× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সাত কলেজের অভিজ্ঞতা থেকে যে শিক্ষা নিতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৩ এএম

সাত কলেজের অভিজ্ঞতা থেকে যে শিক্ষা নিতে হবে

ঢাকার বড় সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আর থাকছে না। এ কলেজগুলোকে সম্মানজনক পৃথক্‌করণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে একটি অপ্রত্যাশিত সংঘর্ষের মাধ্যমে। ২৭ জানুয়ারি দুপুরে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ সেশন থেকে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ভর্তি করা হবে না। বৈঠক শেষে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। সাত কলেজকে অধিভুক্তি থেকে মুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী মহল। প্রায় আট বছর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল বহু সমস্যা অমীমাংসিত রেখেই। ফলে মূল সংকট তো কাটেইনি, বরং পরে আরও নতুন নতুন সমস্যা যুক্ত হয়। প্রথম থেকেই এ সমস্যাগুলোয় আওতাবন্দি হন প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী ও সহস্রাধিক শিক্ষক। পরীক্ষা, ফলাফল দেওয়ার দাবি নিয়ে কিছুদিন পরপরই তাদের রাস্তায় আন্দোলন করতে হয়েছে। নগরবাসীকেও আন্দোলনের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। একপর্যায়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এত বড় একটা সংকট তৈরি হওয়ার পরও বিগত সরকার সেটা সমাধান করেনি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে  শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাত কলেজ নিয়ে উদ্ভূত সংকট সমাধানের পথ খোলে। গত অক্টোবরে সাত কলেজের সমস্যা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করে। সর্বশেষ নভেম্বরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করলে শিক্ষা উপদেষ্টা কলেজগুলোকে একটা আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও কাজ করছে।

অপ্রিয় হলেও সত্য, সমস্যাগুলো বিগত সরকার এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ঘনীভূত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নানা সময়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে বেরিয়ে তাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করে আসছিল। সেই সূত্র ধরেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ। ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। যেকোনো সমস্যা জিইয়ে রাখলে সেটা পুঞ্জীভূত হয়ে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটায় তারই দৃষ্টান্ত এটি। বলা যায়, সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আট বছর পর আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ঘটল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের। উল্লেখ্য, ২৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)-এর সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বাহাস হয়। ঢাবির উপ-উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে কয়েকশ শিক্ষার্থী সন্ধ্যা থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সায়েন্সল্যাব মোড়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। রাত ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্যের বাসভবনের দিকে এগোতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘাতের চিত্র সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। ঘটনার সময় দুই পক্ষ যেভাবে একে অন্যের দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে তেড়ে যায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, তা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীর সংবেদনশীল আচরণ হতে পারে না। দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার কথা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সময় এ ঘটনার রেশ থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করে হলে ফেরানোর ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান ভূমিকা লক্ষ করা যায়নি। এটা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ নয়। আসলে দাবিদাওয়া আদায়ের কৌশল হিসেবে কোনো পক্ষেরই রাস্তা অবরোধ, সংঘর্ষ-ভাঙচুরের মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, ন্যায্য দাবিদাওয়া আদায়ের মাধ্যম হিসেবে আলোচনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন যেকোনো দাবিদাওয়া লিখিতভাবে জানাতে। এতে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটবে না, জনগণও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে হবে না।

সাত কলেজ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল তার আপাতসমাধান হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সমাধানের জন্য সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গতিশীল ও জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এটি আট বছর আগের বিবেচনাহীন একটি জটিল সমস্যা। এ সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। তিনি স্বীকার করেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে সময়ের প্রয়োজন। এটা তিন দিনের মধ্যে সম্ভব নয়। এর কাঠামোর ব্যাপার রয়েছে। এটার মডেল কী হবে তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো তৈরির জন্য একটি শক্তিশালী ও কার্যকর কমিটি গঠন করা জরুরি। প্রয়োজনে অগ্রগতি তদারকির জন্য মনিটরিং সেল থাকা বাঞ্ছনীয়। এখানে ভুল বা অহেতুক সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। কারণ,আট বছর আগের ভুলের খেসারত আজকে কিভাবে দিতে হচ্ছে, গত দুদিনের দৃষ্টান্তই তার প্রমাণ। শিক্ষার্থীদেরও বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার, তাড়াহুড়া করে নেওয়া সিদ্ধান্ত আরও বড় কোনো ভুলের জন্ম দিতে পারে, যার ভুক্তভোগী তাদেরই হতে হবে। আমরা চাই, সাত কলেজ সংকটের চূড়ান্ত যৌক্তিক সমাধান হোক। ছাত্রসমাজ দেশগড়ার সহযোগী এবং অংশীদারও। তাই তাদের ধৈর্যসহকারে যৌক্তিক উপায়ে নিজেদের দাবি ব্যক্ত করা উচিত। নাগরিকের জীবনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে তাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। ছাত্রবিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন হীনস্বার্থে লিপ্ত হতে না পারে, সবারই সচেতন থাকা প্রয়োজন। সব পক্ষকে সংযমের পরিচয় দিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়া উচিত ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা