× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫১ এএম

বায়ুদূষণ প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

‘আমাদের চারপাশে এত যে বাতাস, তবুও শ্বাসকষ্ট হয়’। এই শ্বাসকষ্ট বাতাসের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। যার জোগান দেয় বাতাস। কিন্তু সেই বাতাসেরই বিশুদ্ধতা হুমকির মুখে। প্রতিদিনই ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রথমদিকে থাকছে আমাদের রাজধানী। ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালেও ঢাকার বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, ২০৪ স্কোর নিয়ে এদিন বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে স্থান করে নেয় ঢাকা। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

বায়ুদূষণের পেছনে রয়েছে পুরোনো যানবাহনের আধিক্য, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়নকাজ; দেশজুড়ে, বিশেষত শহরের আশপাশের অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা ও শিল্পকারখানার দূষণ এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়া। এ ছাড়া ভাঙাচোরা রাস্তা, নির্মাণস্থলের কংক্রিটে আলগা ধুলা তো প্রতিনিয়তই বাতাসে মিশছে। যা সরাসরি ঢুকে পড়ছে মানুষের শ্বাসযন্ত্রে। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের (এসওজিএ) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্ব-পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলোতে বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। শুধু ২০২১ সালেই বাংলাদেশে ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মৃত্যুর কারণ ছিল এই বায়ুদূষণ। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা বেশি বায়ুদূষণজনিত রোগের শিকার। এর প্রভাবে অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশসহ আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে লোয়ার-রেসপাইরেটরি-ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণে পাঁচ বছরের কম বয়সি যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার ৪০ শতাংশের জন্যই দায়ী বায়ুদূষণ। ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে ১৯ হাজারেরও বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর মৃত্যুরও রেকর্ড হয়। শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্যই দূষিত বাতাস হুমকি নয়, এর প্রভাবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, দূষণে প্রতিবছর প্রায় ২৬৬ মিলিয়ন কর্মদিবসেরও ক্ষতি হচ্ছে। যা আমাদের উৎপাদনশীলতার জন্যও বড় ক্ষতি। 

পরিবেশবিদরা বলছেন, কলকারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া, জলাধার বন্ধ করে বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ ও সেই নির্মাণকার্যের ধুলো, ইট-বালি-সিমেন্টের গুঁড়ো, রাস্তা তৈরির ধোঁয়া, ধুলো, কয়লার আগুন থেকে নির্গত ধোঁয়া, এসি ও ফ্রিজ থেকে বেরোনো ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, রাস্তায় ওড়া বিভিন্ন ময়লা, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ড্রপলেট থেকে বাতাসে বাড়ছে ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’। বাতাসে ভাসমান ধুলো সরাসরি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে মানবশরীরে। যার প্রভাবে শরীরে বাসা বাঁধে নানান রোগ। 

বায়ুদূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত অনেক আগেই। এখন প্রয়োজন সমস্যার সমাধান। আমাদের স্মরণে আছে, ২০২০ সালে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে উচ্চ আদালত ৯টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরিবেশ অধিদপ্তরও বিভিন্ন সময়ে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কিছু প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির যে পরিবর্তন হয়নি, পরিস্থিতির গুরুত্ব যে যথাযথভাবে আমরা উপলব্ধি করিনি, সেই অভাববোধও প্রকট। তাই আমরা মনে করি, বায়ুদূষণ রোধে সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোকে বায়ুদূষণের জন্য দায়ী প্রতিটি উৎসের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি দূষণের উৎসগুলো নির্মূলে উদ্যোগী হতে হবে। বায়ুর গুণগত মান উন্নত করতে চাইলে বায়ুদূষণের কারণগুলোর যথাযথ সমাধান যেমন জরুরি, তেমনি সাধারণ মানুষকেও সচেতন করে তুলতে হবে। কারণ, বিশুদ্ধ বাতাসের চাহিদা তো মানুষের অধিকার। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ বাতাস জরুরি। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশুদ্ধ বাতাস যে আমাদের অধিকারÑ এই বোধ সাধারণের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় মনে রাখতে হবে, বায়ুদূষণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও যারা বাতাস দূষিত করার অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ। পাশাপাশি জরুরি ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা। ফুসফুসের সুস্থতার জন্য যে বিশুদ্ধ বাতাসের প্রয়োজন তা আমাদের কারণেই নষ্ট হচ্ছে। অথচ অধিকাংশ সময়েই আমরা নিজেরা বায়ুদূষণের সময় একে সমস্যা মনে করি না। ফলে কঠিন হয়ে উঠছে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ। অথচ বায়ুর মান সহনীয় পর্যায়ে না থাকায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বায়ুর মান সহনীয় রাখতে দূষণের মাত্রা যেমন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দূষণের জন্য দায়ী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির তৈরি করতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা