× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাশিয়া-ইউক্রেন

যুদ্ধের পরিণতি এবং ন্যাটোর ভবিষ্যৎ

নিরঞ্জন রায়

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫ ১১:৪১ এএম

নিরঞ্জন রায়

নিরঞ্জন রায়

সম্প্রতি বিশ্ব রাজনীতিতে যে বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে, তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যকার উত্তপ্ত বাক্য বিনিয়ম। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির আলোচনার উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা যেভাবে প্রকাশ্যে এসেছে এবং নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করে জেলেনস্কি যেভাবে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেছেন, তা এক কথায় নজিরবিহীন।

এ রকম উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ইউক্রেন যত না চিন্তিত হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তিত হয়েছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতারা। এ রকম আলোচনা দেখে ইউরোপীয় জোটের নেতারা ভাবতে শুরু করেছেন যে, ট্রাম্প কি সত্যি ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি অবজ্ঞা করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কেননা সেই বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তুমি এই যুদ্ধে রাশিয়ার কাছে হেরে যাবে এবং তোমার হাতে কোনো কার্ডও নেই।’ এমনকি অনেকেরই আশঙ্কা যে, ট্রাম্পের এ রকম আচরণের নেতিবাচক প্রভাব কি তাহলে ন্যাটোর ভবিষ্যতের ওপর পড়বে কি না। 

আজ থেকে ৭৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল এই ন্যাটো, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী এক নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা। ন্যাটো প্রতিষ্ঠার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ এই সামরিক জোটের যেকোনো সদস্য আক্রান্ত হলে তাকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক শক্তি এমনকি পারমাণবিক অস্ত্রও ব্যবহার করতে পারবে। সেই ন্যাটোর অস্তিত্ব এখন প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যকার উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর তো ন্যাটোর সাবেক কমান্ডার, নেভির অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিরাল জেমস স্টাভরিডিস আক্ষেপ করে বলেই ফেলেছেন যে- আমরা হয়তো ন্যাটোর শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। 

কয়েক দিন আগে ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া, দি ট্রুথ-এ লিখেছেন যে, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী সমস্যা। অবৈধ অভিবাসীদের কারণে সৃষ্ট সামাজিক অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং মাদক সমস্যা; যা আমাদের দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।’ এই প্রসঙ্গে তিনি ইউরোপের প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করেছেন যে, এসব সমস্যার সমাধান না করতে পারার কারণে ইউরোপ আজ শেষ হয়ে যেতে বসেছে। এদিকে ট্রাম্পের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং হোয়াইট হাউসে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ইলন মাস্ক তার সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে এক পোস্ট দিয়ে ন্যাটো ও জাতিসংঘ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জোটের নেতারা তাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর ওপর যথেষ্ট নির্ভর করলেও তারা প্রকাশ্যে ন্যাটো সম্পর্কে ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের এমন ধারণা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করছে না। কিন্তু অনেকেই তাদের নিরাপত্তার জন্য বিকল্প পন্থার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। 

এ ঘটনার পরপরই ইউরোপীয় জোটের নেতারা ছুটে গেছেন লন্ডনে ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য। সেই আলোচনায় ইউরোপের নেতারা এটাও বলেছেন যে, সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির মধ্যকার যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, তা ট্র্যান্স-আটলান্টিক সামরিক জোটে কোনো রকম প্রভাব ফেলবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিশ্বস্ত অংশীদার নয়।’ এদিকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য একযোগে কাজ করছে সহমতের ভিত্তিতে একটি জোট ঘটনের উদ্দেশ্যে, যাদের কাজ হবে ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা। ইউরোপের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের সামরিক শক্তি সেই মানের না, যা দিয়ে ইউরোপের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। ফলে তাদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র এবং মিলিটারি কৌশল ও ইন্টেলিজেন্সের ওপর নির্ভর করতে হবে। 

সংবাদমাধ্যম থেকে যতটুকু জানা গেছে, তাতে ইউরোপের জোটবদ্ধভাবে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজটি মোটেই সহজ নয়। কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো সামরিক জোট নয়। ইউরোপের নিরাপত্তার মূল কৌশল প্রধানত ন্যাটোর মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের যে সামরিক সরঞ্জাম এবং মিলিটারি ইউনিট রয়েছে, তা মূলত ন্যাটোর কমান্ড কাঠামো এবং যুদ্ধ পরিকল্পনারই অংশ। ন্যাটোর বাইরে ইউরোপের অঞ্চলভিত্তিক কোনো কমান্ড স্থাপনা নেই, যেমনটা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের, যা তারা কয়েক যুগ ধরে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া নিজেদের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার কথা চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু এখানে আছে দ্বিমুখী জটিলতা। প্রথমত, পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে ন্যাটোকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়। অর্থাৎ ন্যাটোকে কার্যকর রাখতে হবে এবং শক্তিশালী করতে হবে। আর এটা করতে গেলে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোর ন্যাটোর বার্ষিক অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। অন্তত শর্ত অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের জিডিপির ২% পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে, যা ইউরোপের অনেক সদস্য দেশ করছে না বলে ট্রাম্প প্রশাসনের বড় অভিযোগ। পক্ষান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি তাদের নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায়, তাহলে সেখানেও তাদের পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, একই সঙ্গে ন্যাটোতে এবং নিজস্ব সামরিক খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির সক্ষমতা ইউরোপের অনেক দেশেরই নেই। 

অপরপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বাদ দিয়ে নিজেই চলার চেষ্টা করে তাহলে সেটাও খুব একটা সহজ হবে না। কেননা তেমনটা করতে গেলে অনেক ধরনের জটিলতা দেখা দেবে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র যদি একা চলার নীতি গ্রহণ করে, তাহলে ন্যাটো সামরিক শক্তিতে দুর্বল হতে বাধ্য। আর ন্যাটো দুর্বল হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। কেননা, বিগত চার দশকে বিশ্বে অনেক নতুন সামরিক শক্তির উথান ঘটেছে। রাশিয়া তো আছেই, সেই সঙ্গে চীনও সামরিক শক্তিতে প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি চলে এসেছে এবং একাই যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাখে। ভারতও এখন চতুর্থ সামরিক শক্তির দেশ। এ রকম যেকোনো দুটো দেশের জোটভুক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে বড় ধরনের বিপদে ফেলে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ইউরোপের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশিই থাকবে। এসব কারণে আমেরিকা ও ইউরোপ উভয়ের স্বার্থেই এই ন্যাটো সামরিক জোটকে কার্যকর রাখতে হবে এবং সেই সঙ্গে যথেষ্ট শক্তিশালীও করতে হবে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতৃবৃন্দ এমনকি ট্রাম্প নিজেও বেশ ভালোভাবেই জানেন। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছেÑ রকম বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যেকার মতপার্থক্য এভাবে প্রকাশ্যে আসার কারণ কী হতে পারে। এখানে বিশ্ব রাজনীতির ভিন্ন হিসাব-নিকাশ আছে, যা সেভাবে মিডিয়ায়ও আসছে না এবং আমাদের পক্ষেও বুঝে ওটা সম্ভব হয় না। ট্রাম্প উচ্চহারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তার নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে বলে আসছেন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তা কার্যকর করতে শুরুও করে দিয়েছেন। আর এই উচ্চ শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রথমেই বেছে নিয়েছেন তার মিত্রদেশ ইউরোপ ও কানাডাকে। ট্রাম্পের উচ্চশুল্ক নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যে এক টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এখান থেকে দৃষ্টি ফিরানো বা দৃশ্যপট ভিন্নদিকে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল এবং সেটাই হয়তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা আপাদত করার চেষ্টা করেছেন। এ কারণেই দেখা যায় যে, লন্ডনে ইউরোপের নেতারা যে আলোচনার জন্য মিলিত হয়েছিলেন, সেখানে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ইউরোপের অংশ না হয়েও ছুটে এসেছিলেন। কেননা ট্রাম্পের উচ্চশুল্কের প্রথম শিকার কানাডা। ট্রাম্প-জেলেনস্কির ব্যর্থ এবং উত্তপ্ত আলোচনা পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে ট্রাম্পের উচ্চশুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা। কানাডার ওপর একবার শুল্ক আরোপ করে তো আরেকবার স্থগিত করে। 

সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত ট্রাম্প-জেলেনস্কির মধ্যকার উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, তার প্রভাব ন্যাটোকে দুর্বল করতে পারে। এমনকি ন্যাটোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে বলে অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ উভয়ে তাদের নিজেদের স্বার্থেই ন্যাটোকে শক্তিশালী রাখতে বাধ্য। কেননা ন্যাটো সামরিক জোটের অন্তরালে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অলিখিত অর্থনৈতিক জোট সৃষ্টি হয়েই আছে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে একজোট হয়ে সারা বিশ্বে একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে একক এবং যৌথভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করা। এই অলিখিত জোটের পেছনে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও পশ্চিম ইউরোপের ধনাঢ্য গোষ্ঠী, যাদের ঐক্য সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। আর এই অলিখিত অর্থনৈতিক ঐক্য নিজেদের স্বার্থেই ন্যাটোকে কার্যকর ও শক্তিশালী রাখবে। মাঝখান থেকে সাময়িক অনৈক্যের বিষয়টি সামনে এনে যদি বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট শুল্কযুদ্ধের উত্তেজনা কিছুটা সরিয়ে রাখা যায়, তাহলে সেটিই হবে এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় অর্জন।

  • সার্টিফায়েড অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা