× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

আন্দোলন যেন ভোগান্তির কারণ না হয়

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৩ এএম

আন্দোলন যেন ভোগান্তির কারণ না হয়

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত সরকারকে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩৬টি আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন দাবিতে আন্দোলনে নামছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় থেকে রাজপথ, সড়ক থেকে রেলপথ, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়Ñ সর্বত্রই হচ্ছে দাবি আদায়ের আন্দোলন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ব্যস্ততম সড়ক এবং শাহবাগ যেন উন্মুক্ত সমাবেশস্থলে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে এখনও রাজপথে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা পরিণত হয়েছে দাবির শহরে। দাবি আদায়ের আন্দোলনে যেন ক্লান্ত রাজধানী। অথচ গত ১৫ বছরের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতেই ছাত্র-জনতা দায়িত্ব দেয় অন্তর্বর্তী সরকারকে। একটি সমতাভিত্তিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই কাজ শুরু করে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, স্থানীয় সরকারব্যবস্থা, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে কমিশন গঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু প্রতি পদে দাবি আদায়ে মানুষ রাস্তায় নেমে আসায় সরকারের মূল লক্ষ্য ব্যাহত হওয়ার উপক্রম।

৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেতন-ভাতা নিয়ে বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে ৮ আগস্ট থেকে কর্মবিরতি পালন করেন মেট্রোরেলের দশম-বিশতম গ্রেডের কর্মচারীরা। নিরাপত্তা ও হামলার বিচারসহ আট দাবিতে ৯ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ২৫ আগস্ট চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে বিশৃঙ্খলা করে আনসার বাহিনীর সদস্যরা। ২৬ আগস্ট পৃথকভাবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মবিরতি পালন করেন অডিটররা। ফলে বেতন-ভাতা সংক্রান্ত কাজ থমকে যায়। ৩০ সেপ্টেম্বর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারীরা। অক্টোবরে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে অটোপাসের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয় পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ। তার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্তি চেয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করেন রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। 

দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ নিয়ে ১১ নভেম্বর তিন দফা দাবিতে অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর বাইরেও ‘সচেতন নার্স ও মিডওয়াইফ সমাজ’, বিডিআর কল্যাণ পরিষদ, পুলিশের অধস্তন কর্মচারী পরিষদ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্ষতিগ্রস্ত ঠিকাদার সমন্বয় কমিটি, বৈষম্যবিরোধী মুদ্রণ ব্যবসায়ী, শিক্ষানবিশ আইনজীবী, প্রাথমিক শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি, বৈষম্যবিরোধী প্রাথমিক শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ, সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ছাত্র-যুব ও সাধারণ জনগণ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ, পোশাক শ্রমিক, ক্ষুব্ধ নারী সমাজ, সম্পাদক পরিষদ, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে বিভিন্ন সংগঠনসহ একাধিক ব্যানারে নানা দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এমনও ছিল যে, এক দিনে রাজধানীর ১৭টি স্পটে অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে। এতে তীব্র যানজটসহ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। 

রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বিভিন্ন ধরনের সংগঠন ও পেশাজীবীদের দাবিদাওয়া আদায়ে অবরোধ কর্মসূচিতে দুর্ভোগ পড়ছে সাধারণ মানুষ। জনগণকে জিম্মি করে এ রকম কর্মসূচির নজির বিশ্বে আছে কি না সন্দেহ। সড়ক বা রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন হলে নগরীর যানজট পরিস্থিতি কতটা অসহনীয় হয়, তা কারও অজানা নয়। অধিকাংশ দাবির যৌক্তিকতার পাশাপাশি রাজপথ আটকে মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের পদ্ধতি 

নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে যে কারোরই অধিকার আছে সরকারের কাছে দাবিদাওয়া জানানোর। তাই বলে জনভোগান্তি সৃষ্টি করে কিংবা নাগরিকদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের কৌশল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

অন্তবর্তী সরকার নির্দিষ্ট কোনো দলের নয়, এই সরকার সবার। আমরা মনে করি, দাবি যৌক্তিক বা অযৌক্তিক যাই হোক, জনগণের দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যেকোনো কর্মসূচি পরিহার করা উচিত। দাবি আদায়ে এ ধরনের কৌশল অগ্রহণযোগ্য। কোনো সংগঠন বা পেশাজীবীর যৌক্তিক দাবি আদায়ে এমন কৌশল অবলম্বন করা উচিতÑ যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ না হয়। দাবি আদায়ের যৌক্তিক পথ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তা তুলে ধরা। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা। প্রয়োজনে কোনো একটি  নির্দিষ্ট স্থানে মানুষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের দাবিদাওয়া ও অভাব-অভিযোগের কথা জানাতে পারে। ঢাকা শহরের জনজীবন সচল রাখতে সড়কগুলো সব ধরনের কর্মসূচি মুক্ত রাখতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা