× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সেবা সংস্থাগুলোর শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১০:১৩ এএম

সেবা সংস্থাগুলোর শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে রাজধানীর সেবা সংস্থাগুলোর শৃঙ্খলা। অফিস আদেশ জারি করেও ফেরানো যাচ্ছে না স্বাভাবিক পরিস্থিতি। সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী প্রত্যেককে সকাল ৯টায় অফিসে উপস্থিত এবং বিকাল ৫টায় কর্মস্থল ত্যাগ করতে হবে। এই বিধানে পরিপালনে ভাটা পড়েছে। ফলে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেবাপ্রার্থীসহ সাধারণ মানুষ। ২ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘সেবা সংস্থাগুলোর অফিসে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে’ শিরোনামে প্রতিবেদেন উঠে এসেছে এই চিত্র। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। সময়মতো অফিসে আসছেন না প্রতিষ্ঠানগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী। কেউ কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করছেন নিজের ইচ্ছামতো। মানছেন না ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের নির্দেশ। নানা অজুহাতে অফিস ফাঁকি দিচ্ছেন। শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ায় কমছে কাজের গতি। নিয়মিত উপস্থিতির বিধিমালা মানতে জারি করা হচ্ছে অফিস আদেশও। জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে এসব সংস্থায় কর্মরত সুবিধাভোগী ও বিতর্কিতদের মধ্যে হামলা-মামলার ভয় কাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ৮ মাসেও একধরনের চাপা আতঙ্কে ভুগছেন তারা। আর এর প্রভাব পড়ছে তাদের কর্মক্ষেত্রে। ফলে বেকায়দায় সংস্থাগুলো। এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও। দেখা যাচ্ছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পড়ে থাকছে। কাজকর্মে একশ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ঢিলেমি ভাব। অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেও ঘটছে কালক্ষেপণ। ঝিমিয়ে পড়া সংস্থাগুলোয় কাজের গতি বাড়াতে প্রয়োজনে সরকারকে আরও কঠোর হওয়া উচিত। 

৫ আগস্টের পর একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করে সিটি করপোরেশনগুলোয়। একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী আওয়ামীপন্থি কর্তকর্তা-কর্মচারীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন সুবিধাবঞ্চিতরা। একই অবস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষেরÑ ঢাকা ওয়াসাসহ সব সেবামূলক সংস্থায়। কারও কারও বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও রয়েছে। ফলে বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী কেবল হাজিরার মধ্যে তাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখছেন। 

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ তার নিজের অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সরকার পতনের পর যাদের মধ্যে ভয় আছে, তারা তো আসবে না। ৫ আগস্টের পর আমি নিজে রাজউকে গিয়ে দেখেছি পুরো অফিস খালি, কেউ নেই। সরকার পতনের পর সেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী পালিয়েছেন কিংবা নিয়মিত অফিসে উপস্থিত হন নাÑ ১৫ দিনের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তাদেরকে কেন নোটিস দিয়ে ডাকতে হবে? তিনি বলেন, হাজিরায় যারা অনুপস্থিত তাদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ যদিও এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করছেন না, বিষয়টি এমন নয়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ কিছু লোক আছে, যারা অফিস টাইম শেষ হওয়ার আগেই চলে যান। তারা যেন অফিস টাইমের আগে না যান সেজন্য এই আদেশ জারি করা হয়েছে।’

রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম মেগা সিটি। ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক নগরীতে পরিণত করার জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ঢাকা এখনও যানজটের নগরী। মশার উপদ্রবে ঘুম হারাম নগরবাসীর। বিশ্বের শীর্ষ দূষিত নগরীর তালিকায় বারবার উঠে আসছে ঢাকার নাম। নানা উদ্যোগের পরও গণপরিবহনে ফেরেনি শৃঙ্খলা। ফুটপাত, এমনকি রাস্তা বেদখল হয়ে যাওয়ার কারণে যানজট নগরবাসীর যেন নিয়তি। সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে সিটি করপোরেশন কর্তৃক নতুন রাস্তা, ফুটপাত তৈরির পরের মাসেই তা কেটে স্যুয়ারেজ লাইন বসাচ্ছে ওয়াসা। কখনও রাস্তা খুঁড়ে বিটিসিএল নিয়ে যাচ্ছে টেলিফোনের লাইন। এমনিতেই একধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে সংস্থাগুলোয়। এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই অসহযোগিতা নাগরিক পরিষেবা ব্যাঘাত ঘটাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে, যার অবসান জরুরি।

রাজধানীর সেবা প্রদানকারী প্রতিটি সংস্থার প্রকল্প ও বরাদ্দ আলাদা। এসব সংস্থা থেকে পরিষেবা পাওয়া নাগরিকের অধিকার। কিন্তু কোনো সেবাই যথার্থভাবে নগরবাসীর কাজে আসছে না। এজন্য তারা সরকারকে নিয়মিত করও দেন। এই করের টাকায় যাদের বেতন হয়, তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে রাজধানীর সেবামূলক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া সত্যিই দুর্ভাগ্যের। এভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, সংস্থাগুলোর কাজে গতি ফিরিয়ে আনতে হবে। যেকোনো উপায়ে কাজে অমনোযোগী ও অনুস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে। যাদের মনে ভয় ও শঙ্কা কাজ করছে তাদের নির্ভয় দিতে হবে। কাজে যোগদানের উৎসাহ দিতে হবে। নাগরিকদের স্বার্থেই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেবা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছা উচিত। নগরবাসী সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ পরিষেবা চায় সংস্থাগুলোর কাছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা