× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান চাই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৫ ১৩:০৪ পিএম

পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান চাই

দেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে ঘিরে যে অসন্তোষ চলছে- তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মাঝে কিছুদিন শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধ থাকলেও এর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। ১৩ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘গাজীপুর-আশুলিয়ায় ফের সড়ক অবরোধ যানজট ভোগান্তি’ শিরোনামে প্রতিবেদনে আবারও একই চিত্র উঠে এসেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু, শ্রমিক নির্যাতন, শ্রমিক ছাঁটাই, বকেয়া বেতন, ওভারটাইমের টাকা ও ঈদ বোনাসের দাবিতে দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ সমাবেশ করে কয়েকটি পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা। এসময় পুলিশ-শ্রমিক চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীসহ সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উল্লেখ্য, দেশের বড় পোশাক কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে ঢাকা-গাজীপুর ও আশপাশের এলাকায়। চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন ইপিজেট অঞ্চলে কিছু তৈরি পোশাকশিল্প গড়ে উঠেছে। অতীতে তৈরি পোশাকশিল্পে অস্থিরতার বহুমাত্রিক প্রভাব দৃশ্যমান ছিল, কিন্তু এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এ শিল্পে দফায় দফায় শ্রমিক অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়েছে; যা উদ্বিগ্ন হওয়ার মতোই। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ইতোমধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারাও। সামগ্রিকভাবে বলা চলে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে দেশিবিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। এ সংকট দ্রুত সমাধান করা সম্ভব না হলে দেশের পুরো পোশাকশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

আমাদের দেশে তৈরি পোশাকশিল্প সত্তরের দশকের শেষার্ধ থেকে মূলত রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। শুরুতেই তৈরি পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। একই সঙ্গে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আয় বৃদ্ধি পায় ও জীবনযাত্রায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পোশাক খাত। বর্তমানে এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বলা চলে, আমাদের দেশের অর্থনীতি যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার অন্যতম হলো পোশাকশিল্প। বিজিএমইএর হিসাবমতে গত বছর এই খাত থেকে এসেছে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। যেখানে ১৯৮১-৮২ সালে রপ্তানি আয়ে এ খাতের অবদান ছিল মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু তৈরি পোশাকশিল্প থেকে রপ্তানির পরিমাণ ৪২ দশমিক ৬১৩ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাড়াও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ২২ লাখ নারী শ্রমিকসহ ১ কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থানে জীবনযাত্রায় লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে।

অপ্রিয় হলেও স্বীকার করতে হবে, রপ্তানিমুখী শিল্পের সবচেয়ে লাভজনক ক্ষেত্র পোশাকশিল্প খাতের শ্রমিকের মজুরিই সবচেয়ে কম। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সরকার পোশাকশিল্পের জন্য ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম এবং ঘরভাড়া বেড়েছে। এ অবস্থায় মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ও নিরাপদ কারখানার জন্য শ্রমিকদের দাবি দীর্ঘদিনের। শ্রম আইন, ২০০৬-এ তিন বছর পর মজুরি সংশোধনের সুযোগ রাখা আছে। আমরা মনে করি, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল রেখে সামঞ্জ্যস্যপূর্ণ ন্যূনতম মজুরি চাওয়া তাই অযৌক্তিক নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতির স্থায়ী নিরসনে জাতীয় স্বার্থে সরকারের তরফে এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার টেবিলে এর স্থায়ী সমাধান খোঁজার বিকল্প নেই।

গত আন্দোলনের সময় দেশের শিল্প সেক্টরে ব্যাপক নাশকতা হয়েছে। সে সময় তৈরি পোশাকশিল্প খাতও বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেসব ক্ষতি কাটিয়ে পোশাকশিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা দেখছি, দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের স্বপ্নপূরণে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তখন রপ্তানি খাতে আবারও দেখা দিয়েছে অস্থিতিশীলতা। পোশাকশিল্পের স্থিতিশীলতার স্বার্থেই শ্রমিকদের ন্যূনতম মানবিক জীবনের নিশ্চয়তা দরকার। শ্রমিকদের মানবেতর জীবন পরিস্থিতি বিদেশি ক্রেতাদেশগুলোকে বিমুখ করে তুলতে পারে। শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি হলে দক্ষতা ও স্থিতিশীলতা দুটোই বাড়ে। মনে রাখা দরকার, শিল্পের উৎপাদন শক্তির মূল অনুষঙ্গ শ্রমিক। তাদের অসন্তুষ্ট রেখে উৎপাদনের চাকা যেমন গতিশীল করা সম্ভব নয়। আবার শ্রমিকদেরও শিল্প উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় আন্তরিক না থাকার অবকাশ নেই। কাজেই সার্বিক বিবেচনায় সরকার, মালিক, শ্রমিক এই ত্রিপক্ষীয় সমঝোতাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ কাম্য নয়। এ শিল্পে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয়, তার সবই সরকারকে করতে হবে। আমরা পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান চাই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা