× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

আলু সংরক্ষণে সময়োচিত উদ্যোগ চাই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ১১:০০ এএম

প্রবা গ্রাফিক্স

প্রবা গ্রাফিক্স

চাহিদা বিবেচনায় আলু দেশের প্রধানতম কৃষিপণ্য। এবার সারা দেশে আলুর বাম্পার ফলনে চাষিরা ব্যাপক খুশি। প্রথম দিকে অবশ্য আলুর দাম নিয়ে কৃষকের নানা অভিযোগ, অসন্তোষ থাকলেও এখন বাজার খানিকটা কৃষকের অনুকূলে। কিন্তু নতুন করে বিপত্তি বেধেছে আলু সংরক্ষণব্যবস্থা নিয়ে। প্রয়োজনীয় হিমাগারের অভাবে আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না চাষিরা। এতে চরম বিপাকে তারা। আলু নিয়ে অপেক্ষার পরও হিমাগারে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন না। কারও কারও বুকিং কার্ড থাকলেও আলু নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে কৃষককে। অভিযোগ উঠেছে, হিমাগারের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় দালাল ও ফড়িয়াদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসায়ীরা অগ্রিম আলু সংরক্ষণের কার্ড হাতিয়ে নিয়েছেন। জাতির দুর্ভাগ্য, দেশের প্রায় সব ভোগ্যপণ্যেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। উৎপাদিত পণ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও মজুতদার। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আলুসহ কৃষিপণ্য সংরক্ষণে নেই হিমাগার। ফলে চাষিরা সিন্ডিকেটের কাছে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন।

১৫ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে কৃষকরা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে হিমাগারে আলু রাখতে না পারার সংবাদটি উঠে আসে। জানা গেছে, সেখানে হিমাগারে রাখার জন্য শত শত আলুর ট্রাক অপেক্ষমাণ। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেরপুরে ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু কৃষক আরও বেশি জমিতে আলু চাষ করায় ৫ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ফলে ৯৩ হাজার ৮১৬ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবার ফলন হয়েছে ৯৫ হাজার ৭০৬ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৮৯০ টন বেশি।’ কৃষকের অভিযোগ, পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তারা আলু হিমাগারে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন না। শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু হয়েছে। বেশি আলু হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণের চাপ বেড়েছে।’ তিনি কৃষককে স্বল্পমেয়াদে দু-তিন মাস বাড়িতে আলু সংরক্ষণের পরামর্শ দেন। কৃষক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামানের বক্তব্য, ‘শেরপুর আলু চাষের জন্য উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু হিমাগারের অভাবে আলু রক্ষা করা যাচ্ছে না। আমরা এখানে নতুন হিমাগার চাই।’

এ চিত্র শুধু শেরপুর জেলারই নয়, দেশের সকল কৃষিপ্রধান অঞ্চলের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা ৮০ লাখ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জোগান বেশি থাকায় বাজারদর প্রথমে নিম্নমুখী ছিল। সে কারণেই সাধারণত কৃষক আলু সংরক্ষণে আগ্রহী হন। তাদের লক্ষ্য ছিল জোগান কমে এলে মূল্য বাড়বে। এমনিতেই এবার হিমাগার মালিকরা কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছেন। ফলে সংরক্ষণের জন্য তারা বাড়তি টাকা গুনতেও প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু সেখানেও তারা ব্যর্থ, সুযোগ পাচ্ছেন না সংরক্ষণের।

কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী, হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি বা নির্ধারণ করতে হবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পরামর্শক্রমে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে। কিন্তু এবার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলন করে। ৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে আলু সংরক্ষণে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। সেখানে হিমাগারে সংরক্ষণে কেজিপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৮ টাকা, যা আগে ছিল ৫ টাকা। শুধু তাই নয়, প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি আলু রাখার বাধ্যবাধকতাও আরোপ করা হয়। আগে কৃষক ৭০ কেজির বস্তা ৩৫০ টাকায় কোল্ড স্টোরেজে রাখতেন। উল্লেখ্য, গত নভেম্বরের শেষ দিকে পুরোনো আলুর দাম কেজিতে ৭৫ টাকা ছড়িয়ে যায়, যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর বাজারে আলুর কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ৫০ টাকার মধ্যে। আলুর বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনেও দায় ছিল সরবরাহসংকট ও হিমাগার পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি। সে সময় অনেকেই আলুর বাজারদরে অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করেছেন। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো সরকারের সংশ্লিষ্টদের নজরে থাকা জরুরি ছিল। 

আমরা মনে করি, প্রান্তিক কৃষকের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ সুবিধা দেওয়া উচিত। সরকার হিমাগারগুলোর একটা নির্দিষ্ট জায়গা প্রান্তিক কৃষকের জন্য সংরক্ষিত রাখার আইন করতে পারে, যাতে কৃষক কম খরচে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে কৃষকের সংরক্ষণ ব্যয়ও কমে আসবে। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয় বা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সরাসরি কৃষকের কাছে কয়েক লাখ টন আলু কিনে মজুদ করতে পারে, যাতে পরবর্তী সময়ে দাম বাড়লে তা বাজারে সরবরাহ করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়। সেই সঙ্গে উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানির জন্য সরকার সহজ শর্তে নীতিমালা ঘোষণা করতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্র তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আলু যেহেতু পচনশীল পণ্য তাই সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় হিমাগার তৈরি করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। আলু সংরক্ষণের ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা