× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারী দিবস

অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সুসংহত করা জরুরি

নাছিমা বেগম

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১০:৪৬ এএম

নাছিমা বেগম

নাছিমা বেগম

একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। প্রাসঙ্গিকভাবে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার বিখ্যাত দুটি চরণ- ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায় নারী-পুরুষের সম্মিলনে সৃষ্ট এ পৃথিবীতে দুজনই অপরিহার্য। কিন্তু নারী-পুরুষ একজন আরেকজনের পরিপূরক হলেও উনিশ শতকের গোড়ার দিকে মেয়েরা ঘরের বাইরে পা রাখার কথা ভাবতেও পারত না। পড়াশোনা ছিল কল্পনার বাইরে! কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাধারা বদল হয়েছে, বদলে যাচ্ছে সমাজব্যবস্থা। এখন নারী অবাধে পড়াশোনার পাশাপাশি নানা পেশায় কাজ করছে। তবে এ পরিবর্তন হঠাৎ আসেনি। নারীর অধিকারের যাত্রা হয় নারী শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে।

১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরে সুই তৈরির কারখানার নারী শ্রমিকরা বিপজ্জনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্পমজুরি ও দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রমের বিরুদ্ধে প্রথম রাস্তায় নেমে আসেন। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৮৬০ সালে সেই নারী শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠনের আইনগত অধিকার আদায়ে সক্ষম হন। পরবর্তী পর্যায়ে ন্যায্য মজুরি আর ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিপূরণে ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ আবারও নিউইয়র্ক শহরের রাজপথে সমবেত হয় পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের হাজার হাজার নারী শ্রমিক। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে সমাজতান্ত্রিক নারীদের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে ১৭টি দেশের ১০০ নারী উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় সভায় জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নারী নেত্রী ক্লারা জেৎকিন শ্রমজীবী নারীদের জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে সমবেত হওয়ার একটি খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। উপস্থিত সবাই তার এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। এতে একটি বিশেষ দিনে শ্রমিক নারীদের একত্র হয়ে মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়। ক্লারা জেৎকিনের প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ৮ মার্চ নারীদের সম্মিলিত হওয়ার দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

ব্রিটেনের নারীরা যখন ভোটাধিকার আদায়ে রাজপথে নেমেছিলেন তারা বেগুনি রঙকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। বেগুনি রঙ ন্যায়বিচার ও মর্যাদার প্রতীক। সেই থেকে বেগুনি রঙটি নারী দিবসের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপনে উপস্থিত নারীদের প্রায় সবাই বেগুনি রঙের শাড়ি বা পোশাক পরিধান করেন।

বিংশ শতকে নারীর অধিকার মানবাধিকার হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত হলেও আমরা জানি যুগ যুগ ধরেই রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনজীবনে সুবিধাভোগের ক্ষেত্রে নারী বৈষম্যের শিকার। এ অবস্থার উত্তরণে নারীদের প্রতিনিয়তই করতে হয়েছে সংগ্রাম। আশার কথা হলো, দিনে দিনে মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র, ১৯৪৮-এর মাধ্যমে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকারের মূল সুর হলোÑ প্রতিটি মানুষের সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকার। ঘোষণাপত্র অনুসারে মানুষ হিসেবে নারীর এ প্রাপ্য অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না।

বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১০ অনুচ্ছেদে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিধান হয়েছে। সংবিধানের ১৯, ২৭, ২৮ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে। ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং ৬৫(২) অনুচ্ছেদের অধীনে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত ৩০০ আসনে নারীর অংশগ্রহণে কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা হয়নি। সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদের অধীন স্থানীয় শাসনসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।

পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সংবিধানে ২৮(৪) উপ-অনুচ্ছেদে বিশেষ বিধানও রাখা হয়েছে। নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীর অগ্রগতির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানে কোনো বিধিনিষেধ রাখা হয়নি।

সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রে যে ৩০টি অনুচ্ছেদ রয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর প্রতিটিরই প্রতিফলন রয়েছে আমাদের সংবিধানে। জাতিসংঘ কর্তৃক নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সনদ, ১৯৭৯ গ্রহণের অনেক আগেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। সিডও সনদের ১৬টি অনুচ্ছেদে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপে যেসব অনুশাসন দেওয়া হয়েছে, তার বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় প্রতিটি অনুশাসনই সংবিধানে বিদ্যমান।

নারীকে সুযোগ দেওয়া হলে সে যে শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান, ক্রীড়া-সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে, সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে তার শত শত উদাহরণ বাংলাদেশে বর্তমান। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। বাংলাদেশের এ সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন আরও বেগবান করার লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নারীর সাফল্য, নারীর জীবনসংগ্রাম, নারীর উন্নয়ন গোটা জাতির সামনে তুলে ধরা এবং নারীসমাজের মধ্যে বিরাজমান সব বিভ্রান্তি ও কুসংস্কার দূর করে কর্মমুখী নারীদের আরও উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্য সামনে নিয়ে, মহিলা ও শিশু বিষয়কসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় নানামুখী উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

আজ নারীরা তাদের পছন্দের পেশা বেছে নিয়ে স্ব-স্ব অঙ্গনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সমর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আজ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন পেশায় কাজের সুযোগ পেয়েছে। আমি মনে করি, নারীরা আজ যেমন প্লেন চালায়, ট্রেন চালায় তেমন তারা চুল কাটে, মাংস কাটে। অর্থাৎ নাপিত, কসাই, ধোপা, কামার, কুমার, জেলে, চাষি প্রভৃতি সব পেশাতেই নারী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে সব পেশাই সম্মানজনক। কোনো পেশাকে কম গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। একজন মানুষের কাজ বেছে নেওয়ার অধিকার একটি অন্যতম মানবাধিকার। সব পেশায় নারীর অংশগ্রহণ নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন আরও সুসংহত করছে।

প্রবাসে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নারীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স দেশের বিনিয়োগ এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় হচ্ছে। সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে নারী কর্মীরা তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোটা দাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশে রয়েছে নারীর অবদান।

এনজিও সেক্টরে নারীদের বিশাল অবদান রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন এনজিও যেমন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্লাস্ট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ইত্যাদি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।

গার্মেন্ট শিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন করেছে; পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাও বেড়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশে অন্যতম নিয়ামক শক্তির ভূমিকায় রয়েছেন আমাদের নারীরা। এ শিল্পের মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশই নারী। এ শিল্পে প্রায় ৩০ লাখ নারী শ্রমিক কর্মরত। যারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া তথা সাংবাদিকতায়ও রয়েছে আমাদের নারীদের সরব পদচারণ। নারী তার মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে সংবাদ সংগ্রহ ও উপস্থাপনায় পারদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও নারীদের সাফল্য কম নয়। শুটিং, দাবা, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল ও ক্রিকেটে দেশের নারী ক্রীড়াবিদরা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ভারোত্তোলন থেকে শুরু করে এভারেস্ট বিজয় পর্যন্ত সব ক্ষেত্রই আমাদের মেয়েরা জয় করছেন। কাজেই স্পোর্টসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদের সব ধরনের উৎসাহ দিলে আমাদের মেয়েরা এগিয়ে যায় এবং মেয়েরা যে পারে তা আজ প্রমাণিত। দৃঢ় মনোবল নিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে সফল তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের অকুতোভয় নারী নিশাত মজুমদার এবং ওয়াসফিয়া নাজরীন।

ক্রীড়াঙ্গনে একের পর এক সাফল্য নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদরা। জাতীয় নারী ক্রিকেট দল জায়গা করে নিয়েছে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। এ ছাড়া বাংলাদেশের দুরন্ত মেয়েরা ফুটবলেও সাফল্যের কাব্য রচনা করেছেন। ফুটবলের প্রতি অগাধ ভালোবাসার কারণেই মারিয়া মান্ডা-আঁখিদের ঘরের কোণে আটকে রাখা যায়নি। একে একে সব বাধা পেরিয়ে তারা ফুটবলার হয়েছেন। মাঠের লড়াইয়ে কঠিন সব বাধা অতিক্রম করে উড়িয়েছেন লাল-সবুজের পতাকা। গত বছরের ৭ অক্টোবর রাতে ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশের দুরন্ত মেয়েরা। এ জয়ের ফলে টুর্নামেন্টটির প্রথম আসরেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

প্রতি বছর এ দিবস পালনের আলোচনায় উঠে আসে নারীরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে কতটা এগিয়েছেন। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনাগুলো অতীতের মতোই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার মাঝে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে, রেল-সড়ক-নৌ চলাচলের সব পথে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা যেমন প্রয়োজন, তেমন গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা