পরিপ্রেক্ষিত
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৮ এএম
বুড়িগঙ্গা নদীর বর্তমান অবস্থা শোচনীয়। নদীর দুই পাশ দখল হতে হতে নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। একটি নদী একটি শহরের প্রাণ। কিন্তু শহর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী গিলে ফেলার অবস্থা তৈরি হয়েছে দেশের অধিকাংশ শহরে। ঢাকা শহরের চারপাশে বেশ কয়েকটি নদী। ছিল অনেক খাল-বিল। দখল, দূষণে সবই এখন বিলীয়মান। আগে যখন বুড়িগঙ্গা নদী বর্ষাকালে পানিতে ভরপুর থাকত তখন দূর হতে ঢাকা শহরকে দেখাত ভেনিসের মতো। তবে বুড়িগঙ্গার আগের ঐতিহ্য এখন আর নেই। নদীর আশপাশের খালগুলোর অস্তিত্বও এখন খুঁজে পাওয়া ভার। দখল, দূষণে বুড়িগঙ্গা খুবই করুণ অবস্থায় রয়েছে। ঢাকা শহরের পরিবেশ সুরক্ষাই শুধু না ঢাকা শহরের মানুষের নিশ্বাস ফেলতে সচল বুড়িগঙ্গা একান্ত জরুরি। বুড়িগঙ্গা শুধু দেশেরই নয়, বিশ্বের অন্যতম দূষণাক্রান্ত নদী হিসেবে পরিচিত। দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গার পানি তার স্বাভাবিক রঙ হারিয়েছে। বুড়িগঙ্গার দূষণ দেশের অন্য নদীগুলোর জন্যও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এ নদী প্রাণ হারাবে। যদিও এ নদী বাঁচাতে অতীতে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হয়েছে অনেক প্রকল্প, ঢালা হয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। মাঝেমধ্যে চলে উচ্ছেদ, বসে সীমানা পিলার। গেল এক যুগে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেও বদলানো যায়নি বুড়িগঙ্গার চেহারা। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। নগরীর পয়ঃবর্জ্যও মিশছে বুড়িগঙ্গায়। এখানেই শেষ নয়, সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরীর বর্জ্যও ধলেশ্বরী নদী হয়ে মিশছে বুড়িগঙ্গায়। নদী রক্ষায় সীমানা পিলার নির্মাণ হলেও এর ভেতরেই গড়ে উঠছে নিত্যনূতন কারখানা ও দোকানপাট। বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে অভিযান চালিয়েও দমানো যাচ্ছে না। ২০০৯ সালে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। তবে ভুল পরিকল্পনার কারণে এক যুগের বেশি সময় পেরোলেও শেষ হয়নি প্রকল্পের মেয়াদ। প্রকল্পের খরচ ১ হাজার ২০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকলেও আদতে বুড়িগঙ্গার কোনো পরিবর্তন হয়নি। রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, বুড়িগঙ্গা রক্ষায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বুড়িগঙ্গার ড্রেনগুলো দূষণমুক্ত করতে মাত্র ২০০ কোটি টাকাই যথেষ্ট। স্যুয়ারেজ লাইনগুলোতে ‘ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ বসালে অনেক সুফল মিলবে। আমরা মনে করি, অহেতুক এবং অবাস্তব প্রকল্প নয়, বরং কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমই বুড়িগঙ্গার প্রাণ ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।