ইমেইল থেকে
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৩৫ পিএম
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোয় নকল প্রসাধনী মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সমস্যাটি এখন কেবল ব্যক্তিপর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই, এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রসাধনী বাজারের ৪৫ শতাংশ পণ্যই মানহীন। বেশিরভাগ নকল পণ্য ব্রাজিল, ভারত ও চীন থেকে আসে; যা পাইকারি বাজার, ফুটপাত এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের প্রসাধনীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক যেমন লেড, পারদ, ফরমালডিহাইড, আর্সেনিক ও স্টেরয়েড ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, যা অ্যালার্জি, ব্রণ, একজিমা, ত্বকের ক্যানসারের কারণ হতে পারে। নকল প্রসাধনীর রাসায়নিক স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে নারীদের ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রজনন সমস্যা তৈরি হয়। প্রসাধনীতে থাকা পারদ ও লেড সরাসরি গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রসাধনী বাজারে প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্যই নকল বা ভেজাল। অল্প খরচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এ পণ্যগুলোয় নামিদামি ব্র্যান্ডের লেবেল ব্যবহার করা হয়। দেশে কিছু অসাধু চক্রের সমন্বয়ে নকল, ভেজাল, মানহীন প্রসাধনী উৎপাদন করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার চকবাজার-কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা। প্রশাসনের চোখে ধুলা দিয়ে গোপনে এসব কারখানায় চলে নকল পণ্য উৎপাদন। তারপর ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু সময়ের হাত ঘুরে আবারও যেই লাউ সেই কদু অবস্থা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বলছে, নকল পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জানা গেছে, ২০২৩ সালে প্রসাধনীর উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, কেনাবেচা, মজুদ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, বিতরণ ও মান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কসমেটিকস আইন পাস হয়।
এ আইনে কসমেটিকসের লাইসেন্স সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স আরোপিত শর্তবহির্ভূতভাবে কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে না। আইনের মাধ্যমে কসমেটিকসের মান নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োগ, পরীক্ষাগার ইত্যাদি বিষয় ইইউ, ইউএসএফডিএ, এএসইএএনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, যথাযথ আইন থাকার পরও এখনও আলোচনার বিষয়, নকল প্রসাধনীর স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রশাসনের উচিত হবে কঠোরভাবে এসব আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি দূর করা।