× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মানবতার ফেরিওয়ালা

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার আদ্যোপান্ত

শাফাত রেজা অন্তু

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ১০:৫২ এএম

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫ ১০:৫৩ এএম

প্রবা গ্রাফিক্স

প্রবা গ্রাফিক্স

এত অল্প সময়ে মানুষের মনে স্থান করে নেওয়া যেকোনো উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। কিন্তু সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা সেই অচলায়তন ভেঙে ইতোমধ্যে একজন জনবান্ধব, হৃদয়বান, সমাজহিতৈষী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেই শুধু থেমে থাকেননি, এরই মধ্যে তিনি সমগ্র নারায়ণগঞ্জের গ্রাম-গ্রামান্তরে চষে বেড়াচ্ছেন। যেখানেই সমস্যা সেখানেই তিনি থমকে দাঁড়িয়ে তার আয়ত্তাধীন সব সমস্যাকে অতিক্রমের চেষ্টা ও নির্দেশনা প্রদানের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্রুততর সময়ে কার্যকরী সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই হলো তারুণ্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত, সংস্কৃতিমনা, ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অধিকর্তাÑ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

উল্লেখ্য, মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম হচ্ছেন সবার বড়। ছাত্রজীবন থেকেই মেধার পরিচয় দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে রাশিয়ান ভাষায় ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৃত্তির আওতায় আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কৃতিত্বের সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। 

২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে লালমনিরহাট জেলায় যোগদান করেন। জেলার এনডিসি হিসেবে দীর্ঘ সময় লালমনিরহাট ও পরবর্তীতে নীলফামারী জেলায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী ও মৌলভীবাজারের সদর উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে এবং নোয়াখালী জেলার চাটখিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মদক্ষতার পুরস্কার হিসেবে কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন ২০১৫ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত হন। পরবর্তীতে ১ বছরের জন্য শিক্ষা ছুটিতে যুক্তরাজ্যে গমন করেন। সেখান থেকে ফিরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন পরিসরে কাজ করেন। উক্ত সময়ে তিনি একাধিকবার তার দক্ষতার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুরস্কৃত হন। মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ১৯৭৯ সালের অক্টোবরে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা অগ্রণী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার মোহাম্মদ চাঁদ মিঞা, ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ভূয়াপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। মা জাহানারা সুলতানা ছিলেন আদর্শ সন্তান তৈরির অন্যতম কারিগর। 

চাকরিজীবনে দেশে ও বিদেশে বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কর্মদক্ষতাকে শানিত করার সুযোগ লাভ করেন। 

তিনি ২০০৮ সালে তিনি হেমা জারিনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এই ছাত্রী স্বামীর ক্যারিয়ার গঠনে অনেক ত্যাগ স্বীকার এবং সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন। তাদের একমাত্র কন্যা জুনায়রা সাজ ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সে ২০২৪ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত ৫৪ তম আন্তর্জাতিক শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক  পেয়েছে। 

জাহিদুল ইসলাম মিঞা ব্যক্তিগত জীবনে খুবই মিশুক এবং বন্ধুবৎসল। তিনি অবসর সময়ে বই পড়তে পছন্দ করেন, তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি তার পছন্দের একটি বিষয়। মার্জিত রুচির মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বিশ্বাস করেন একজন সরকারি কর্মকর্তার কর্মকালীন সময়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত। 

চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৯ জানুয়ারি তারিখে মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের দুদিনের মাথায় নারায়ণগঞ্জবাসীর নজর কাড়েন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক কলেজছাত্রের পাশে দ্রুততার সঙ্গে দাঁড়িয়ে। আর এখানেই তিনি তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেন। একজন মহৎপ্রাণ জেলা প্রশাসক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন।

মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ডিসি জাহিদুল ইসলাম দুস্থদের বাড়িতে বাড়িতে গভীর রাতে নিজে গিয়ে উপহার দেন শীতের কম্বল। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় চার হাজার পেঁয়াজ চাষির পাশে দাঁড়ান অতি দ্রুততার সঙ্গে। রাজবাড়ী জেলা কারাগারে বন্দিদের পুনর্বাসনের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন জনবান্ধব এই কর্মকর্তা। দক্ষ, বিনয়ী, সদালাপী জেলা প্রশাসক হিসেবে ইতোমধ্যে মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জের মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের জন্য ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন

তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে তিনি জেলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের মধ্যে হুইল চেয়ার ও শিক্ষা সহায়তা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলার ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাঝে হুইল চেয়ার, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে একটি ইলেকট্রিক চেয়ার, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে একটি কৃত্রিম বেস (পায়ের ডিভাইস), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ২ জন ছাত্রকে ওয়াকিং স্ট্যান্ড এবং নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন কিডস ক্যাম্পাস স্কুল অ্যান্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও সুইড বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক স্কুলের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মধ্যে শিক্ষা সহায়তা উপকরণ বিতরণ করা হয়।

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্য নয়, জেলার কৃষিজমি রক্ষায়ও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশে খাদ্য ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে জেলার সব দুইফসলি জমিকে তিনফসলি জমিতে রূপান্তরিত করতে কৃষক সমাবেশ করেন জেলা প্রশাসক। স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের সরাবদী গ্রামে তিনি এ সমাবেশ করেন।

প্রতিবন্ধী ও কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রচেষ্টার পরে তিনি কারাগারে বন্দিদের অংশগ্রহণে জেল প্রিমিয়ার লিগ উদ্বোধন করেন। তারই নির্দেশনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে কারাবন্দিদের অংশগ্রহণে ‘নারায়ণগঞ্জ জেল প্রিমিয়ার লিগ’ শুরু হয়।

কারাবন্দিদের সুস্থ বিনোদনের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখে ১,২৪৪ জন বন্দির মাঝে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। চার দেয়ালের বন্দিজীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও যেন মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার স্বাদ অনুভব করেন, যা এক বিরল ঘটনা। নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ১১৯৭ পুরুষ এবং ৪৭ মহিলা বন্দি। 

নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি যানজট নিরসনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। রেলযাত্রা নিরাপদ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন আরেকটা কমিউটার ট্রেন চালুরও উদ্যোগ নিয়েছেন, যেটা আগামী ২৬ মার্চ থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলবে। একইভাবে স্থানীয় নাগরিকদের দাবির মুখে জেলায় সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

ইতঃপূর্বে আগে ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর জাহিদুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। রাজবাড়ী জেলায় যোগ দিয়েই দ্রুতই জনবান্ধব ডিসি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন জাহিদুল ইসলাম। ডিসি জাহিদুল ইসলাম হয়ে উঠেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বজন এবং আহতদের একান্ত আস্থার ঠিকানা। তাদের সবার শেষ ভরসার স্থল হয়ে উঠেছিলেন এই জেলা প্রশাসক। রাজবাড়ী জেলায় জুলাই শহীদদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন যোগ দেওয়ার দুদিনের মাথায়। আহতদের তার অফিসে ডেকেও তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেন।

মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ডিসি জাহিদুল ইসলাম দুস্থদের বাড়িতে বাড়িতে গভীর রাতে নিজে গিয়ে উপহার দেন শীতের কম্বল। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় চার হাজার পেঁয়াজ চাষির পাশে দাঁড়ান অতি দ্রুততার সঙ্গে। রাজবাড়ী জেলা কারাগারে বন্দিদের পুনর্বাসনের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন জনবান্ধব এই কর্মকর্তা। দক্ষ, বিনয়ী, সদালাপী জেলা প্রশাসক হিসেবে ইতোমধ্যে মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জের মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের জন্য ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা অচিরেই দৃশ্যমান হবে।

এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জকে একটি আধুনিক, মনোরম, পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিবান্ধব মানবতার ফেরিওয়ালা খ্যাত সময়ের আলোচিত এ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জীবনমান সচল রাখতে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, যার মধ্যে অসহায় সম্বলহীন নারীদেরকে অর্থ সাহায্য ছাড়াও কর্মসংস্থানেরও উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এ সুবাদেই নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছ থেকে পেয়ে গেছেন ভালোবাসার অবিস্মরণীয় উপমাবিজড়িত মানবতার ফেরিওয়ালার খ্যাতি, যা তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত ও আবেগাপ্লুত করেছে।

  • গণমাধ্যমকর্মী
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা