× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হোক চামড়া শিল্প

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৭ এএম

সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হোক চামড়া শিল্প

পোশাক শিল্পের পর জাতীয় প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজনের নিরিখে একটি অপার সম্ভাবনাময় খাত চামড়া শিল্প। নানা পরিসংখ্যানও বলছে, বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি পণ্য। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যভিত্তিক রপ্তানিমুখী শিল্প ঘিরেই এ খাতটির অবস্থান। ৮৫ বছরের পুরোনো এ শিল্প খাতটি এখন চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। একের পর এক সামনে আসছে পাহাড়সম সমস্যা। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্রমে পিছিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা ও মানের অভাবে ব্যর্থতার চক্করে ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ ১৯৪০ সালে রণদা প্রসাদ সাহার হাত ধরে এ অঞ্চলে (নারায়ণগঞ্জে) প্রথম ট্যানারি প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৫১ সালে ঢাকার হাজারীবাগে এবং ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর হয় ট্যানারি শিল্প। দীর্ঘ পথচলায় চামড়া শিল্পটি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হওয়ার কথা। বাস্তবে তা হয়নি। রপ্তানি খাত নানামুখী সমস্যা কেবলই পেছনের দিকে টেনেছে। চামড়ার বৈশ্বিক বাজারের আকার ২৪১ বিলিয়ন ডলার হলেও বাংলাদেশের অনুকূলে বলতে গেলে খুবই সামান্য। ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার ‘চামড়া শিল্প : পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কমছে বৈশ্বিক বাজার’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ হতাশার চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দরকার সরকারের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা। নিতে হবে পরিকল্পিত পদক্ষেপ, দিতে হবে আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০৩ কোটি ৯১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮৭ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ১১৭ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৪৪ ডলারের পণ্য। তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮৯ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানেও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২১ কোটি টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)ও স্বীকার করছে দেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেন এ অবস্থা? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা প্রতিবন্ধকতায় বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি দিনদিন কমছে। বিশ্বের চামড়াজাত পণ্যের বড় বড় ব্র্যান্ড ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। এসব দেশের ব্র্যান্ডের ক্রেতারা চামড়া কিনতে সময়োপযোগী মান, ট্যানারিগুলোর পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। এতে দরকার পড়ে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি)-এর সনদ। এ সনদ না থাকায় আমাদের জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার অনেকটা হাতছাড়া। ডব্লিউআইটিএসের তথ্যমতে, চামড়ার বাজারের শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই রয়েছে চীন, সুইজারল্যান্ড, হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি ও ভিয়েতনাম। এ দেশগুলো চামড়া রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিচ্ছে। আবার চামড়ার বড় আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এর পরের স্থানে রয়েছে চীন। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানির বড় বাজার চীন।

চামড়া শিল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘চামড়া খাত বরাবরই লাভজনক একটি শিল্প ছিল। ২০১৭ সালে অপরিকল্পিতভাবে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভার উপজেলার হেমায়েতপুরে শিল্পটি স্থানান্তরের পর প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তার অভাব নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এ শিল্পে । তারা আরও বলেন, শিল্পটি বাঁচাতে হলে সরকারকে নতুন করে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে বিদ্যমান ঋণ পর্যায়ক্রমে পরিশোধের সুযোগ রাখতে হবে। তা না হলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। পোশাক শিল্পের মতো সার্বিকভাবে নীতিসহায়তা না দিলে চামড়া শিল্পটি তার নিজ অবস্থানে কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারবে না। তবে আশার কথা, বাংলাদেশে একটি টেকসই চামড়া খাত বিনির্মাণে ১ মার্চ, ২০২৩ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬ পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা শোনা গেছে। এ লক্ষ্যে হাজারীবাগ, হেমায়েতপুরের ২০টি ট্যানারি, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ঢাকা ও গাজীপুরের ২৫টি জুতা উৎপাদনকারী কারখানা এবং ৫টি চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ চলছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য চামড়া শিল্পের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি টেকসই চামড়া খাত গড়ে তোলা। বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বে চামড়া শিল্পের বাজার আছে ২০০ বিলিয়ন ডলারের। আগে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হলেও চার বছর ধরে ১ বিলিয়নের কিছু বেশি রপ্তানি হচ্ছে। এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ ভূমিকা জরুরি। আগে বিদ্যমান সংকট সমাধান করার জন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তেমন কোনো কাজ লক্ষ করা যায়নি। এ শিল্পের সংকট কাটাতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

আর দুই মাস পরই কোরবানির ঈদ। দেশে মোট চামড়ার বড় একটি অংশ সংগৃহীত হয় এ সময়। অপ্রিয় হলেও সত্য, কয়েক বছর ধরে কোরবানির চামড়া নিয়েও চলছে নানা সংকট। কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, পরিবহনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের আরও সজাগ থাকতে হবে। আমরা মনে করি, যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেকটি প্রধান খাত হতে পারে চামড়া শিল্প। আমরা চাই, সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হোক দেশের চামড়া শিল্প।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা