× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

বিলুপ্তির ঝুঁকি কমাতে উদ্যোগ নিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৪ এএম

বিলুপ্তির ঝুঁকি কমাতে উদ্যোগ নিন

পৃথিবী দিন দিন কেবল মানুষেরই বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে না, বরং তারও আগে থেকে বিপন্নতার মধ্যে পড়েছে প্রকৃতি ও প্রতিবেশের অন্যান্য প্রাণী-প্রজাতিও। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববাসীকে সতর্কও করছেন। কিন্তু সেই সতর্কবার্তা গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও, তা যে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, সেই সত্য অস্বীকারের সুযোগ নেই। ফলে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে জীববৈচিত্র্য। বিলুপ্ত হতে বসেছে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ। 

বিজ্ঞানীরা বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন মিঠাপানির বাস্তুতন্ত্রকে। মিঠাপানি সহজে দূষিত হওয়ায় এর বাস্তুতন্ত্রের ঝুঁকিও বেশি। সেই ঝুঁকির বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায়। জার্নালের তথ্য উদ্ধৃত করে ‘বিলুপ্তির মুখে মিঠাপানির ২৪ শতাংশ প্রাণী প্রজাতি’ শিরোনামে ২৬ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিবেদনের শিরোনামই ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামীর শঙ্কার বিষয়ে। বাস্তুতন্ত্রের জন্য তো বটেই, স্বাভাবিকতার অংশ হিসেবেও এত বিপুলসংখ্যক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উদ্বেগজনক। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিজ্ঞানীরা প্রায় ২৪ হাজার মিঠাপানির প্রজাতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রায় এক হাজার প্রজাতিকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন বলে চিহ্নিত করেছেন। এই মারাত্মকভাবে বিপন্ন বলে চিহ্নিত প্রাণীদের মধ্যে প্রায় দুইশ প্রজাতি সম্ভবত এরই মধ্যে বিলুপ্তও হয়ে গেছে। এমন খবর আমাদের বিচলিত করে।

বিজ্ঞানীরা মিঠাপানির আবাসস্থলের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা ডেক্যাপডস, ওডোনেটস, মলাস্ক ও মাছÑ এই চারটি দলের প্রজাতির ওপর গবেষণা করেছেন। তারা দেখেছেন, ডেক্যাপডস এ দলের কাঁকড়া, চিংড়ি ও ক্রাইফিশ প্রজাতির প্রাণীদের প্রায় ৩০ শতাংশ প্রজাতি বর্তমানে হুমকির মুখে। এর ঝুঁকির মুখে পড়েছে কীটনাশক দূষণের কারণে। 

এ ছাড়া বসবাসের উপযোগী জায়গা কমে যাওয়ায় ঝুঁকিতে আছে গঙ্গা-ফড়িং ও ফড়িং, যার অর্ধেকেরও বেশি বিপন্ন প্রজাতির। তাদের বিলুপ্তির পেছনে রয়েছে কৃষিকাজ ও কাঠ কাটার মাধ্যমে জলাভূমি ধ্বংস। মলাস্ক দলের শামুক ও ঝিনুকের মতো প্রজাতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে এবং দূষণ ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে মিঠাপানির মাছেরও ক্ষতি হচ্ছে; যা এদের বেড়ে ওঠা ও প্রজননের ওপর প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ থেকে এত বিপুলসংখ্যক প্রাণীর বিপন্ন হওয়ার 

ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে দেখার অবকাশ নেই। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তা স্বাভাবিকও নয়। দূষণের কবলে যেসব প্রাণী বিপন্ন অবস্থায়, তাতে যে প্রাকৃতিক ক্ষতি সে হিসাব বের করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। শুধু মিঠাপানিই নয়, আমরা দেখছিÑ সম্প্রতি আমাদের সমুদ্রসৈকতেও একের পর এক ভেসে আসছে মৃত কাছিম, তিমি আর ডলফিন। সমুদ্রে শুধু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েই যে 

ওরা মারা যাচ্ছে তা তো নয়। দূষণের মাত্রাই এর বড় কারণ বলে নিশ্চিত।

যোগ্যতমরাই প্রকৃতিতে টিকে থাকবে বলে, যে কথাটি প্রচলিত তা সব প্রাণীর জন্যও এখন হয়তো খাটে না। কারণ বিশ্বজুড়ে মানুষ প্রকৃতির ওপর এত বেশি প্রভাব বিস্তার করছে, প্রকৃতিকে এত নগ্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে তাতে করে প্রকৃতির চক্রের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে নেওয়ার আগেই নিশ্চিহ্ন হতে হচ্ছে অনেক প্রজাতির প্রাণকে। সেই সঙ্গে প্রকৃতির ওপর জবরদস্তি করায় আবহাওয়াও যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে করে মানিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। ফলে অনেক প্রাণীরই চিরকালের জন্য হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।

মিঠাপানির বিপুলসংখ্যক প্রজাতি হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ আমরা জানি না, এ ক্ষতির প্রভাব আগামীতে কতখানি ভয়াবহ হতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ স্থান পরিবর্তন করে বাঁচতে পারে। কিন্তু আমাদের সৃষ্ট দূষণের যে ভয়াবহতা প্রাণিকুল বহন করছে, তা থেকে তো তাদের পালানোর পথ নেই। বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন তো প্রাণীদের পক্ষে সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কেউ কেউ যদিও স্থান পরিবর্তন করে বেঁচে যাই, তবে তাও তো সাময়িক। জলবায়ু পরিবর্তন আটকে দিতে না পারলে আমাদেরও হয়তো বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকায় নাম লেখাতে হবে। যে দূষণ, যে পরিবর্তন আমাদের কারণে ঘটছে, সেই দূষণ রোধে আমাদেরই উদ্যোগী হতে হবে। আন্তরিক প্রচেষ্টাই পারে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার তালিকা থেকে অনেক বিপন্ন প্রাণ রক্ষা করতে। 

শুধু মানুষের মাধ্যমে পরিবেশ তৈরি হয় না। পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গাছপালা ও অন্য প্রাণিকুলও। তাদের সবাইকে নিয়েই বাস্তুতন্ত্র। সেই পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সব প্রাণীকেই প্রয়োজন। তাদের ছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে না। তাই পরিবেশ রক্ষায় যাদের প্রয়োজন, যারা পরিবেশের অংশ, তাদের সবাই যেন ভালো থাকে, টিকে থাকতে পারে; সে দায়িত্ব মানুষকেই পালন করতে হবে এবং তা নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা