× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

নারীর প্রতি সহিংসতা কিছুতেই নয়

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫ ১১:২৪ এএম

নারীর প্রতি সহিংসতা কিছুতেই নয়

আমাদের মেয়েরা কেমন আছে? তাদের দুর্দশার ছবিটি কেমন? মেয়েরা যে ভালো নেই, নিরাপদে নেই, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন সার্ভের প্রতিবেদনে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির প্রতিবেদনে যে তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বরং নারীর 

সুরক্ষা নিশ্চিতে আমাদের উন্নতির ম্লান চিত্রই তুলে ধরে। বিবিএস জরিপ বলছে, দেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনে একবার হলেও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। 

তথ্যটি আতঙ্কের এবং মর্মান্তিক। নারীর প্রতি সহিংসতার এই যে পরিসংখ্যান, তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, আমরা এ কোন বর্বরতার মধ্যে বাস করছি? শুধু তা-ই নয়, গত এক দশকে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতাও বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে যেখানে যৌন সহিংসতার হার ছিল ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে। অথচ এই বিপুলসংখ্যক নারীর মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনের আশ্রয় নেন। বাকি ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ নারীই এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। 

আমাদের মেয়েরা শারীরিক সহিংসতা, যৌন, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক এ চার ধরনের সহিংসতার শিকার। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতার শিকার নারীদের অধিকাংশই তাদের জীবনসঙ্গী বা স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত। অর্থাৎ নিজের পরিবারের হাতেই তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। সহিংসতার শিকার নারীর ৬৪ শতাংশ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা কারও সঙ্গে শেয়ার করে নাÑ এই তথ্যটিও স্পষ্ট করে যে আমরা যথাযথভাবে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি না। অথচ অন্যান্য পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার, মা-প্রতি শিশু জন্মহার বা নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাসসহ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও, আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি, নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। দেশে নারী নির্যাতনের হার এত বেশি, সামাজিক নীতি ও শৃঙ্খলার বাঁধন নারীর জন্য এত কঠিন যে তাতে করে মেয়েরা যৌন সহিংসতার শিকার হবেন না, এটা আলাদা করে বলার সাহস করা যায় না। নারীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ঘটনার হার যে বাড়ছে তা তো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন সার্ভের প্রতিবেদনই বলে দেয়। 

কিন্তু এভাবে আর কত মেয়েকে নির্যাতিত হতে হবে? এ লড়াই তো শুধু মেয়েদের নয়, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষের লড়াই। আমরা যদি এই সহজ সত্যটি উপলব্ধি না করি তাহলে আগামীতে সমূহ বিপদ। কেবল নিজেরা সচেতন হলেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব। বিবেকবান মানুষ বহু কাল আগে থেকেই নারীর সম অধিকারে গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যখন নারীর প্রতি সহিংসতার এই রূপ দেখতে হয়, তখন খুব বেশি পরিবর্তন এসেছে, তা বলা যায় না। 

বরাবরই আমরা দেখে আসছি ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এসব অপরাধের দায়ে অপরাধীদের শাস্তির খবর তার চেয়ে অনেক কম। 

ফলে অপরাধীর মাঝে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার মানসিকতা কাজ করে। যা অপরাধীকে উৎসাহী করে তোলে অপরাধকর্মে লিপ্ত হতে। তাই ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করতে হবে অপরাধীকে। দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীর বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এর বিকল্প নেই। যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন আছে। কিন্তু, তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে...।’ 

এজন্য ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংস আচরণ বন্ধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, সোচ্চার হতে হবে। নারী নির্যাতন রোধে সামাজিকভাবেও উদ্যোগ নিতে হবে। নারীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি। মুখ বুজে সহ্য নয়, বরং প্রতিবাদই নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা হ্রাস করতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারীর মুখ না খোলার পেছনে যেমন আর্থিক কারণ রয়েছে, তেমনি রয়েছে সামাজিক কারণও। আমাদের সমাজব্যবস্থা নারীকে মানিয়ে নেওয়ার যে শিক্ষা দেয়, তা থেকে সরে এসে প্রতিবাদ করাও জরুরি। অন্যথায় পরিস্থিতির খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা