× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিক্ষার্থীদের জীবন হোক মানসিক চাপমুক্ত

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:০৩ পিএম

শিক্ষার্থীদের জীবন হোক মানসিক চাপমুক্ত

প্রিয়জনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি, শিক্ষক বা বন্ধুদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন না পাওয়ার মতো বিষয় থেকে বহু শিক্ষার্থীর মনে তৈরি হয় আবেগ-অভিমান, যা তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। আর এই পরিস্থিতি থেকে তৈরি রাগ আর অভিমান ঠেলে দিতে পারে আত্মহননের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত পথেও। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসে। যার নেপথ্যে মানসিক চাপের কথা উঠে এসেছে। এই চাপের পেছনের কারণ সম্পর্কে শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, পরীক্ষার চাপ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, যা দুঃস্বপ্নের মতো তৈরি করছে আর এক সংকট। 

‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় নজর নেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের’Ñ শিরোনামে ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। প্রতিবেদনে আঁচল ফাউন্ডেশন একটি জরিপের তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে দেশে ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। যাদের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের। অর্থাৎ সবাই ১৩ থেকে ১৯ বছরে বয়োসন্ধি সময়ের শিক্ষার্থী। আমাদের প্রশ্ন শিশুরাই যদি ভালো না থাকে, দেশ কী করে ভালো থাকবে? শিক্ষার্থীরা এই যে নানা ধরনের মানসিক সংকটে ভুগছে, তা থেকে তাদের বের করে আনার জন্য আমাদের উদ্যোগই বা কি, সে প্রশ্নও স্বাভাবিকভাবেই ওঠে। তবে তার উত্তর যে সন্তোষজনক নয়, তা-ও স্পষ্ট হয় প্রতিবেদনের শিরোনাম থেকেই। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখার জন্য শিশুদের ওপর যে চাপ দেওয়া হয়, সে চাপ মোকাবিলায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়ে নজর দেওয়া হয় না। এ বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষিতই রয়ে যায়।

আমরা মনে করি, আমাদের শিশুদের ভালো রাখতে হলে, তাদের মানসিক চাপ কমাতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও ভাবার সময় এসেছে। একজন শিক্ষার্থী পরিবারের বাইরে সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে তার মনের ওপরের চাপ সরাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের উদ্যোগী হতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষার ভার তার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে কি না, তার ভেতর হতাশা ভর করছে কি না, তার শিশুসুলভ আচরণ হারিয়ে যাচ্ছে কি না, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার চাপে তার ভেতরে সমাজ থেকে পালানোর মনোবৃত্তি কাজ করছে কি না, ভেতরে ভেতরে তার মধ্যে অসামাজিকতার বীজ বোপন হচ্ছে কি নাÑ এ বিষয়গুলো গভীরভাবে দেখা প্রয়োজন। অন্যথায় এগুলোই পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে। শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তাকে নিরাপত্তা ও নিরাপদ পরিবেশের নিশ্চয়তার পাশাপাশি তার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া, আত্মসম্মান বোধ, জীবনে আনন্দ উপভোগ করার ক্ষমতাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। যাতে করে তার ভেতরে হতাশা দানা বাঁধতে না পারে। শিক্ষার্থীদের ভালো রাখতে হবে। ওরা ভালো না থাকলে আমাদের ভবিষ্যতের আলো ম্রিয়মাণ হয়ে উঠবে। তাই বিক্ষিপ্ত ভাবে নয়, বরং সবার সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে এ উদ্যোগ নিতে হবে। 

আমাদের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা, স্বনামধন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই। শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যায় সহায়তা করার জন্য প্রতিষ্ঠানের তরফে কোনো শিক্ষক বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নেই, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সমস্যার সমাধান হতে পারে। অথচ একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে আমাদের মাঝে যেসব ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে রয়েছে, তা-ও দূর করতে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা মনে করি, একজন শিক্ষার্থীর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে তার মধ্যে কী কী লক্ষণ ফুটে উঠতে পারে, সে বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীর মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে তাদের ভেতরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে শিক্ষকরা পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের মনের খবরও নিয়মিত রাখতে পারেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দৃষ্টি দিতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমস্যার দিকেও। কারণ একমাত্র তাদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন হয়। এজন্য স্কুলের শিক্ষক, অধ্যক্ষ বা স্কুলে নিযুক্ত কাউন্সিলরদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীর মনের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। শুধু পড়ালেখা নিয়ে মানসিক চাপ কমানোই নয়, তার হতাশা কমাতেও উদ্যোগ নিতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা