× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

পাখি শিকার বন্ধে সচেতন হওয়া জরুরি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৩ এএম

পাখি শিকার বন্ধে সচেতন হওয়া জরুরি

অবাধে পাখি নিধনÑ হুমকির মুখে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তৎপরতার কথা শোনা গেলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না এ অনাচার। প্রতিবছরের মতো এ বছরও দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো রাজশাহীতে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, জলাধারসহ পদ্মার চরে অবাধে হচ্ছে পাখি শিকার। ফাঁকা মাঠ, ফসলের ক্ষেত ও খেজুর রসের হাঁড়ির সঙ্গে অভিনব কায়দায় বিষটোপ দিয়ে চলছে পাখি নিধন। বিষটোপ খেয়ে মারা যাওয়া পাখিগুলো জবাই করে শিকারিরা বিক্রি করছে। এভাবে শিকারের কারণে পাখির আশ্রয়ের পরিসর সীমিত হয়ে আসছে। এতে ঝুঁকিতে পাখির প্রজনন ও আবাসস্থল। 

৩০ জানুয়ারি, প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ আইন ভঙ্গ করে ‘বিষটোপে চলছে অবাধে পাখি শিকার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চিত্র। প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়- ধান, গম, ডালজাতীয় ফসল কাটার পর ফসলের ক্ষেতে সাদা বক, ঘুঘু, চড়ুইপাখি, ডাহুক, গো-শালিক, দোয়েল, ফিঙ্গেসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের পাখি খাবারের সন্ধানে ফসলের মাটিতে ছুটে আসে। ফসলের গায়ে লেগে থাকা কীটপতঙ্গ পাখিদের উপযোগী খাবার। পোকামাকড় ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ খেয়ে তারা নিজেদের জীবন ধারণের পাশাপাশি কৃষকের ফসলের উপকার করে থাকে। কিন্তু সিন্ডিকেট চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার করছে। চক্রটি ছোট ছোট মাছ ও গমের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তা ছড়িয়ে রাখে ধান বা ফসলের ক্ষেত বা উন্মুক্ত মাঠে। সেই বিষাক্ত খাবার খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অসহায় পাখিগুলো। শিকারিরা পাখিগুলো ধরে ব্লেড বা ছুরি দিয়ে জবাই করে। দিনের বেলায় এসব পাখি শিকারির দৌরাত্ম্য কম দেখা গেলেও রাতের অন্ধকারে তারা বেশি সক্রিয়। এ ছাড়া বড় বাঁশের সঙ্গে আকাশের দিকে উঁচু করে জাল পেতে রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে পাখিদের তাড়া করলেই পাখিগুলো উড়তে গিয়ে জালে বেঁধে যায়। আর শিকারিরা পাখি ধরে বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। পরে প্রকাশ্যেই বিক্রি করছে। 

পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রজাতি নির্দিষ্ট সময়ে শীতপ্রধান দেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসে। এরা অতিথি পাখি। এর মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, সারস, ডুবুরি পাখিসহ নানা অতিথি পাখির সঙ্গে দেশীয় পাখিরও কলকাকলিময় ছন্দ জড়িয়ে যায়। তখন দেশীয় পাখির পাশাপাশি শিকারিদের বড় টার্গেট অতিথি পাখিও। অথচ পাখিগুলো একটু উষ্ণতা, আশ্রয় ও খাবারের জন্য পাড়ি দেয় হাজার হাজার মাইল পথ। আমাদের দেশে যেসব অতিথি পাখি আসে সেগুলো পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিথি পাখি আমাদের বন্ধু, আমাদের ঐতিহ্য। এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। পাখিপ্রেমী ও গবেষকরা বলছেন, পাখি আমাদের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ কিছু অসাধুচক্র বিষটোপ, ফাঁদ পেতে এদের হত্যা করে। আগের মতো আর পাখি দেখা যায় না। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। পাখিপ্রেমী শরিফুল ইসলামের মতে, কাক, শালিক, বক, চড়ুই, দোয়েল সব সময় দেখা যেত। তাদের কিচিরমিচির ডাক কানে আসত। এখন শহরের পাশাপাশি গ্রামেও পাখির সংখ্যা কমে এসেছে, যা আমাদের সবার জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। তিনি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ১৯৬০ সালের পর চীনে দুর্ভিক্ষের জন্য যে কয়টি অনুষঙ্গকে দায়ী করা হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম ওই সময় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ফসলের ক্ষেত থেকে পাখি নিধন। আইন অনুযায়ী, আমাদের দেশের গ্রামের বহু মানুষ এখনও জানে না, পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এই চিত্র প্রতিবছরের। আইনে আছে, পাখি শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয়। ১৯৭৪ সালে বন্য প্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডও হতে পারে। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি পরিযায়ী পাখির মাংস ও দেহের অংশ সংগ্রহ বা দখলে রাখলে অথবা বেচা-কেনা করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা আইনের প্রতি অনুগত নয়। প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই আইন যেন কাগজেই সীমাবদ্ধ।

আসলে পাখি শিকার জীব-বৈচিত্র্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি। এই ক্ষতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। আমরা মনে করি, টহল বাড়ানো, শিকারিদের ধরার জন্য বিশেষ অভিযান এবং কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। পাখি শিকার বন্ধে সবার সচেতন হওয়া জরুরি। এই ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতাও অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারে। পাখি শিকার বন্ধে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যেসব এলাকায় পাখি শিকার করা হয়, সে এলাকায় অতিথি পাখি নিধন সম্বন্ধে বিভিন্ন সভা করা যেতে পারে। এই বিষয়ে প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এলাকায় যারা পাখি শিকার করে, তাদের তালিকা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সাধারণ জনগণের সচেতনতাই বন্ধ করতে পারে পাখি শিকার। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ অন্য সংস্থাগুলোও এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা