× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

কৃষিঋণে সুদহার কমাতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৭ এএম

কৃষিঋণে সুদহার কমাতে হবে

রসনাবিলাস মেটানোর প্রয়োজনে ধার করেও ঘি খাওয়ার কথা বলা হয়েছে শাস্ত্রে।  এতে উৎসাহিত হয়েই যেন আমাদের বড় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ দেশের আর্থিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও চড়া সুদহারের অজুহাতে বাড়িয়ে চলেছে খেলাপি ঋণ। তাদের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার এবং ব্যাংকগুলোর জোরালো ভূমিকাও দৃশ্যমান নয়। তাই হয়তো ঋণ নিলে পরিশোধ করতে হবে নাÑ এমন ধারণা দৃঢ় হতে বসেছে। অথচ যখন খেলাপি ঋণের পাহাড় জমছে, যখন সব ধরনের ধার পরিশোধেই আমাদের গড়িমসি, তখনও সময়মতো ঋণ ফেরত দিচ্ছেন গরিব কৃষক। শুধু তাই নয়, তারা নতুন ঋণ নিতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। ঋণ ফেরতের খবরটি স্বস্তির হলেও ঋণ নেওয়ার অনাগ্রহের খবরটিও উদ্বেগের।

‘চড়া সুদের প্রভাবে কৃষিতে কমছে ঋণ বিতরণ’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কৃষিতে ঋণ বিতরণে ভাটা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষি খাতে মাত্র ১৬ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। আগের বছরের এ সময়ে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করেছিল ১৮ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এ খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। কৃষকদের ঋণ না নেওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতিকে দায়ী করা হয়। 

ব্যাংকগুলো গত বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধকল কাটিয়ে উঠতে কৃষককে সহজ শর্তে সুলভ ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও তাতে আগ্রহী হননি কৃষক। বরং কমেছে তাদের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা। এর পেছনে রয়েছে কৃষি ঋণে বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার। আগে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হলেও কৃষি খাতের জন্য ছিল বিশেষ সুদহার। কৃষি ঋণের জন্য কৃষক আলাদা ছাড় পেতেন। কিন্তু সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে কৃষি ঋণের সুদহারও বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষি ঋণের জন্য রাখা হয়নি আলাদা কোনো ছাড়ের ব্যবস্থা। ফলে কৃষককে বড় শিল্প গ্রুপের চেয়েও বেশি সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে, যা তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। তবে ঋণ নিতে আগ্রহ হারালেও কৃষক ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহী নন। তাই আগের ঋণ সময়মতো ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে যেখানে ১৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল, এবার একই সময়ে আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। অথচ বিভিন্ন সময়ে আমরা হতদরিদ্র কৃষকের নামে ঋণখেলাপির মামলা হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখেছি। তাদের হয়রানি করার খবর এসেছে সংবাদপত্রে। গ্রেপ্তারের ভয়ে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকার খবর দেখেছি। সেগুলোর সবই ছিল উদ্বেগ ও বেদনার। যেখানে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার কুনজির আমাদের রয়েছে, সেখানে কৃষকের ঋণ ফেরত দেওয়ার খবর স্বস্তির। আবার তাদের ঋণ না নেওয়ার খবরটিও অস্বস্তির। ঝড়-বন্যাসহ নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের হাতে সব সময় যথেষ্ট টাকা থাকে না। আবার যে পরিশ্রম ও খরচ করে কৃষক ফসল ফলান, তারও ন্যায্যমূল্য পান না। এতে করে কৃষককে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চাষাবাদ করতে হয়। এখন বোরোর ভর মৌসুম। কৃষকের হাতে যথেষ্ট টাকা না থাকলে বোরো উৎপাদন যেমন ব্যাহত হতে পারে, তেমনি কৃষিতেও কৃষকের অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানাবিধ কারণে কৃষকের পক্ষে অনেক সময় ঋণ শোধ করা সম্ভব না হলেও কৃষক কখনও চান না তার কৃষি ঋণ মফকুফ হোক, বরং তারা চান ঋণ পরিশোধের শর্তগুলোর শিথিলতা। সেই সঙ্গে সুদের হার কমানো। কৃষকের ঋণ পরিশোধের অভ্যাস আছে। যখন আর্থিক সংকটের কথা বলে বড় ব্যবসায়ীরা খেলাপি হচ্ছেন, তখনও কৃষক তার ঋণ পরিশোধের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তাই আমরা মনে করি, কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে সুদহার কমানোর দিকে সরকারের মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কৃষককে তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছু বাড়তি সময় দেওয়া এবং ঋণ বিতরণের শর্তগুলো শিথিল করার জন্য আমরা বলি। একই সঙ্গে ‍যাদের ঋণ পরিশোধের অভ্যাস নেই, যারা খেলাপি ঋণের পাহাড় গড়ে ব্যাংক খাতকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা