× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

বন্ধ হোক অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৯ এএম

বন্ধ হোক অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি

মানুষের জন্য উন্নয়ন নাকি উন্নয়নের জন্য মানুষ! আমাদের প্রশ্ন, যদি মানুষের জন্য উন্নয়ন হয়ে থাকে, তাহলে কেন তার দায় নিতে হবে মানুষকে? কেন তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে? কেন অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হবে? রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়ি তথা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিনের। রাজধানীতে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে আসার কথাও হয়েছে। কিন্তু কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়নি। কোনো প্রস্তাবই আলোর মুখ দেখেনি। ফলে রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হয়নি। অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, সিটি করপোরেশন সড়ক নির্মাণ বা মেরামত করে যাওয়ার ক’দিন পরেই হয়তো সে রাস্তা খুঁড়তে আসে ওয়াসা, কখনও রাস্তায় কাজ চলে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার। তাদের কাজ শেষে রাস্তাটি জোড়াতালিতে মেরামতের পরপরই দেখা যায় সড়ক কাটা হচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর প্রয়োজনে, আবার কখনও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনে। এভাবেই একের পর এক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলতেই থাকে। এর সঙ্গে উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল নির্মাণের খোঁড়াখুঁড়ি তো রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্যোগ। ফলে পায়ের নিচের পথজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির শেষ নেই। যা প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে তুলছে জনদুর্ভোগ। এমনিতেই যানজটের নগরী হিসেবে রাজধানীর অবস্থা কহতব্য নয়। তার সঙ্গে যখন রাস্তা সংস্কার অথবা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি যোগ হয় তখন দুর্ভোগের সীমা থাকে না। উন্নয়নের চাপে রাজধানীতে উড়ালসড়কের গার্ডার ভেঙে করুণ মৃত্যুর ঘটনা যেমন রয়েছে, তেমনি পদচারিসেতু ভেঙে এবং নির্মাণাধীন ড্রেনে পড়েও করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। 

এই যে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ির মাধ্যমে যতটা না নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয়, তার চেয়ে বেশি জনদুর্ভোগ, পরিবেশ বিপর্যয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ই বেশি। ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত ‘সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগ চরমে’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিও সেদিকেই ইঙ্গিত করে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকা দূষণের নগরী হিসেবে শীর্ষ স্থান দখল করে আসে। প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থান থেকে শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকার স্থানটি ধরে রাখার পেছনে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও কম দায়ী নয়। নির্মাণসামগ্রীর বর্জ্য, ধূলিকণা বাতাসের সঙ্গে মিশে বাতাসের বিশুদ্ধতা নষ্ট করছে। যার ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আবার যানজটের নগরী হিসেবে আমাদের দুর্নাম, তারও পেছনে রয়েছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। একটি সড়কের অর্ধেক অংশ যখন বন্ধ রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সড়কটির প্রশস্ততা কমে যায়। যানবাহনের গতি ধীর হয়ে আসে। উন্নয়নের জেরে গর্তে পড়ে, কাদা-ধুলায় মাখামাখি হয়ে স্বল্পপথ পাড়ি দিতে পেরিয়ে যায় দীর্ঘ সময়। ফলে মানুষের কর্মঘণ্টা যেমন নষ্ট হচ্ছে, আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তেমনি যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়ে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশেরও। 

এমনটি কি চলতেই থাকবে? এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এ অবস্থা থেকে কি উত্তরণের পথ নেই? সমন্বয়হীন এই খোঁড়াখুঁড়ি থেকে কি নগরবাসীর মুক্তি নেই? সমাধান রয়েছে প্রশ্নগুলোর মাঝেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে উভয় সিটি করপোরেশনে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার মাঝে নিয়ে আসতে হবে। শুধু বরাদ্দের টাকা খরচ করাই যেন উদ্দেশ্য না হয়, মানুষকে যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, সেজন্য দেখভালকারী প্রতিষ্ঠানের শক্ত কাঠামো প্রয়োজন। আমরা অবশ্যই উন্নয়নের পক্ষে, তবে তা মানুষকে কষ্ট দিয়ে নয়, দুর্ভোগ বাড়িয়ে নয়। বরং যে উন্নয়নের উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ, সেই উন্নয়ন যেন সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে, একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় সেদিকটি নিশ্চিত করতে হবে। একই রাস্তা বারবার বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক না খুঁড়ে, এক খোঁড়াতেই যেন সবগুলো সেবা নিশ্চিতের পথ নিশ্চিত করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। 

ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’র কথা আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের। সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় যেসব সরকারি সংস্থাকে প্রয়োজনে সড়ক খনন করতে হয় তাদের মাঝে সমন্বয় আনতেই প্রণীত হয়েছিল এ নীতিমালা। কিন্তু এখন অবধি এর যথাযথ প্রয়োগ লক্ষ করা যায়নি। আর যথাযথ প্রয়োগ হয়নি বলেই কোনো সংস্থার মধ্যেই নীতিমালাটি মানার উদ্যোগ নেই। শুধু সরকারি পর্যায়েই নয়, ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক সময় সড়ক খোঁড়া হয়। অথচ সড়কে যেকোনো ধরনের খোঁড়াখুঁড়ির জন্য অনুমতির বিধান রয়েছে। রয়েছে শাস্তি ও জরিমানা আদায়েরও বিধান। কিন্তু বিনা অনুমতিতে সড়ক খোঁড়ার জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের শাস্তি হয়েছেÑ এমন নজির নেই। এতে করে যত্রতত্র সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা যায়নি। আমরা মনে করি, জনদুর্ভোগ এড়াতে, মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার উদ্যোগী হবে। যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের আগেই বিকল্প ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি সকল সেবাপ্রদানকারী সরকারি সংস্থার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সমন্বয় সাধনের উদ্যোগ নেওয়া হবেÑএমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা