প্রেক্ষাপট
তনুশ্রী হালদার
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:২০ এএম
তামাক মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবু তামাকের প্রতি মানুষ আসক্ত হয়। বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, তামাক ব্যবহারের উচ্চহারের কারণে দেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে নানানরকম অসংক্রামক রোগে। গবেষণা তথ্যে উঠে এসেছে, তামাক চাষে কৃষিজমির উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পায়। পাশাপাশি তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে।
‘ক্যানসার সার্ভে-২০১৮’ তথ্য থেকে জানা যায়, এ খাতে রাজস্ব আদায় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি হলেও তামাকজনিত রোগে চিকিৎসা ব্যয় হয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। তামাকের সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ক রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে মুখের ক্যানসার বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহারকে চিহ্নিত করছেন গবেষকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব এনসিডি’স অনুসারে বাংলাদেশে ২০২৫ সালের মধ্যে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব জনগণের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু গত ১৪ বছরে তামাক ব্যবহারের হার কমেছে মাত্র ৮ শতাংশ। এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাক ব্যবহারের হার কমানোর বিকল্প নেই। আর তামাক ব্যবহারের হার কমাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা। সেইসঙ্গে তামাকের বিরুদ্ধে সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়া। তামাকজাত পণ্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে প্রয়োজন অতিরিক্ত শুল্কারোপের মাধ্যমে দাম বাড়ানো। লক্ষণীয় বিষয়, তামাকজাত পণ্য ব্যবহার নিরুৎসাহ করতে বিগত অর্থবছরগুলোয় দেশে বিভিন্ন স্তরে তামাকজাত পণ্যের মূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ কার্যকর হয়। কিন্তু যে হারে এ মূল্য বাড়ানো হয় তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে তামাকবিরোধী জোট ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তামাকজাত পণ্যে কার্যকর করারোপের প্রস্তাব থাকলেও বাজেটে তা পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি।
তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাতে অল্প অল্প করে না বাড়িয়ে এক ধাক্কায় অনেকখানি দাম বাড়ানো প্রয়োজন; যাতে তামাকজাত পণ্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। সেইসঙ্গে তামাকজাত পণ্য যেন কোনোভাবেই দৈনন্দিন পণ্যের তুলনায় সহজলভ্য না হয় সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। তামাকজাত পণ্য থেকে সরকারের যে পরিমাণ রাজস্ব আসে, তার চেয়ে এ খাতে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। আগামী বাজেটে সরকারকে এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। দেশে তামাক ব্যবহারের আর্থিক ও যেসব স্বাস্থ্য ক্ষতি হয়ে থাকে তা অপূরণীয়। তাই প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধে এবং একটি তামাকমুক্ত সুস্থ-সবল জাতি গঠনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হবে এবং আসন্ন বাজেটে সব স্তরের তামাকজাত পণ্যের মূল্য প্রয়োজনীয় হারে বাড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।