× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ধর্ম ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এইচএমপিভি

আতঙ্কিত নয়, সচেতন হোন

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৬ এএম

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

এইচএমপিভির পূর্ণরূপ হলো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস। এ ভাইরাসের কারণে সাধারণত ঠাণ্ডা লেগে থাকে। তবে অনেক মানুষ এর কারণে বেশ খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এটি একটি নিউমোভিরিডি গোত্রের ভাইরাস। ২০০১ সালে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়। ধীরে ধীরে এটি বিস্তৃত হচ্ছে। এখন এ ভাইরাসটি সারা পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। এটি শ্বাসতন্ত্রের ওপর ও নিচে সংক্রমণ ঘটায়। কোভিড-১৯-এর মতো এটিও একটি আরএনএ ভাইরাস। এর জিনের গঠন করোনাভাইরাসের মতোই। ২০০১ সালে এটি শনাক্ত হলেও বিজ্ঞানীদের ধারণা, অনেক আগে থেকেই পৃথিবীতে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব বিরাজমান।

সাধারণ ঠাণ্ডাজ্বরের ভাইরাসের মতোই এটি ছড়ায়। অসুস্থ মানুষ থেকে বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির দেহে সংক্রমিত হয়। এটি স্পর্শের মাধ্যমেও ছড়ায়। কোনো বস্তু বা স্থান যেখানে হাঁচি বা কাশির কিছু একটা লেগে আছে, সেই লেগে থাকা স্থান; সেটা দরজার হাতল বা লিফটের বাটন বা চায়ের কাপ যেখানে হোক না কেন; যদি কেউ তা স্পর্শ করে আবার তার চোখ বা নাক বা মুখ স্পর্শ করলে এইচএমপিভি ছড়িয়ে পড়ে। একটি গবেষণামতে, ভাইরাসটি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে শীতকালের শেষের দিকে এবং বসন্তকালে প্রধানত ছড়ায়। সাধারণ সর্দিজ্বরের ভাইরাসের মতোই একই সময়ে এটিকে ছড়াতে দেখা যায়।

যেসব মানুষ এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাদের কফ, জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি, শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, কাশি, নাক বন্ধ হওয়া এ ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণ জ্বর হলে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় এ ভাইরাসরে আক্রমণে তা-ই দেখা যায়। কিছু কিছু মানুষকে এটি বেশি দুর্বল করে দেয়। এর সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস পর্যন্ত হতে পারে। তখন শ্বাস নিতে বেশি কষ্ট হয়, বুক ব্যথা করে, পানিশূন্যতা দেখা যায়। কারও কারও জ্বর সারতে চায় না। যদি কারও এ ধরনের মারাত্মক লক্ষণ দেখা যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার পর তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। যেসব বাচ্চার বয়স পাঁচ বছরের নিচে তাদের এ ভাইরাসের ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া যাদের ফুসফুসের রোগ রয়েছে এবং অ্যাজমার সমস্যা বেশি তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে বেশি।

এ ভাইরাস থেকে প্রতিকার পেতে হলে মাস্ক পরতে হবে। বিশেষ করে ভিড়ের ভেতর চলাচলের সময় বা যেখানে মানুষজন বেশি সেখানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। মাস্ক এমনভাবে পরতে হবে যেন নাক-মুখ ভালো করে ঢাকা থাকে। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। থাকার ঘরে আলোবাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাবান এবং পানি দ্বারা হাত বারবার ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। চোখ, নাক এবং মুখ হাত না ধুয়ে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরে থাকতে হবে। যাদের সর্দি-কাশিজনিত সমস্যা আছে তাদের কোনো জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। সর্দি-কাশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্ট, জ্বর বেশি তাদের অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তারা সংক্রমিত না-ও হতে পারেন। এ সময় সুষম খাদ্য খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং ঘুমটাও নিয়মিত হতে হবে। রোগী হলে তাকে বিশ্রাম করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কেউ দুর্বল হয়ে পড়লে এবং ভাইরাসটি দ্বারা সংক্রমিত হলে যদ্দুর সম্ভব বাসায় থাকতে হবে। শিশুদের সর্দি-কাশি হলে স্কুলে না পাঠানোই উত্তম। হাঁচি দেওয়ার সময় নাক-মুখ টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। অন্যান্য মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় মুখে মাস্ক পরা থাকতে হবে। নিয়মিত হাত ধুতে হবে।

এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে এখনও কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। এইচএমপিভি প্রতিরোধে কোনো টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি। রোগটি হলে অধিকংশ মানুষই কয়েকদিনের মধ্যে সেরে ওঠে। যদি কারও অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে তবে তাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। যদি কারও এমনটি ঘটে এবং শ্বাসকষ্ট বেশি হয় সে ক্ষেত্রে ডাক্তার অক্সিজেন দিয়ে রোগীকে সেরে উঠতে সহায়তা করেন। রোগটি শনাক্ত করা যায় পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে। তবে যেহেতু এটি ঠান্ডাজনিত রোগ, এর কোনো সঠিক চিকিৎসা নেই এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি যেহেতু বেশি খারাপ কিছু করে না কাজেই ডাক্তার খুব একটা পরীক্ষা করতে দেন না।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএমপিভি নিয়ে একটি সেমিনারে বলা হয়, এইচএমপিভি বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি নয়। এ ভাইরাস থেকে মহামারি হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। তবে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগপ্রতিরোধে অক্ষমদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ ভাইরাস। অপরিণত শিশু, অ্যাজমা রোগী, শ্বাসতন্ত্রের রোগী, হৃদরোগী, কিডনি রোগী, ক্যানসার রোগীদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশে এ রোগটি ২০১৬ বা ২০১৭ সালেও দেখা গিয়েছিল। ভারত ও চীনেও এ ভাইরাস দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

তবে চীনের করোনাভাইরাস মহামারিতে ৭০ লাখ মানুষ মারা যাওয়ার পর এ ভাইরাসের সংক্রমণে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা চীন এ ভাইরাসের ব্যাপারে কোনো সতর্কতা জারি করেনি। চীনে ১৪ বছরের কম বয়সিদের এ ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে হাসপাতালে আক্রান্তের ভিড় বাড়ছে না বলে চীন জানিয়েছে। ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ১ শতাংশের মৃত্যুর জন্য এইচএমপিভি দায়ী। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত শিশুর প্রতি ১০ জনের একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়। এটি তেমন গুরুতর নয়। এটি পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। তাই আসুন আমরা এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হই।

  • শিক্ষক ও গবেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা