× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঋণ বিতরণ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৩৭ পিএম

ঋণ বিতরণ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে

ঝোলা কাঁধে গ্রামে গ্রামে কাবুলিওয়ালাদের চড়া সুদে টাকা ধার দেওয়া নিয়ে অনেক কথা ও কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছে। সুদের কারবার, চড়া সুদ আদায়ে সাধারণের ওপর তাদের চালানো অত্যাচারের কাহিনী মানুষ ভোলেনি। সেই কাবুলিওয়ালাদেরই উত্তরাধিকার আজও রয়ে গেছে মহাজনী রূপে। মহাজনের ঋণের সুদে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা মানুষের সংখ্যা কম নয়। ভুক্তভোগী অসংখ্য মানুষকে সুদের টাকা শোধ করতে বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে, ভিটেমাটিছাড়া হতে হয়েছে। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে সামান্য টাকা নিয়ে লাখ টাকার মামলার আসামিও হতে হয়েছেÑ যা ঋণ নেওয়া হয়, শোধ করার সময় গুনতে হয় তার কয়েক গুণ। ঋণের বোঝা টেনে অসহায় মানুষকে খোয়াতে হয় জমিজমাসহ সব সম্পত্তি। নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত মানুষের আহাজারি নতুন নয়। সুদের বিনিময়ে ধার নেওয়া টাকা হঠাৎ কোনো মাসে কিস্তি দিতে না পারায় কাল হয়ে দাঁড়ায়। সময়ের সঙ্গে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে সুদের পরিমাণ। চক্রবৃদ্ধি মুনাফার বেড়াজাল সাধারণের পক্ষে ছিন্ন করা সম্ভব নয়। তাই বন্ধ হয়নি মহাজনী ও বন্ধকি কারবার। এমনও অভিযোগ রয়েছে মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া সুদের টাকা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করা হলেও, অনেকে প্রতারিত হয়েছেন। আবার অনেকে হারিয়েছেন বন্ধক রাখা অলংকার। অনেক ক্ষেত্রে পাওনা পরিশোধের পরও বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে বন্ধকি জমি। যে স্ট্যাম্প ও চেকের মাধ্যমে টাকা ধার দেওয়া হয়, ধার শোধেও সেই স্ট্যাম্প ও চেক ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও অনেক। 

অসহায় মানুষকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতেই চালু হয় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি। গ্রামে-গঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতিতে কমতে থাকে মহাজনী কারবার। সরকারও ব্যাংকের মাধ্যমে মানুষকে স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নেয়, যা গ্রামীণ জনপদে আশার সঞ্চার করে, গ্রামীণ জনপদের মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। যেসব এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, সেসব অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতেও এসেছে গতি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এক গবেষণাতে এ তথ‍্যটি উঠে এসেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত ‘প্রতিযোগিতায় কমে সুদের হার’ শীর্ষ প্রতিবেদনটিতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) প্রতিযোগিতা বাড়ায় মহাজনদের সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

‘ক্ষুদ্রঋণ প্রতিযোগিতা এবং মহাজনদের উপস্থিতি : তত্ত্ব এবং প্রমাণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন একটি নতুন এনজিও কোনো গ্রামে প্রবেশ করে, তখন ওই গ্রামে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ৩৩ শতাংশ কমে যায় এবং তাদের সুদের হার প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়। তবে দেশে ব্যাংক ও এনজিওর সংখ্যা বাড়লেও যে মহাজনদের উপস্থিতি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি, তা-ও স্পষ্ট হয়েছে গবেষণায়। মহাজনদের প্রভাব না কমার পেছনে রয়েছে ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর পদ্ধতিগত জটিলতা। অন্যদিকে মহাজনী সুদে কাগজপত্র-দলিলদস্তাবেজের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। সাধারণত ব্যবসা শুরুর সময়ে আর্থিক সংকটের কারণে বা পুঁজির অভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ এখনও মহজনী সুদের ওপর নির্ভরশীল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শর্ত পূরণ করা তাদের পক্ষে সহজ না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে উচ্চসুদে মহাজনী সুদের টাকা নিতে বাধ্য হন। আবার বিপদে-আপদে, দ্রুততম সময়ে ঋণ পেতেও সাধারণ মানুষ দ্বারস্থ হয় মহাজনী সুদের দিকে। 

আমরা জানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ব্যাংকগুলো কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ রাখে। কিন্তু তারপরও কেন কৃষকের কাছে শেষ ভরসা হয়ে উঠবে ‘মহাজন’? সরকার ১০ টাকায় কৃষককে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দিয়েছে, তারপরও কেন তাদের উচ্চহারে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, এ অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে বেগবান করতে বড় ভূমিকা নিতে হবে ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। গ্রামেগঞ্জে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা কৃষিকাজে ঋণ বিতরণে ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। মহাজনী ঋণচক্র থেকে সাধারণ মানুষকে বের করতে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানেই শুধু নয়, প্রত্যেক ব্যাংক থেকেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন মহাজনী ও বন্ধকি ব্যবসার বৈধতার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং নির্দিষ্ট নীতিমালা, যাতে নির্ধারিত থাকবে সুদহার। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা