× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অর্থনীতি

ক্ষুদ্র শিল্পায়নেও রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ

মো. ইলিয়াস হোসেন

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫ ১১:৪০ এএম

মো. ইলিয়াস হোসেন

মো. ইলিয়াস হোসেন

‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’Ñ এ প্রবাদটি শাব্দিক অর্থে হয়তো বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে এর মধ্যে একটি অনুপ্রেরণার ইঙ্গিত রয়েছে। আমাদের চারপাশে অনেক অজানা প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সম্ভাবনাময় বস্তু আছে, যার মূল্য আমরা বুঝি না বা জানতে পারি না। যেমন ধরুন ব্রিটিশ যুগ থেকেই পাট ছিল বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল, যা সোনালি আঁশ নামে পরিচিত। রেডিমেড গার্মেন্টসের আগে এ পাট বিদেশে রপ্তানি করে আমরা সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছি। কিন্তু এ পাটেরই একটা বড় অংশ হলো পাটশলা বা পাটকাঠি; যা গ্রামের মানুষ তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জ্বালানি হিসেবে অথবা বসবাসের জন্য ঘরের বেড়ার কাজে ব্যবহার করত; যা এখনও প্রচলিত আছে। 

এ পাটশলাই বর্তমানে রপ্তানিযোগ্য একটি পণ্যের অন্যতম মূল্যবান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাটশলা পুড়িয়ে চারকোল তৈরি করে তা বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে; যা মূল্যবান কার্বন পেপার তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে খুলনা, ফরিদপুর, লালমনিরহাট এবং আরও দুয়েকটি জেলায় চারকোল তৈরির জন্য কয়েকটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। বিষয়টি একবার ভাবুন তো! যে জিনিসটা আমরা অনায়াসে পুড়িয়ে অথবা অদরকারি কাজে ব্যবহার করতাম, তা আজ মূল্যবান কাঁচামাল হিসেবে বিদেশে রপ্তানি করছি।

আজ আমার মূল উপস্থাপনা তেমনি একটি অতি মূল্যবান নিত্যপ্রয়োজনীয় ফলের গাছ নিয়ে। কলা খেতে আমরা সবাই পছন্দ করি। সকালের নাশতায়, স্কুল/অফিসের টিফিনে, দুপুরের লাঞ্চে, অতিথি আপ্যায়নে এমনকি রোগীর পথ্য হিসেবেও এর ব্যবহার সর্বজনস্বীকৃত। কলা কেবল ফল হিসেবে নয়, কাঁচা কলা সবজি হিসেবে অতি সুস্বাদু; যা সর্বৈব ব্যবহার হয়ে আসছে। আগের দিনে গ্রামগঞ্জে বাড়ির আনাচ-কানাচে কলাগাছ রোপণ করা হতো। কিন্তু কলার ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দশক ধরে এর পরিকল্পিত ও বাণিজ্যিক চাষাবাদ চলছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কলার বাজারজাতকরণও সহজ হয়েছে। ফলে গ্রামগঞ্জে পরিকল্পিতভাবে এর চাষাবাদ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার একর জমিতে কলার চাষ হচ্ছে। বছরে ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন কলা উৎপাদন হয়; যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে একটা বিষয় অনেকেই হয়তো জানেন না যে, কলাগাছ কেবল একবারই ফল দেয়। কলা পরিণত হলে তা নামিয়ে গাছটি কেটে ফেলা হয়। এ গাছ মাঝে মাঝে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয় অথবা তা দূরে ফেলে দেওয়া হয় যা মাটিতে পচে পরিবেশ নষ্ট করে। গ্রামে বর্ষাকালে মাঝে মাঝে ছেলেরা নৌকার বিকল্প হিসেবে ভেলা তৈরি করে এবাড়ি-ওবাড়ি চলাচল করে। একসময় তা পচে পরিবেশ দূষিত করে। গলিত এ কলাগাছ থেকে ভয়ানক মিথেন গ্যাস এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়; যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু এ কলাগাছ থেকেই তৈরি করা সম্ভব নানা ধরনের পণ্য যা দ্বারা কৃষক পর্যায়ে স্বাবলম্বী হওয়াসহ উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। যে কলাগাছকে আমরা অবহেলা করে ফেলে দিই, তা থেকে পাটের বিকল্প হিসেবে আঁশ (ফাইবার) বের করা যায় যা অবিকল পাটের আঁশের মতোই। এ ছাড়া কলাগাছ থেকে হাতে তৈরি কাগজ (হ্যান্ড মেড পেপার), ব্যানানা প্যাপিরাস এবং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন আসবাপত্র ইত্যাদি তৈরিতে করা যায়।

আমাদের দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ কলাগাছ কেটে ফেলতে হয় তার সংখ্যা কম করে হলেও ৪০ থেকে ৪৫ মিলিয়ন। এ গাছ ফেলে না দিয়ে তা থেকে যদি আঁশ বের করা হয় তাতে প্রতিটি গাছ থেকে ন্যূনতম ২ কেজি আঁশ পাওয়া সম্ভব। এ আঁশের ন্যূনতম মূল্য প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ১০০ টাকা হলে প্রতি বছর ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। আর এ আঁশ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী বানিয়ে বাজারজাত করলে এতে আরও আর্থিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। কলাগাছ দিয়ে শুধু আঁশ নয়, কাগজও তৈরি করা যায়। তা ছাড়া এটা থেকে বিনিয়ার্ড বা পারটেক্স বোর্ডের টপ/কভার তৈরি করা যায় যা আধুনিক বাসাবাড়ির অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় ব্যবহার হয়ে থাকে। কলাগাছে আঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাপড়, ক্যাপ/হ্যাট, ব্যাগ, মানিব্যাগ, শাড়ি, সাঁতারের পোশাক এমনকি রেইনকোটও বানানো যায়। এ ধরনের কাপড় ওয়াটারপ্রুফ এবং স্বাস্থ্যসম্মত। এতে ক্যানসার রোগীদের উপকার হয়। এ কাপড় শরীরের ঘাম শুষে নেয়। কলাগাছের আঁশ দিয়ে কাপড় বুননের শিল্প ইতোমধ্যে পাশের দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় চালু হয়েছে এবং এটা ব্যাপক জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে মিসরীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক রামি আজার প্রথমবারের মতো কলাগাছের আঁশ থেকে কাগজ বানানোর উপায় উদ্ভাবন করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। পরে তিনি ‘প্যাপিরাস অস্ট্রেলিয়া লি. নামক কোম্পানির ব্যানারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাগাছ থেকে কাগজ, প্যাকেজিং, ফার্নিচারসহ বাসার অভ্যন্তরীণ আসবাবপত্র বানানোর প্রকল্পে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। 

বাংলাদেশে যে পরিমাণ কলার চাষ হয় তাতে কলাগাছ থেকে অনায়াসে বিনা পুঁজিতে এ ধরনের পণ্য উৎপাদন করা অতি সহজ। তবে বিষয়টি যেহেতু সর্বজনের কাছে তেমন পরিচিত নয়, এজন্য প্রাথমিকভাবে অনেকেই হয়তো এগিয়ে আসবে না। তার জন্য দরকার গণসচেতনতা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাজমাধ্যম এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং সব এনজিও একযোগে কাজ করে এ বিষয়ে সামাজিক ও গণসচেতনতা তৈরি করতে পারলে অবশ্যই এ ব্যাপারে সাফল্য আসবে। কলাগাছ থেকে আঁশ বের করতে যে মেশিনের প্রয়োজন তার দাম খুবই কম, এটা আখ থেকে রস বের করার মেশিনের মতোই। তাই গ্রামগঞ্জে যেখানে কলার বাগান আছে সেসব স্থানে কৃষক পর্যায়ে এ ধরনের মেশিন বসিয়ে গ্রামের মহিলাসহ অবসরে থাকা বৃহৎ জনগোষ্ঠী এ কাজে যোগ দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে নিতে পারে। এ আঁশ থেকে স্থানীয় পর্যায়ে রশি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। আর বেশি আঁশ হলে তা হ্যান্ডলুম বা তাঁতে ব্যবহার করে কাপড় তৈরি করতে পারে। কলাগাছের থোড় থেকে ভিনিয়ার এবং কাগজ বানানো যাবে। এ ক্ষেত্রে কিছু প্রযুক্তি প্রয়োজন যা পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পায়নের মাধ্যমে এর বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ তৈরি করা যাবে।

আলোচিত ধারণাটি আমাদের অনেকের কাছেই নতুন, তবে ব্যাপক সম্ভাবনাময়ী। এমন একটি ব্যবস্থা যা সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং তার সুফল তৃণমূল কৃষক থেকে শুরু করে শিল্পপতিরাও পেতে পারেন। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আশা করব, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সমাজের সব সচেতন নাগরিক এগিয়ে আসবেন এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে অবদান রাখার সুযোগ গ্রহণ করবেন।

  • প্রকৌশলী ও কলাম লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা