× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তেল গ্যাস বিদ্যুৎ নিয়ে তেলেসমাতি

রাজু আলীম

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫ ১১:১৩ এএম

রাজু আলীম

রাজু আলীম

কোভিড-পরবর্তী যুদ্ধ-সংঘাত, আন্তর্জাতিক রাজনীতির টানাপড়েন, মারপ্যাঁচ; দেশে দীর্ঘ স্বৈরশাসন অতঃপর গণমুক্তির গণঅভ্যুত্থান। বৃহৎ পরিবর্তনের এ সময়টা জুড়ে পুরো দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্যিক পরিস্থিতি অনেকটা জ্বলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত কড়াইয়ে। কিছুদিন আগেও দেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ কোটির বেশি টাকা পাচারের পর ধুঁকতে থাকা শিল্প খাতে নতুন গ্যাস সংযোগে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব এরই মাঝে যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। সম্প্রতি পেট্রোবাংলা নতুন শিল্পকারখানার বয়লার ও জেনারেটরে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। কয়েক দফা গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর পর সম্প্রতি নতুন শিল্পকারখানায় গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব অযৌক্তিক। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি-সংক্রান্ত গণশুনাতিতে ক্ষুব্ধ মত প্রকাশ করেন অংশীজনেরা। তারা বলেন, ১২ টাকার গ্যাস আমাদের থেকে ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এখন দাম বাড়িয়ে ৭৫ টাকা নির্ধারণ করলে দেশে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটবে না। অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে এ মুহূর্তে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অংশীজনেরা।

এর আগে শিল্পকারখানায় হঠাৎ এ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের পর বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জ্বালানি খাতে নৈরাজ্য কমবে, গ্যাসের দাম পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা হবে। কিন্তু গণমাধ্যমে জানতে পারলাম পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ দাম বৃদ্ধির ভার শিল্প সইতে পারবে কি না তা পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি না। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। হয়তো একসময় প্রচুর গ্যাস থাকবে, কিন্তু সে গ্যাস ব্যবহারের জন্য শিল্প থাকবে না। এমনিতেই ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ফেব্রিকের মূল্যহ্রাসের কারণে টেক্সটাইল শিল্প অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে আছে।’

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে পুরোনো সংযোগে মূল্য বৃদ্ধি না করে কেবল নতুন সংযোগে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হলেও শিল্পমালিকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি চক্র এ ধরনের একের পর এক প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে গত দুই বছরে গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। কিন্তু শিল্পমালিকরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাননি। গ্যাসের বদলে বাতাসের দাম দিতে হয়েছে। এখন আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত শিল্পের জন্য আত্মঘাতী। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশে শিল্পায়ন হবে না। নতুন শিল্প না হলে কর্মসংস্থানও হবে না।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশে শিল্প সম্প্রসারণ হবে না। শিল্প বন্ধ হয়ে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রস্তাব দেশবিরোধী চক্রান্তের অংশ। বিইআরসির গণশুনাতিতে নিট পোশাকশিল্প-মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আপনারা দেখবেন হাজার হাজার অবৈধ চুলা, সেগুলো চলছে। সবকটির সঙ্গে তিতাস জড়িত। সিস্টেম লস কমালে মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা করতে হতো না। এখনও তিতাসের হিসাবে ১৩ শতাংশ সিস্টেম লস। ১ শতাংশ সিস্টেম লস কমালে ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়।’ কেবল সিস্টেম লসের কথাই নয়, বলেছেন সরবরাহকৃত গ্যাসের গুণগত মানের বিষয়েও। তিনি বলেন, ‘শিল্পে আমাদের যখন প্রাকৃতিক গ্যাস দেওয়া হয়, আমরা ১৫ পিএসআই বা ৪০ পিএসআই নিয়ে থাকি। কিন্তু ২ বা ৩ পিএসআইয়ের বেশি পাইনি। তিতাসের রিপোর্টে দেখেছি ৪০ শতাংশ সিস্টেম লস, মানে চুরি। গ্যাস চুরির কারণে বাকি চাপ আমাদের ওপর আসে। এখন ওনারা (তিতাস) বলছেন ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন।’

চলতি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ)-এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বৃদ্ধি নয় বরং গ্যাসের বর্তমান মূল্য আরও কমানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘শিল্প, অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থান বাঁচাতে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ২০ থেকে ২২ টাকায় নামিয়ে আনা উচিত।’ বর্তমান পরিস্থিতি বোঝাতে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বাজেট ঘোষণা করা হতো ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। এখন ৮ থেকে ৯ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে পারছি শিল্পের জন্য। ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য হলেও গ্যাসের দাম কমানো উচিত।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘এটা যদি হয় আইএমএফের কন্ডিশন, সেটাও জনগণের সামনে উন্মুক্ত করেন। দেশে এমনিতেই ব্যবসাবাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করা তো দূরের কথা, ১ টাকা বাড়ানোরও কোনো যুক্তি নেই।’ গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, সদস্য (অর্থ, প্রশাসন ও আইন) মো. আবদুর রাজ্জাক, সদস্য (গ্যাস) মো. মিজানুর রহমান, সদস্য পেট্রোলিয়াম ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, সদস্য (বিদ্যুৎ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার।

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূল হাতিয়ার তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের এ মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা মোটা দাগে আসলেই কতটুকু জনগণের উপকারে আসবে? জ্বালানি সেক্টরের তলানিতে সিস্টেম লসের ছিদ্র রেখে ব্যবসায়ীদের ওপর এ অতিরিক্ত মূল্যের বোঝা সামনের দিনে শিল্পবাণিজ্য এবং নতুন উদ্যোগ কোন পথে নিয়ে যাবে? গণশুনানিতে উপস্থিত অথবা অনুপস্থিত নীতিনির্ধারক মহল কি আসলেই তার উত্তর দিতে পারবেন?

  • কবি, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা