× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৩ এএম

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই অবস্থান থেকে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। ধরা পড়েনি জেলপলাতক আসামিরা। সরকারের জন্য ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে অভ্যুত্থানের পর জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীর অন্তত ছয়জন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তাদের বেশিরভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় কারাগারে ছিল। 

কারাগারে আছে এমন সন্ত্রাসীদের অনেকেই মুক্তির জন্য জোর চেষ্টাও চালাচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর আত্মগোপনে থাকা সদস্যরা প্রকাশ্যে এসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের তৎপরতায় দুর্বলতার সুযোগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে, সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ ধরনের সংবাদ সত্যিই উদ্বেগজনক। এমনিতেই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকে ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করত। এখন মুক্তজীবনে তারা আরও বেপরোয়া। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ফের অপরাধজগতে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নানা শঙ্কার কথা।

প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামিনে বেরিয়ে আসা এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর প্রায় সবাই দীর্ঘদিন বন্দি ছিল। ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, হাজারীবাগের সানজিদুল ইসলাম ইমন, মিরপুরের কিলার আব্বাস নামে পরিচিত আব্বাস উদ্দিন, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু তাদের মধ্যে অন্যতম। এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মুক্ত বাতাসে বেরিয়েই ফিরে গেছে অন্ধকার জগতে। তাদের তৎপরতায় অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের অপরাধজগৎ। বেড়ে চলেছে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধ। জানা গেছে, ২০০১ সালে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা ঘোষণা করেছিল তৎকালীন সরকার। 

তালিকার অন্যতম সুব্রত বাইন। তার নামে এখনও ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি রয়েছে। সুব্রতর গ্রুপ রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, ইস্কাটনসহ আশপাশের এলাকায় নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে দলবল নিয়ে মহড়া দেয় সুব্রত বাইন। এ নিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঢাকার একসময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্যতম ডন ছিল সুইডেন আসলাম। সব সময় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াত। কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, রাজাবাজার, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও শেরেবাংলা নগরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আলোচিত সব হত্যাকাণ্ডে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে। তার নামে ২২টি মামলা হয়েছে, যার ৯টিই হত্যা মামলা। ২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষবার গ্রেপ্তার হয়। কন্ট্রাক্ট কিলিংসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার পূর্ব ইতিহাস থাকা এই সন্ত্রাসীর কারামুক্তিতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছে। ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগানসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইমন বাহিনী। 

ইতোমধ্যে ২২টি বড় মার্কেট দখল করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে তার সন্ত্রাসী গ্রুপ। মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের তৎপরতাও দৃশ্যমান। পিচ্চি হেলালকে ২০০০ সালের ১২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের ১৬ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান। এর পরপরই ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ওই হত্যার ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগÑ তার গ্রুপ গত ডিসেম্বরে রাজধানীর ভাষানটেকের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি ভবন ভাঙার কাজে বাধা দেয় এবং ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবি করে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীর অন্যতম আরেকজন খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু। ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালত থেকে গত ১৩ আগস্ট জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসে। এখন রাজধানীর রমনা, মতিঝিল, রামপুরা ও বাড্ডা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে তার বাহিনী নতুন করে সক্রিয়। 

এসব বাহিনীর অপরাধ কর্মকাণ্ডে এখন ঘুম হারাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কারামুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যে, সরকারের মাথাব্যথার কারণ তা খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের তাড়াতাড়ি ধরে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের সাবেক ডিআইজি ও বর্তমানে অপরাধবিষয়ক আইনজীবী নুরুল কবির প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যথাযথ কারণ দেখিয়ে জামিনে কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিল করে আবার আটকানো যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলার কাজে সম্পৃক্তরা মনে করছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতায় সারা দেশেই একটা আতঙ্কজনক অবস্থা বিরাজ করছে। সামনের দিনগুলোয়, বিশেষ করে নির্বাচন সামনে রেখে এদের মুক্তভাবে বিচরণ করতে দেওয়া কোনোক্রমেই উচিত হবে না।

ইদানীং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে, তার সঙ্গে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসার যোগসূত্র রয়েছে। দীর্ঘ সময় জেলে থাকার পরও তাদের কোনো সংশোধন হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা মনে করি, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে রাজনৈতিক কারণে কারাবন্দি করা নিঃসন্দেহে অন্যায়। কিন্তু তার চেয়েও বড় অন্যায় রাজনৈতিক হয়রানির শিকার দেখিয়ে সন্ত্রাসীদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনা। সে সময় এসব নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও কর্তৃপক্ষ খুব একটা আমলে নিয়েছেন বলে মনে হয় না। এখন উদ্বেগের বিষয় হলো, দৈত্য একবার কৌটা থেকে বের হয়ে গেলে আবারও কৌটায় ভরা কঠিন। সহজ করে বললে, যে অপরাধী পার পেয়ে যায়, সেই অপরাধীকে দমন করা শুধু কঠিনই নয়, অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভবও। যেকোনো মূল্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত ও তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। তবে, আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে সরকার সম্প্রতি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান শুরু করেছে। এর আগেও অপরাধীদের ধরতে বিভিন্ন এলাকায় রেইড ব্লক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। এবারের অভিযান যেন ব্যর্থ না হয়। আমরা চাই, প্রতিটি অপরাধের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবেÑ এটাই প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা