হয়, তবে সেটি আইন হিসেবে গণ্য হতে পারে না।’ সর্বোপরি একটি সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য আমাদের সবাইকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হতে হবে। কারণ আমাদের দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে কখনই শান্তি আসবে না, আর শান্তি ছাড়া দেশের প্রকৃত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি তথা কোনো টেকসই উন্নয়নই সম্ভব নয়। ইতিহাস সাক্ষী, ন্যায়ের চর্চা ছাড়া কোনো জাতির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। তাই মানবাধিকার ও আইনের শাসন সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি এবং শিক্ষার মাধ্যমে এ মূল্যবোধ জাগ্রত করাই হবে সুস্থ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

  • ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা