× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ধর্ম ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:২৩ এএম

শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক

প্রায় এক যুগ ধরে একই বৃত্তে আটকে আছে দেশের টিকাদান কার্যক্রম। কোনোভাবেই সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)-এর আওতা ৮৪ শতাংশের ওপরে উঠতে পারছে না। ফলে দেশের ১৬ শতাংশের বেশি শিশু টিকাসুবিধা থেকে বঞ্চিত। সবচেয়ে বেশি অবহেলা দেখা গেছে শহরকেন্দ্রিক টিকাদান কার্যক্রমে। ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশে টিকাকার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক গবেষণায় প্রাপ্ত ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। টিকা থেকে ১৬ শতাংশ শিশুর বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। টিকা হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনন্য জীবন রক্ষাকারী উপাদান। অনেক ভয়ানক রোগ প্রতিরোধ করে টিকা আমাদের শিশুদের সুরক্ষিত রাখে। হাম, মাম্পস, হুপিংকাশি, জলবসন্ত, পোলিও, যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকারসহ অনেক মারাত্মক রোগ থেকে টিকা শিশুদের রক্ষা করে থাকে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি শিশুকে পরামর্শকৃত টিকাগুলো সময়মতো দেওয়ার মাধ্যমে রোগপ্রতিরোধের সম্ভাবনা উজ্জ্বল ও সুনিশ্চিত করা যায়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে, যা বর্তমানে ৮৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে গ্রাম-শহরনির্বিশেষে এ কভারেজে ভিন্নতা রয়েছে। টিকা কর্মসূচিতে শহরকেন্দ্রিক কার্যক্রমে ব্যাপক অবহেলা দেখা গেছে। অর্থাৎ ইপিআই কর্মসূচির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে টিকাকার্যক্রমে জনবলের ঘাটতি। মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ এবং ইপিআই সদর দপ্তরে ৪৩ শতাংশ পদ এখনও শূন্য। এ ছাড়া বরাদ্দকৃত জনসংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম, কারণ আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-২০১৯ এবং ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান-২০২৪ অনুসারে প্রতি ৫০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ছয়জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। রয়েছে অঞ্চলভিত্তিক টিকাকেন্দ্রের অসম বণ্টন, অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, টিকার অপর্যাপ্ততা, কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্গম এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহনজনিত সমস্যা, টিকাদান সম্পর্কিত প্রচারের অভাবসহ নানা সমস্যা। এমনকি দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুসারে টিকাদান কেন্দ্রের অসম বণ্টনও লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যে সংখ্যায় টিকাদান কেন্দ্র থাকা দরকার সে-সংখ্যক টিকাদান কেন্দ্র নেই। সবচেয়ে বিস্ময়কর পঞ্চম হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর প্রোগ্রাম এখনও অনুমোদিত হয়নি। ফলে টিকা কেনা, পরিবহন এবং বণ্টনে 

বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না হলে ২০২৯ সালের পর গ্যাভি টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আসলে স্বাস্থ্যের অন্য সব প্রোগ্রামের সঙ্গে টিকা প্রোগ্রাম মিলিয়ে দেখলে হবে না। যেসব কারণে টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করা হোক। যে জনবল ঘাটতির কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তা পূরণ করে, প্রয়োজনে বাড়তি লোকবল নিয়োগ করা হোক। এটাকে অবশ্যই আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ টিকা জীবন রক্ষাকারী একটি উপাদান। 

গবেষণার পরামর্শে বলা হয়েছে, শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ, জনসংখ্যাভিত্তিক জনবলনীতি বাস্তবায়ন, প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা বণ্টন, প্রতি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত এবং টিকা সরবরাহ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে। প্রয়োজনে শহর অঞ্চলের টিকাদান কার্যক্রম স্বাস্থ্যের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। যেসব শিশু টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের যেকোনো মূল্যে টিকার আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। শিশুদের টিকা কার্ড সহজলভ্য করতে এখনকার ম্যানুয়াল ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম ডিজিটাল করা জরুরি। এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। মৌখিক আহ্বান কিংবা আশ্বাসে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সি ১ লাখ ২০ হাজার শিশু মারা যায়। টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ার কারণে এ হার আরও বাড়তে পারে। যেকোনো মূল্যে এটি ঠেকাতে হবে। কোনো শিশুকে টিকাদান কর্মসূচির বাইরে রাখা যাবে না। তথ্যমতে, দেশে ১ লাখ ২০ হাজার কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়। বহু কেন্দ্রের কার্যক্রম চলে স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা স্থানীয় কোনো ব্যক্তির বাড়িতে। কেন্দ্র বাড়ানোর জন্য বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো সম্পৃক্ত করতে হবে। পাশাপাশি দেখতে হবে টিকা গ্রহণকারী শিশু যেন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে না পড়ে। এ ক্ষেত্রে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা