× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দায়িত্বশীল আচরণ মৃত্যুহার কমাবে

মীর আব্দুল আলীম

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৫ এএম

মীর আব্দুল আলীম

মীর আব্দুল আলীম

গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় সড়ক। সেটাই এখন যেন মৃত্যুফাঁদ। সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের বাস্তবতা। প্রতিদিনই সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। তবে আমাদের দেশের চিত্রটা উদ্বেগজনক। প্রতিদিন খবরের পাতায় সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক পরিসংখ্যান আমাদের সামনে আসে। কিন্তু আমরা কি এ মৃত্যুগুলো কেবল সংখ্যা হিসেবে দেখব, নাকি পেছনের কারণ খুঁজে সমাধানের পথে এগোব? প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় লাশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কে এ মৃত্যুর দায়ভার গ্রহণকারী? রাষ্ট্র, চালক, না সবাই? একটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত হয়েছে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭ হাজার ৯০২ জন। দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ২০২৪ সালে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মৃত্যু বেড়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, আর আহতের সংখ্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় সংকটের পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাস্তাঘাটের অপরিকল্পিত নকশা, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন অমান্য, যানবাহনের নাজুক অবস্থা সব মিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, আমাদের সড়ক কি আদৌ নিরাপদ? বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং ট্রাফিক বিভাগ একযোগে কাজ করছে দাবি করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ট্রাফিক আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে দুর্বলতা, পর্যাপ্ত জনবল ও প্রযুক্তির অভাব এবং অনিয়মই সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিকার কোথায়? আগে প্রয়োজন টেকসই অবকাঠামো। রাস্তাঘাটের মানোন্নয়ন এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যানজট ও দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। আইন প্রয়োগ তথা ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা সবকিছুতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চালক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রচার চালানো দরকার। সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সিসি ক্যামেরা, ট্রাফিক সিগন্যালের আধুনিকায়ন এবং মনিটরিং সিস্টেম চালু করা আবশ্যক। সড়কে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমানো শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা যদি আইন মেনে চলি, সচেতন থাকি এবং নিজেদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি তবেই সড়ক দুর্ঘটনার এ ভয়াবহতা কমানো সম্ভব। সড়ককে মৃত্যুফাঁদ থেকে নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে রাষ্ট্রের উদ্যোগ এবং নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু সড়ক তৈরি করা নয়, সেগুলো নিরাপদ রাখা এবং মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশে এ দায়িত্বে অবহেলার চিত্রই বেশি। যেসব আইন আছে, সেগুলো প্রয়োগের অভাব এবং পরিবহন খাতের অনিয়ম রাষ্ট্রের দুর্বলতার পরিচায়ক। সরকার বিভিন্ন সময় ‘নিরাপদ সড়ক’ প্রকল্পের ঘোষণা দিলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অভাব স্পষ্ট। উন্নত দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমানোর জন্য নিয়মিত গবেষণা, পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও একই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সড়কে মৃত্যুহার কমাতে- আইন মানার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে। চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ এবং যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে স্কুল-কলেজ এবং গণমাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে। সড়ক নিরাপত্তায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

গতি এবং দুর্ঘটনার সম্পর্ক ব্যাপক। জরিপে দেখা গেছে, ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলা একটি গাড়ি কোনো বাধা দেখলে থামতে ৭০ থেকে ৯০ মিটার জায়গার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় চলা গাড়ি সে বাধা থেকে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিটার দূরে থামতে পারে। কাজেই গতি দুর্ঘটনা রোধ করতে সক্ষম। উন্নত দেশগুলো সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সুইডেনের ‘ভিশন জিরো’ উদ্যোগ সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর একটি অনন্য উদাহরণ। এতে গতিসীমা নির্ধারণ, রোড ডিভাইডার এবং পথচারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে স্পিড ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো চালকদের গতিসীমা লঙ্ঘন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। যানবাহনের গতি কমানোর জন্য কয়েকটি কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রতিটি সড়কের জন্য একটি নির্দিষ্ট গতিসীমা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরের প্রধান সড়কে ৩০-৪০ কিলোমিটার ঘণ্টা এবং মহাসড়কে ৭০-৮০ কিলোমিটার ঘণ্টা গতিসীমা কার্যকর করা যেতে পারে। গাড়িতে স্পিড লিমিটার বা ক্রুজ কন্ট্রোলের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ। অবশ্য গতি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দুর্বল আইন প্রয়োগ, ট্রাফিক পুলিশের সীমিত ক্ষমতা এবং মানুষের অসচেতনতা; এসব সমস্যা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। উন্নত বিশ্বের অভিজ্ঞতা অনুসরণ করে সঠিক পরিকল্পনা ও কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমানো সম্ভব। পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করতে গণমাধ্যম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন সিসিটিভি, ট্রাফিক সেন্সর এবং স্বয়ংক্রিয় জরিমানা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আসলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু সংখ্যার হিসাবে সীমাবদ্ধ নয়; এটি অসংখ্য পরিবারে শোক, হতাশা এবং আর্থিক বিপর্যয় বয়ে আনে। উন্নত সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রশাসন, চালক, যাত্রী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দায়িত্বশীল আচরণই পারে সড়কে মৃত্যুহার কমাতে।

  • কলাম লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা