যুক্তরাষ্ট্র
স্যাম সুটন
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৪ এএম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৭ এএম
স্যাম সুটন
জো বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীর আগমন বাড়তে শুরু করে। অভিবাসী বাড়ার ফলে দেশটির শ্রমবাজারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়। আর এ অগ্রগতি দেশটির মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবস্থাপনায় নতুন শ্রমিক তৈরি কিংবা বাজারে এর জোগান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে কর্মসংস্থান অনেক বেড়েছিল। অভিবাসীদের কারণেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রে বিগত বছরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বাড়ে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকগুলো সমীক্ষা করে দেখেছে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও তাদের অর্থ জোগানের দুই-তৃতীয়াংশই বেড়েছে অভিবাসী শ্রমিকের মাধ্যমে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সীমান্ত বন্ধ করে দেন এবং গণহারে অভিবাসীদের দেশছাড়া করেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম খাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি এবং উৎপাদনের হার বাড়া ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলেছে, জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োগকারীরা ১ লাখ ৪৩ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করেছে এবং যোগ করেছে। বিশেষত অর্থনীতিতে পেরোলের সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। নতুন যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে তারাই প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ বিদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যেই বেশি। জানুয়ারিতে এ কর্মীর সংখ্যা শ্রমশক্তিতে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ। হ্যামিলটন প্রজেক্টের সিনিয়র ফেলো ওয়েন্ডি এডেলবার্গ জানান, ‘পেরোল নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিবাসীদের হারের গড়পতন ২০২৫ সালে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আমাদের এখন শ্রম খাতে কর্মী অনেক কম হবে ভেবেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে। বিগত দুই বছরে অন্তত যেমনটি দেখেছি তার তুলনায় এ সংখ্যা অনেক কম হবে।’ হোয়াইট হাউস জানুয়ারিতে অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে অনেক নমনীয় ছিলেন বলে বাইডেনকে দোষারোপ করেছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিয়াভিট তাদের প্রাক-প্রবৃদ্ধি নীতিমালার প্রতিবেদনে বলেছেন, বাইডেনের অর্থনীতি সবার কাছে যত মন্দ ছিল বাস্তবে তার রূপ আরও বেশি দুর্বল ছিল। ওই প্রতিবেদনে এও বলা হয়, ট্রাম্পের অধীনে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর বিষয়ে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য এ নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প নিজের নীতিমালা নিয়ে সরব। অবশ্যই অর্থনৈতিক নীতিমালা নিয়ে তিনি বেশি কথা বলেছেন। ট্রাম্পের মতে, তিনি অনিয়মতান্ত্রিক নীতিমালাগুলো সমূলে হটিয়ে দিচ্ছেন। তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিকে পরাজিত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এ বক্তব্যটি তিনি জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু বড় পরিসরে দেশটিতে অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্তি কমলে অর্থনৈতিক প্রসার ধীরগতির হয়ে উঠবে। কানসাস সিটি ফেডের গবেষকরা জানিয়েছেন, অর্থনীতির প্রসার ধীরগতি হওয়ার তুলনায় ভয়াবহ বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রম জোগানের চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়বে এবং এ খাতটি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। তবে অনেকের দাবি, প্রতিষ্ঠানে কর্মী সংখ্যা যদি এভাবে কমে তাহলে অন্তত প্রতিষ্ঠানের ওপর বেতন দেওয়ার যে চাপ রয়েছে তা দূর হবে।
গ্লোবাল জি-১০ এফএক্স রিসার্চ এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উত্তর আমেরিকার ম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজির প্রধান স্টিভ ইংল্যান্ডারও বিষয়টি নিয়ে তার শঙ্কা জানিয়েছেন। তার মতে, নির্ধারিত সময়ের জন্য আসা অভিবাসীরা, যারা আশ্রয় কিংবা পেরোলের অধীনে থাকতে চাচ্ছে তারাই কৃষি খামার নয় এমন পেরোলের প্রসারের ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ অবদান রেখেছে। অভিবাসীদের দ্রুত সরানোর নীতিমালা এখন থেকেই কার্যকর হবে কি না, এ বিষয়টিও স্পষ্ট নয় বলে তার অভিমত। আগামী ছয় বা নয় মাস ধরে তা কার্যকর হতে পারে অথবা চলতি বছরের শেষে এর বাস্তব চিত্র দৃশ্যমান হবে।
যদি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে এসব সমস্যা সত্যিই ঘটে তাহলে ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারকরা বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বেন। কারণ তারা মূল্যস্ফীতি এবং সুদহার নির্ধারণের জন্য কর্মসংস্থানের তথ্যের ওপর নির্ভর করেন। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে অভিবাসীদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান ঊর্ধ্বমুখিতা তৈরি করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরো তাদের অনুমান প্রকাশ করেছে। আর এ ঊর্ধ্বমুখিতাই পরবর্তী বছর শ্রমশক্তির বাস্তব অবস্থা নির্ধারণ করে দেবে। কতগুলো কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এবং চাহিদার বিপরীতে তা নিশ্চিত করা গেছে তা-ও নির্ভর করছে। ট্রাম্পের নীতিগুলো অবশ্য অভিবাসীদের হার কমানোর জন্যই নির্ধারণ করা। অর্থাৎ চলতি বছর ও আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান তৈরির হার অনেক দুর্বল হবে। আগামীতে আমরা অনেক নিম্নমুখী প্রতিবেদন পাব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে।
কিন্তু এসব হার কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ শ্রমবাজারের স্বাস্থ্য আমাদের জানা জরুরি। যে কোনো দেশের জন্যই এখন বিষয়টি অনেক গুরুত্ব পায়। যদি অভিবাসীদের হার কমে এবং কর্মসংস্থান না বাড়ে সামগ্রিকভাবে, তাহলে খামার নয় এমন পেরোলের অবস্থা কেমন আছে তা বোঝা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত পেরোলের অধীন থাকা এসব চাকরির বিষয়টি ভাবা জরুরি কারণ এগুলোই সামগ্রিকভাবে অনেক খাত ও বিষয়ের দিকে নজর কিংবা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। এখন যদি জানা না যায় এ মাসে কোথায় অভিবাসন কমেছে, তাহলে আমরা কীভাবে বুঝব যে এবার অভিবাসনের হার অনেক বেড়ে যায়নি? তাহলে নীতিতে একটি কথা বলা হলেও বাস্তবে তার উল্টোটিই ঘটে যেতে থাকবে। তাহলে বাস্তবিক ফল আসবে না। অস্থিতিশীলতা বাড়বে।
ট্রাম্পের প্রশাসনে এলন মাস্ক ফেডারেল কর্মীদের ‘বায়-আউট’ সময়ের মধ্যে জবুথবু আবার অনেক ক্ষেত্রে ছাঁটাইয়ের বিষয়টি ভেবে রেখেছেন। অবশ্যই ট্রাম্পের অভিবাসনবিষয়ক নীতিমালা পেরোলের ভবিষ্যৎ কীভাবে প্রভাবিত করবে, আমরা এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু অনুমান করেও বলতে পারছি না, কারণ যতক্ষণ তিনি উদ্যোগ না নিচ্ছেন ততক্ষণ এর প্রভাব দৃশ্যমান হতে পারবে না। অভিবাসীদের ডিপোর্ট করার সংখ্যা বছরে কয়েক হাজারের মতো হতে পারে, শুধু এ অনুমান করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি ভারসাম্যও গড়তে পারে আবার কর্মী নিয়োগ দিতে চাইলে তার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। ট্রাম্প ইতোমধ্যে কিছু নীতিমালা ভেবেছেন যা কিউবা, নিকারাগুয়া, ভেনেজুয়েলা ও হাইতি থেকে আসা অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রছাড়া করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেহেতু তারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার হারাবে, সেহেতু কাজের পারমিট পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের সক্ষমতা অনেক কমে যাবে। এসব জানার পর বিগত কয়েক সপ্তাহে কয়েকটি অভিবাসী কমিউনিটিতে রেইড পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেককে এখনও মুক্তি দেওয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসী বিতাড়ন, এমনকি স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার হারটিও যদি বিচার করে দেখা হয়, ট্রাম্পের নীতিমালা নতুন অভিবাসীর সংযোজনের ক্ষেত্রে কতটা শীতলভাবে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে তা নির্ধারণ করবে। হ্যামিলটন প্রজেক্টের এডেলবার্গের দল জানিয়েছে, আগামী বছর অন্তত ১১ লাখ অভিবাসী অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। অর্থাৎ বিগত বছরের থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার কমবে। তবে এ সংখ্যা বাড়বে যদি ট্রাম্পের নীতি আরও কঠোর হয়ে ওঠে। আগামী মাসে অভিবাসীর সংখ্যা কত হবে তা আমাদের অনুমান করে নিতে হবে। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অবস্থা দেখার জন্য দেখতে হবে। এ কথা সত্য, চলতি বছর অভিবাসীরা এখনও কর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছে। কারণ বিগত বছরের নতুন অভিবাসীরা এখনও রয়েছে। কিন্তু তাদের পর্যবেক্ষণ করে অন্তত বোঝা যায় ভবিষ্যৎ প্রতিবেদনে শ্রমশক্তিতে আমরা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখব। বাজারের অভিবাসী কর্মসংস্থানের চাহিদা আছে। তাই অভিবাসী শ্রমশক্তি কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা আবার সংস্কার করতে হবে। অন্যদিকে কাঠামো সুস্থির করার চেষ্টা করতে হবে। না করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রসার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির নেতিবাচক-ইতিবাচক পরিবর্তনের পর্যবেক্ষণ উপযুক্ত হবে যখন ট্রাম্পের নির্দেশনা আসবে স্পষ্টভাবে। তার নীতিমালার প্রয়োগ শুরু হবে বাস্তবে। একটি রাষ্ট্রের বাজারে কর্মসংস্থানের স্বাস্থ্য মূলত এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করেই বোঝা যায়। তাই নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম এ দিকগুলো নিয়ে ভাবতে হয়।
পলিটিকো থেকে ভাষান্তর : আবেদিন আকাশ