× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রযুক্তি

অর্থনীতির বড় শক্তি হতে পারে আইটি খাত

মো. ফজলুল করিম পাটোয়ারী

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৫ এএম

মো. ফজলুল করিম পাটোয়ারী

মো. ফজলুল করিম পাটোয়ারী

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। অথচ বিগত সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সৌকর্যের বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে প্রচার হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ-সংশ্লিষ্ট স্নাতক বিষয় চালু করেছে; যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু এ মুহূর্তে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বেশি জরুরি। এ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারদের সুযোগসুবিধা বাড়ানো, আইটিসংশ্লিষ্ট খাত বা প্রতিষ্ঠানকে সুযোগসুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে এসএমই খাতেও। কিন্তু দেশে এসএমই খাতের অবস্থা কেমন? বিগত এক দশকে যদিও বলা হয়েছে, এসএমই খাতকে সরকারিভাবে নানা প্রতিষ্ঠান সুবিধা দিয়ে শক্তিশালী করেছে; বাস্তবে এসব সহযোগিতা অদৃশ্যই ছিল। বাস্তবে এ ধরনের সহযোগিতার অনেকটাই নীতিনির্ধারণী বিষয়েই আটকে থাকে। অথচ এ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নারীরা কতটুকু সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। 

দেশে ব্যবসার ধারণাটি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সেবাভিত্তিক হতে শুরু করেছে কয়েক বছর ধরে। অথচ এসএমই খাত, বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কর্মরত ফ্রিল্যান্সার, ই-কমার্স খাতে সংশ্লিষ্টরা এখনও সঠিক পথে আসতে পারছেন না। ই-কমার্সের নামে দেশে যা হচ্ছে তার অধিকাংশই বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারছে না। এ বিষয়ে অতীতে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে তার সংশোধনের ক্ষেত্রেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এসএমই খাতে নারীদের ঋণ দেওয়ার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো প্যাকেজ দেখা যায় না। এমনকি এ ক্ষেত্রে নারীরা সহযোগিতা কীভাবে পেতে পারে তার সুনির্দিষ্ট ধারণাও নেই। এর ফলে আইটি খাতে এক ধরনের মধ্যস্থতাকারী তৈরি হয়েছে। দেশে এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করছেন। কেউ ইউটিউব বা মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট বানিয়ে আয় করছেন। অনেকে মার্কেটপ্লেসে ডেভেলপার, প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, কনটেন্ট রাইটার এমনকি এসইও করেও আয় করছেন। প্রতি বছর এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তা বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার আনেন। এ ধরনের আয় আনার জন্য তাদের প্রয়োজন পেমেন্ট গেটওয়ে। সরাসরি ব্যাংকে লেনদেনের বদলে এ ধরনের পেমেন্ট গেটওয়ে অনেক সহজে প্ল্যাটফর্মের অর্থ লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। তার মধ্যে ফ্রিল্যান্সাররা ব্যবহার করতে পারেন যেটি সেটি পেওনিয়ার। কিন্তু যারা আপওয়ার্ক বা ফ্রিল্যান্সার ডট কমে কাজ করেন তাদের অনেকের জন্যই পেপ্যালে ডলার আনা জরুরি। দীর্ঘদিন এ বিষয়ে দাবি তোলা হলেও পেপ্যাল আনা হয়নি। যদি এ পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করা যেত তাহলে অনেক সহজে ডলার দেশে আসত। এখন নানা মিডিয়েটরের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা ডলার খোলা বাজারে বিক্রি করেন। অনেকে শুধু ডলার সংগ্রহ করে বিক্রি করেই অর্থ আয়ের মাধ্যমে নিজেদের ফ্রিল্যান্সার পরিচয় দেন। ফলে দেশে ডলার না এসে তা টাকাতেই রূপান্তরিত হয়ে চক্রাকারে ঘুরছে। ফ্রিল্যান্সারদের এ ক্ষেত্রে ডলার সহজে আনার ও উপযুক্ত কনভার্সন রেট দেওয়ার বিষয়টি ভাবলে এ খাতে উৎসাহ যেমন বাড়বে তেমনি এ খাতের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। 

আইটি খাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে ও পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে এ খাতের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া দেশি অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনা অচিরেই আশঙ্কায় পরিণত হবে। কয়েক বছরে নারীদের ব্যবসা একটা পর্যায় পর্যন্ত এলেও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখনও ঠিকঠাক দাঁড়াতে পারেননি। তারও অনেক কারণ আছে। সরকারের নীতিনির্ধারক কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে যাতে এমএমই খাতের অন্তরায়গুলো শনাক্ত করে ক্রমান্বয়ে উত্তরণ ঘটানো যায়! ব্যবসায় বা ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে প্রতিদিনের যে হাজার রকম চ্যালেঞ্জ আছে তা চাকরিতে নেই, কিন্তু চাকরিতে ব্যক্তির অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আছে। সুতরাং টিকে থাকতে হলে আইটি খাতকে অবশ্যই সব সময় লাভজনক অবস্থায় থাকতে হবে।

অর্থবছরের ঠিক মাঝামাঝি এসে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থবছরের শুরুতে সরকারের বাজেট ঘোষণার পরে এক দফা পণ্যের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এখন অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে আরেক দফা পণ্যের দাম হুট করে বাড়ানোর ফলে ই-কমার্স ও এসএমই খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আসলে ভোক্তা হিসেবে ভুক্তভোগী তো সেই সাধারণ মানুষই হয়! আমরা এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি ই-কমার্সে। পৃথিবীব্যাপীই বিশাল ই-কমার্স বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং বাজারটা ক্রমবর্ধমান সুতরাং এ খাত থেকে সরকারের বড় রকমের রাজস্ব আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, এ ই-কমার্স খাতে ক্ষুদ্র ও তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তারাই সিংহভাগ অবদান রাখবেন। এজন্য শুধু যেটা করতে হবে তা হলো ই-কমার্সের বিশাল সম্ভাবনা অবারিত করতে আমাদের যোগ্য প্রতিনিধি প্রস্তুত করা। ক্রসবর্ডার বাণিজ্যের জটিল প্রক্রিয়াগুলো ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ করা। স্থানীয় সহজলভ্য পণ্যকে মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রস্তুত করা। নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে ও কুরিয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে ‘চাহিবামাত্র’ ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ার মতো করে প্রস্তুত করাও জরুরি। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কর্মঠ ও টেকসই প্রতিনিধি তৈরিতে আমাদের এমএমই ব্যবসায়ীদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। এসব কার্যক্রমই সফল হতে পারে সরকারের সদিচ্ছামূলক নীতি নির্ধারণ ও পৃষ্ঠপোষকতায়।

পৃথিবীব্যাপীই বিশাল ই-কমার্স বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং বাজারটা ক্রমবর্ধমান। সুতরাং এ খাত থেকে সরকারের বড় রকমের রাজস্ব আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যবসায় হাজারো চ্যালেঞ্জ থাকে, তার পরেও ছন্দময় হয়ে উঠতে পারে যদি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে। কারণ অস্থিতিশীল অর্থনীতির কবলে প্রথমেই একজন ব্যবসায়ীকে পড়তে হয়। আর সেই ব্যবসায়ী এমএমই হলে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার পথ আরও কঠিন হয়ে ওঠে। এজন্য আইটি খাতের বৈচিত্র্যময় বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুবিধা ও লজিস্টিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা জরুরি। যেহেতু এ ধরনের খাতে উদ্যোক্তা এবং ফ্রিল্যান্সার তার দক্ষতার ভিত্তিতেই এগিয়ে চলেন, তাই এ খাতে সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করলে তারা বাড়তি ভোগান্তিমুক্ত হন।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবসা লাভজনক করতে হলে তারও আনঅফিসিয়ালি একটা সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকে এবং অবশ্যই স্টার্টআপ ব্যবসাটা শুরু করতে হবে অন্য কোনো আইডিয়া নিয়ে অথবা প্রচলিত কোনো আইডিয়ার অন্য কোনো বাস্তবায়ন নিয়ে। ব্যবসার মডেল টেকসই হতে হবে এবং খরচাপাতি পূরণ হওয়ার পর সঠিক রাজস্ব নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হলে এবং তখন গালভরা শব্দ ‘স্টার্টআপ’ মুখ থুবড়ে পড়বে। এ কারণে পৃথিবীব্যাপী দুর্দান্ত আইডিয়ার স্টার্টআপ চালু করার জন্য, কখনও বা প্রোটোটাইপ থেকে একটা স্তর অবধি এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান; সেটা হতে পারে সরকারি কিংবা বেসরকারি। আমাদের ক্ষেত্রেও সরকারি পর্যায়ে এবং বেসরকারি পর্যায়েও এমন উদ্যোগে অংশ নিতে এগিয়ে আসার পথ খোলা রাখতে হবে, পথের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর তথ্যানুসারে, আইসিটি খাতে বর্তমানের মোট কর্মসংস্থান মাত্র ১০ লাখ। প্রতি ১৮০ জনে একজন, অর্থাৎ মাত্র আধা শতাংশ। ১৮ কোটির বেশি মানুষের দেশে তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান ও কর্মদক্ষতার এ চিত্র পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্যই শুধু নয়, হতাশাজনকও। এ ক্ষেত্রে আমাদের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এ খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলেতে উদ্যোগী হতে হবে। যাতে করে ২০২৬-এর মধ্যে আইসিটি খাতে মোট কর্মসংস্থান ২০ লাখে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এরপর ধাপে ধাপে ২০২৮ সালের মধ্যে ৪০ লাখ, ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ লাখে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন একটি ধারাবাহিক রোডম্যাপ। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে খুবই কঠিন মনে হলেও, এর বিকল্প নেই। শুধু মাত্র কথার কথায় মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ লাখ মানুষকে কারিগরিভাবে দক্ষ করা চাট্টিখানি কথা নয়। তবে এ অসম্ভবও এই খাতের বৈচিত্র্য বিবেচনায় সম্ভব করা সম্ভব। অন্যথায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী কর্মদক্ষতা, সক্ষম জনশক্তি ও শিল্প গড়ে তোলা কঠিন হবে। সব কথামালাই পত্রিকা ও বইয়ের পাতায় থেকে যাবে। বাংলাদেশকে শিল্পে দক্ষ শ্রমশক্তি আমদানির বিকল্প যেমন খুঁজতে হবে, তেমনি কারিগরিভাবে দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি করে রেমিট্যান্স আয়ের টেকসই পথও খুঁজতে হবে। তা করা গেলেই আমাদের অর্থনীতি পাবে বাড়তি শক্তি।

  • অধ্যাপক, তথ্য ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা