সাইফুল ইসলাম খান
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:৪৯ এএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৪৪ পিএম
সুন্দরের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন। প্রকৃতিও মানুষের জন্য তার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে দিয়েছে অকৃপণ হাতে। পাহাড় সমুদ্র কিংবা নদীতে প্রকৃতির সৌন্দর্যের তীব্রতা যেন আরও বেশি। প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে পাহাড় সমুদ্র বা নদীতে এমন কিছু রূপের প্রকাশ ঘটায়, যা মানুষকে কাছে টানে। সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ তাই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যায় এসব স্থানে। কালক্রমে এ স্থানগুলো হয়ে ওঠে দর্শনীয় স্থান। দর্শনীয় স্থানে মানুষ মনের খোরাক খুঁজে পায়। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা ও যাপিত জীবনের যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ছুটে যায় এসব দর্শনীয় স্থানে।
দেশের অনেক দর্শনীয় স্থানের মতো একটি স্থান হলো ধাঁধার চর। গাজীপুর জেলার পূর্ব সীমান্তে বয়ে চলা শীতলক্ষ্যা নদীর বুকে জেগে থাকা এ চরটির অবস্থান কাপাসিয়া থানার তারাগঞ্জ ও রানীগঞ্জের মাঝখানে। উত্তরদিক হতে নেমে আসা শীতলক্ষ্যা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের এক শাখানদীর মিলনস্থলে এ চরের অবস্থান। চরটির দৈর্ঘ্য ৩ কিমি, প্রস্থ কমবেশি ১ কিমি। ৩ বর্গকিমি আয়তনের এ চরটির নাম কেন ধাঁধার চর তা আজও রহস্যাবৃত। অবশ্য স্থানীয় অনেকে একে মাঝের চর বলেও ডাকে। নদীর মাঝখানেই দ্বীপসদৃশ বলেই এরকম নামকরণ অনুমান করা যায়। তবে ধাঁধার চরে কোনো রহস্য না থাকলেও আছে অপরূপ সৌন্দর্য। প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের ডালি এখানে সাজিয়ে দিয়েছে আপন হাতে। আরও আছে গাছ-গাছালি ও ফসলের অপরূপ সমাহার। ধান, গম, আলু, আখ, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ছাড়া আরও বেশ কিছু ফসল এখানে সারা বছর ফলে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কলা ছাড়াও আছে তাল-তমালের সারি। সকাল হলে দল বেঁধে দু’পারের কৃষকেরা নৌকায় পাড়ি দিয়ে ধাঁধার চরে যায় কৃষিকাজ করতে, ফিরে আসে সন্ধ্যায়। চরের উত্তর প্রান্তে রানীগঞ্জ বাজারের বটতলায় নদীর বাঁধানো ঘাটে দাঁড়ালে ধাঁধার চরটিকে চমৎকার দেখা যায়। অনেকে খেয়া নৌকা বা ইঞ্চিন নৌকা ভাড়া করে চলে যায় চরে। শীতকাল এলেই দূর-দূরান্ত হতে এখানে প্রচুরসংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। অনেকেই পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঢাকা থেকে ৭০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসে এখানে। নদীর বাঁধানো ঘাটে দাঁড়িয়ে চরের দিকে তাকালেই মন খুশিতে ভরে যায়। আর যারা চরে যায় হাঁটতে, তারা চরের সবুজে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে। নিঃশব্দে দু’পাশে বয়ে যাওয়া নদীর স্বচ্ছ জলের পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বসতিহীন এ চরে কৃষকেরা কাজ করে আপন মনে আর দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়ায় অনাবিল আনন্দে। শীতজুড়ে এভাবে চলে দর্শনার্থীদের ধাঁধার চরে বেড়ানো। আর বর্ষাকালে এ চরটি যেন আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে। তখন দর্শনার্থীরা চরে যেতে পারে না। কিন্তু বাজারের বাঁধানো পাড়ে অনেককে দেখা যায় নিষ্পলক সেদিকে তাকিয়ে থাকতে। তখন উন্মত্ত শীতলক্ষ্যার বুকে এ চরটি হয়ে যায় একটি দ্বীপ, যার মাথার ওপর থাকে কালো মেঘ। বৃষ্টির অঝোর ধারা কিংবা আকাশঢাকা মেঘে চরটি হয়ে যায় আরও রহস্যময়। এমন ধাঁধা লাগানো ধাঁধার চরে গত একযুগ ধরে বেড়েই চলেছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। কিন্তু দর্শনার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় খেয়া পারাপার নিয়ে। রানীগঞ্জ-লাখপুরে খেয়া পারাপার একমাত্র ব্যবস্থা। এ ছাড়া শীতের সময় দূর-দূরান্ত থেকে মাঝে-মধ্যেই পিকনিক পার্টি আসে এখানে। ধাঁধার চরের ঊর্বরা মাটিতে ফলানো ফসল দু’পারের কৃষকদের প্রাণ। তেমনি দর্শনার্থীদের কাছে তা অনাবিল আনন্দের উৎস।
লেখক : সংবাদমাধ্যমকর্মী