× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খেলাপি ঋণ আদায়ে এখনই পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:২০ পিএম

খেলাপি ঋণ আদায়ে এখনই পদক্ষেপ নিন

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে অনিয়ম ও কারসাজির মাধ্যমে বহু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। এসব ঋণ এখন খেলাপি। এ মুহূর্তে যা দেশের অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ। জানা গেছে, ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়। উল্লিখিত সময় শেষে ব্যাংক খাতের ঋণস্থিতি ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, এটা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের রেকর্ড; যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২০.২০%। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সরকারি ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির হার বেড়েছে। এ হার আগের প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) থেকে কিছুটা বেড়ে ৪২.৮৩% এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এ হার ১৫.৬০%। দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি ঋণ গোপন রাখা ও ঋণ ক্লাসিফিকেশন পদ্ধতিতে পরিবর্তন করায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ‘আগের সরকারের সময় নানা সুবিধা নেওয়ার জন্য খেলাপি ঋণ কিছুটা কম দেখানো হতো। আমাদের কাছে যতই নতুন তথ্য আসছে ততই বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।’ সাবেক সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল ব্যক্তিবিশেষকে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি। আশার কথা সেই নীতি থেকে এবার সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদরা বহুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ঋণস্থিতি ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয় ৯ শতাংশ। এরপর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

অর্থনীতির ভাষায়, ঋণ প্রধানত খেলাপি হয় ঋণের ঝুঁকি পর্যালোচনার দুর্বলতায় এবং সঠিক কাঠামো মেনে ঋণ প্রদানের অক্ষমতায়।অনেক ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে সঠিক ও কার্যকর জামানতের অভাব থাকলে। বর্তমান খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় কোনো ঋণ ছয় মাস অনাদায়ী থাকলে খেলাপি হয় (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণ নয় মাস) কিন্তু নতুন সংজ্ঞায় সব ধরনের ঋণে তিন মাস অনাদায়ী থাকলে খেলাপি বলে গণ্য হবে। এ নতুন সংজ্ঞায় বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কথা সত্য, যেকোনো দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হলো তার ব্যাংক বা আর্থিক খাত। এ খাতের সুস্থ বিকাশ সে দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনে। আরও সহজ করে বললে, যে দেশের ব্যাংক খাত যত বেশি নিয়মতান্ত্রিক সে দেশের অর্থনীতি ততই সচল থাকে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ। মূলত খেলাপি ঋণের কারণেই ব্যাংকে ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে এবং যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। অথচ খেলাপি ঋণ থেকে মুক্তি বা এর প্রকোপ কমিয়ে আনার মধ্যেই নিহিত আর্থিক খাতের সমস্যার সমাধান।

আসলে খেলাপি ঋণ দেহের ক্ষতের মতো। যত দ্রুত সম্ভব এর বিস্তার রোধ করতে হবে। এখন এটা জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।রাতারাতি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি এক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক আনুকূল্যে প্রদত্ত ঋণ বা আদিষ্ট হয়ে ঋণ প্রদানের ধারা বদলাতে হবে। নতুন করে যেন আর ঋণ খেলাপি না হয় তার জন্য পরিকল্পিতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে খেলাপি ঋণগ্রহীতা, তার প্রতিষ্ঠান এবং তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দসহ যাবতীয় সহায়সম্পত্তি ব্যাংকের অনুকূলে হস্তান্তর করা যেতে পারে। তবে খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, অর্থঋণ আদালত বা নিম্ন আদালত কোনো একটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর গ্রাহক উচ্চ আদালতে রিট করেন, যা দিনের পর দিন চলতে থাকে। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরি। প্রচলিত আইনে সেটা সম্ভব না হলে আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে খেলাপি ঋণ যেভাবে বেড়েছে সে ক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের জন্য একটি বিশেষ আদালত পরিচালনা করা যায় কি না ভেবে দেখা যায়। আমরা মনে করি, এসব ব্যাংকের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় খেলাপি ঋণ আদায় করা। প্রয়োজনে ঋণ আদায়ে অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের গুরুত্ব দেওয়া হোক। দেশ বাঁচাতে, দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে এখনই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা